পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৬ অনন্তর রাজাজ্ঞায় গণক গর্ভফল গণনায় বলিলেন, এ গর্ভে এক দেবরূপী পুত্র সন্তান জাত হইবে, তাহার সন্দেহ নাই। গণকের এ বাক্য সফল হইয়াছিল, সেই গর্ভের পুত্রই কমলাক্ষ (অদ্বৈতাচাৰ্য্য), ইহার কথা ৪র্থ ভাগের প্রথমেই উক্ত হইয়াছে। কুবেরাচাৰ্য্য তাহার পর দ্বাদশ বৎসর কাল লাউড় রাজ্যের কর্ণধার স্বরূপ ছিলেন, তৎপর মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করিয়া শান্তিপুরে গমন করেন, তথায় তাহার পরলোক গমন ঘটে। কেশব বা অজ্ঞান ঠাকুর প্রায় দ্বিশত বর্ষ অতীত হইল, ইটা পরগণার বুড়িকোণা গ্রামের উত্তরাংশে নমঃশূদ্রের ব্রাহ্মণকুলে কেশবের জন্ম হয়, কেশব বাল্যবধিই সন্ধ্যাপূজা-পরায়ণ। শৈশবে রাখালদের সহিত খেলায় উন্মত্ত থাকা বশতঃ বৈষয়িক ব্যাপারে মোটেই কেশবের মন ছিল না। যখন তাহার বয়স ১৮/১৯ বৎসর, তখন পর্যন্ত লোকে তাহাকে নিবের্বাধ বলিয়া গণ্য করিত। সময় সময় কেশবকে যজমানদের বাড়ীতে যাইতে হইত, কিন্তু তাহাতে ফল এই হইত যে, তথা হইতে ব্যাপারে প্রাপ্ত চাল কলাদি লইয়া আসিতে পথেই রাখালগণ কর্তৃক প্রায়ই তৎসমস্ত লুষ্ঠিত হইয়া তাহদের উদরসাৎ হইত, বাড়ী আসিলে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কাছে তজ্জন্য কেশবকে গালি এবং কখন কখন বা উত্তম মধ্যমও খাইতে হইত। একদিন রাখালগণ কত্ত্বক চাউল কলা লুষ্ঠিত হইলে, ভয়ে বাড়ীতে না গিয়া কেশব নিকটবৰ্ত্তী জঙ্গলে চলিয়া যান। সেই জঙ্গলে ব্যাঘ্রও মহিষের অভাব ছিল না। কেশব সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ীতে না আসাতে আত্মীয়গণ অনুসন্ধানে বাহির হইয়া তাহার বন প্রবেশের সংবাদ শুনিতে পাইলেন, কিন্তু কোথাও তাহাকে পাওয়া গেল না। পরদিনও যখন তিনি আসিলেন না, তখন কোনও বন্যজ কত্ত্বক নিহত হইয়াছেন বলিয়াই সকলে স্থির করিল। তিনদিন পরে কেশব হঠাৎ বাড়ীতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। হারানিধি লাভে আত্মীয়দের আহ্বাদের অবধি রহিল না, কিন্তু তিনদিন তিনি কোথায় ছিলেন, পুনঃ পুনঃ প্রশ্ন করিলেও তাহা বলিলেন না; এই সময় হইতে তিনি দেবতার গৃহ বাস করিতে লাগিলেন ও অল্পভাষী হইলেন। তখন হইতে ইচ্ছা হইলে স্বয়ং পাক করিয়া কিছু খাইতেন, অন্যের পাক করা দ্রব্য খাইতেন না। সকল পুরুষকেই “জ্যেষ্ঠ” এবং স্ত্রীলোক মাত্রকেই “জেঠী” সম্বোধন করিতেন, কিন্তু তখনও রাখালদের সহিত পূৰ্ব্ববৎ খেলা চলিত। একদিন খেলিতে খেলিতে রাত্রি হইল, রাখালেরা গরুর জন্য চিন্তা করিতে লাগিল, তখন কেশব সকলের গরু অনায়াসে আনিয়া উপস্থিত করিলেন। আর একদিন খেলায় সেইরূপ রাত্রি হইয়া গেলে, সেদিনও রাখালেরা চিন্তিত হইয়া পড়িল, তখন কাহার কোন গরু কোথায় আছে, রাখালদিগকে একে একে তাহা বলিয়া দিলে, তাহারা তখন অনায়াসে গরু লইয়া বাড়ী আসিল। রাখালেরা কেশবের এই কার্যে বিস্মিত হইয়াছিল, তাহারা বাড়ী আসিয়া এই আশ্চৰ্য্য কথা সকলের কাছে প্রকাশ করিয়াছিল। এই সময় হইতেই কেশবের “সিদ্ধির” কথা প্রচারিত হয়; তখন হইতে নানাবিধ রোগী ও বিপদাপন্ন ব্যক্তির সমাগমে কেশবের বাড়ী পূর্ণ হইয়া যাইত। সমাগত ব্যক্তিবর্গও তাহার