পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত যাইবে। পরদিন তাহাকে আজ জাগাইয়া দিতে হইল না, কেশবলাল স্বয়ং জাগিয়াই বৎস লইয়া জঙ্গলে গেলেন। প্রভাতে বাড়ীতে বালককে না পাইয়া আত্মীয়গণ সেই জঙ্গলে গিয়া দেখিলেন যে কেশবলাল একটি কদম্ব বৃক্ষের উপরে একাকী এক শাখা হইতে অন্য শাখার যাইতেছেন, যেন কাহার সহিত খেলা করিতেছেন, অদৃশ্য ভাবে কে যেন আগে আগে ছুটিয়া যাইতেছেন, আর তাহাকে ধৃত করিতে তিনি চাহিতেছেন কিন্তু পারিতেছেন না। ইহা দেখিতে দেখিতে তাহারা অগ্রসর হইতে লাগিলেন। তাহারা বৃক্ষের নিকটে পৌছিবার পূৰ্ব্বেই দেখিতে পাইলেন যে একটি বৃক্ষ শাখা কোলে করিয়া কেশব মাটিতে পতিত হইলেন। তদৃষ্টে আত্মীয়বর্গ দ্রুত ধাবিত হইয়া তাহাকে উঠাইতে গেলে, তিনি বলিয়া উঠিলেন “আমাকে ছুইও না। আমাকে কীৰ্ত্তন করিয়া গৃহে লইতে বাবাকে বল, তাহা না হইলে যাইব না।” যাহারা আসিয়াছিল, তাহারাই একথা রতিনাথকে জানাইল ও সকলে কীৰ্ত্তন করিয়া কেশব লালকে বাড়ীতে লইয়া গেল। বাড়ীতে উপস্থিত হইয়াই কেশব দেবগৃহে প্রবিষ্ট হইলেন ও কপাট বদ্ধ করিয়া দিলেন। তাহাকে অন্যত্র লইয়া যাইতে চেষ্টা করিলেন। অষ্টাহ পরে তিনি গৃহ হইতে বাহির হন বলিয়া কথিত আছে এবং তখন তাহার অবক্ষয়ে অনেকটা পরিবর্তন লক্ষিত হইয়াছিল। এই অষ্টাহ পরে যখন সকলের খাতে উপস্থিত হইলেন, তখন তাহারা বিস্মিত হইয়া শুনিলেন, যে নিরক্ষর কেশবের মুখে সুন্দর কবিতা স্ফুরিত হইতেছে। সকলে আশ্চর্য হইয়া মনে করিল যে যাহারা কৃপায় রত্নাকর বাল্মীকি হইতে পারিয়া ছিলেন, তাহারই করুণায় এরূপ ঘটা বড় কথা নহে। কেশব লালের মুখ হইতে সবর্ব প্রথম যে কবিতা বাহির হইয়াছিল, তাহা এই – “জন্মিয়া ব্রাহ্মণ কুলে, ব্ৰহ্ম না চিনিলাম রে, মিছা মায়ার দৃঢ়পাশে বদ্ধ হৈয়া রৈলাম রে, কেশব লালের ভরসা কেবল কানাইয়া ধন হরি।” এই গীত গাইতে গাইতে তিনি গৃহত্যাগ করিয়া চলিলেন, আর কেহ তাহাকে ফিরাইতে পারিল না। তিনি যে কোথায় চলিয়া গেলেন, অনুসন্ধান করিয়াও কেহ পাইল না। তখন সুদীর্ঘজীবী ঠাকুর বাণী নাম" প্রসিদ্ধ মহাত্মা বৰ্ত্তমান ছিলেন, ইহার সহিত কেশবলালের ঐ সময় দেখা হইয়াছিল বলিয়া কথিত আছে। নিরুদ্দিষ্ট কেশবলাল এক সময়ে বাণিয়াচঙ্গে উপস্থিত হন, তখন বানিয়াচঙ্গাধিপতি দেওয়ান উমেদরাজা বৰ্ত্তমান।” উমেদরাজার অধিকৃত একটি গ্রামের জনৈকা যবনী, “পীরের শিরনী” বা ভোগ প্রস্তুত করিয়াছিল কিন্তু কোন সাধু ফকির না পাইয়া সে বড়ই দুঃখিত হইয়াছিল; কেশবলাল ঐ রমণীকে দেখিয়া দয়ার্দ্র চিত্তে তাহার বিষাদের কারণ জিজ্ঞাসিলে, সে তাহার কাছে আপনার ৩৪ ইহার চরিত্র কথা পরে উক্ত হইবে। ৩৫. শ্রীহট্টেব ইতিবৃত্ত পুৰ্ব্বাংশ ২য ভাঃ ৩য় খঃ ২য অধ্যাযে ইহাব কথা দ্রষ্টবা।