পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩১ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ইহা মাতৃভক্তির সুন্দর উদাহরণ; সন্তোষার্থ তিনি নিজের সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিলেন। মাতৃভক্ত শ্ৰীমহাপ্রভু সংসার সম্বন্ধ শূন্য হইয়াও, সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়াও মাতার সহিত সম্বন্ধ ত্যাগ করেন নাই, তাহারই ধৰ্ম্মানুরত কেশবলাল উদাসীন পন্থী হইলেও ইহার পর যথার্থ গৃহী হইলেন; এমন কি মাতৃ আজ্ঞায় তাহাকে বিবাহ করিতে হইল। সেই বিবাহে তাহার মুক্তালাল নামে একটি পুত্র জাত হয়। গৃহে থাকিয়া কিরূপে নির্লিপ্তভাবে ধৰ্ম্মজীবন যাপন করা যাইতে পারে, কেশবলাল তাহা প্রদর্শন করিয়া গিয়াছেন। ধৰ্ম্মচারণ জন্য যে গৃহ ত্যাগ অত্যাবশ্যক নহে, স্ত্রীপুত্র লইয়াও যে নিলিপ্তভাবে সাধনভজন করা যাইতে পারে, কেশবলালের জীবনী আলোচনায় তাহা জ্ঞাত হওয়া যায় । কৃষ্ণদেব ভট্টাচাৰ্য্য কৃষ্ণদেব ভট্টাচার্য একজন কবি ছিলেন, তাহার বাসস্থান মান্দারকন্দি। কৃষ্ণদেব বিরচিত “নিয়ত মঙ্গল চণ্ডীর পাঁচালী” নামে একখানা পুথি পাওয়া গিয়াছে, এই পুথি হইতে কবির যৎসামান্য পরিচয় পাওয়া যায়। তাহাতে লিখিত আছে যে কাশীশ্বর ভট্টাচাৰ্য্য নামক জনৈক ব্রাহ্মণ কোন স্থান হইতে আসিয়া মান্দারকন্দিতে বাস করেন; তাহার পুত্রের নাম কামদেব বাচস্পতি; কবি কৃষ্ণদেব ইহারই পুত্র। কৃষ্ণদেব যে নিতান্ত আধুনিক ব্যক্তি নহেন, ইহা অনুমান করা যাইতে পারে। যে সময়ে শ্রীহট্টের স্থানে স্থানে ভিন্নদেশাগত ব্রাহ্মণগণ অধিক মাত্রায় আগমন করিয়াছিলেন, সেই সময়েই কবির পিতামহ এ দেশের আসিয়া থাকিবেন; যে সময়ে বিবিধ পাঁচালী পুঁথি রচনায় লোকের উৎসাহ ছিল সে সময়টা নিতান্ত আধুনিক নহে। কৃষ্ণদেব কৃত “নিয়তমঙ্গল চণ্ডীর পাঁচালী পুথির যে প্রতিলিপি পাওয়া গিযাছে, তাহা প্রায় ৬৫ বৎসর পূৰ্ব্বের লিখিত, ইহাতে কবি নিম্নলিখিত আত্মপরিচয় দিয়াছেন ঃ— “বরবক্র তীরে সুখে করয়ে বাখান। মান্দার কান্দি নাম দেশ অপূবর্ব নিৰ্ম্মাণ। ব্রাহ্মণ সুজন লোক করেন বসতি। সদালাপ বিনে কেয়র অন্যে নাহি মতি।। শ্ৰীকাশীশ্বর ভট্টের মহিমা অপার। নিবাস করিলা আসি দেখি সদাচার। কামদেব বাচস্পতি তান তনয় । রূপে গুণে কেহ তান সমান না হয়। তান সুত কৃষ্ণদেব ভট্ট মহামতি। গুরুদেবের চরণে করিয়া ভকতি। নিয়ত মঙ্গলচণ্ডী করি নমস্কার। ভাষা কথা পদবন্দে চাই রচিবার। দেশবাৰ্ত্ত হইতে গৃহীত।