পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩২ গঙ্গারাম ঘোষ (প্রকাশ্য বঞ্চিত ঘোষ) শ্রীচৈতন্য পার্ষদ পদকৰ্ত্তা বাসু ঘোষের বংশ কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের উত্তরাংশ অংশ ৩য় ভাঃ ৩য় খঃ ৭ন অধ্যায় বিস্তারিত রূপে বলা হইয়াছে, সেই মহাবংশে পরম ধাৰ্ম্মিক কৃষ্ণ ঘোষের উদ্ভব হয়; ইহার পত্নী পরম সাধিক রেবতীর গর্ভে এক পুত্র জাত হয় তাহার নাম গঙ্গারাম, এই গঙ্গারামেরই নামান্তর বঞ্চিত ঘোষ। বঞ্চিত ঘোষের জন্মের পর হইতে কৃষ্ণ ঘোষের অবস্থা ফিরিয়াছিল বলিয়া জানা যায়। কৃষ্ণ ঘোষ ইহার পরে বিষ্ণু মন্দির প্রতিষ্ঠা করিয়া নারায়ণ স্থাপন করিয়াছিলেন। বঞ্চিত অল্প বয়সেই পিতৃহীন হইয়া পড়েন, তাহার পিতৃব্য র্তাহাকে অত্যন্ত স্নেহ করিতেন। পিতৃহীন বঞ্চিত শিশু বেলা হইতেই অদ্ভুত ভাবাপন্ন ছিলেন, তাহার দৃষ্টি যেন এ সংসারে নিবদ্ধ ছিল না। সংসারের অন্তরালে কাহাকে সৰ্ব্বদা খুঁজিয়া ফিরিত; এই জন্য সকলে তাহাকে উন্মনা মনে করিতেন, লেখা পড়ায় বঞ্চিতের অনুমাত্র খেয়াল ছিল না, কেবল দুষ্ট বালকদল লইয়া খেলিতেন। ইহাতে মাতা রেবতী একদা তাহাকে বড়ই তিরস্কার করেন ও ভাতের পরিবৰ্ত্তে খাওয়ার সময় একথালা ছাই দেন, তদৃষ্টে ঃ– “মাতাকে বলেন গোসাঞি—‘এই নাকি ভাত ?’ মাতা বলে—“ছাই খাইয়া মরহ সাক্ষাৎ’।”—বঞ্চিত চরিত্র গ্রন্থ। “যে বালক লিখাপড়া করে না, ছাই খাওয়া তাহার কৰ্ত্তব্য।” মাতার ব্যবহার ও কথায় বালকের বড় বিধৃতি জন্মিল, গঙ্গারাম রাগ করিয়া গৃহত্যাগপূৰ্ব্বক ভাল স্বভাব-বশে সন্নিকটবৰ্ত্তী বনে চলিয়া গেলেন। বনে গিয়া হঠাৎ আর ফিরিলেন না, তিনি সরস্বতী পতির আরাধনায় ব্রত হইলেন। ঘোর গভীর বনে ভয়োদ্বেগ বিরহিত হইয়া গঙ্গারাম তাহাকেই ডাকিতে লাগিলেন। তদীয় উদাস-চক্ষু সৰ্ব্বদা কাহার সন্ধান করিতে বলিয়া বোধ হইত। সত্যযুগে যমুনার তীরে পঞ্চ বর্ষীয় এক বালক বিমাতা কত্ত্বক ভৎসিত ভয়োদ্বেগ বিহান চিত্তে অবিচলিতভাবে ভগবদারাধনায় তন্ময় হইয়াছিল, গঙ্গারামের তপস্যা সেই দেবশিশুর (ধ্রুবের) কথাই স্মরণ করাইয়া দিয়া থাকে। বঞ্চিত সেই বিজন বনে একটা ডোবার তীরে এক অশ্বথ-তলে চিন্তামগ্ন চিত্তে বসিয়া রহিলেন; সেই বনে ব্যঘ্ৰ ভল্পকের অভাব ছিল না, কোন হিংস্ৰজন্তু দ্বারাই তিনি উপদ্রুত হইলেন না, বন্য বৃক্ষ তাহাকে ফল যুগাইতে লাগিল। ন্যায় বিলপ করিতে লাগিলেন। মাতার মুখে কথাটি নাই যে অগ্নি তাহার অন্তরে জুলিয়াছিল, তাহার জ্বালায় তাহার চক্ষের জল শুষ্ক হইয়া গিয়াছিল। এতদূর হইবে বলিয়া তিনি ভাবেন নাই। মনে করিয়া ছিলেন যে তাহার অবজ্ঞা ও ভর্ৎসনায় পুত্রের মতি ভাল হইবে, লেখাপড়ায় মন হইবে, কিন্তু একি হইল! মাব অন্তর আত্মগ্লানির অগ্নিতে অহঃরহঃ দগ্ধ হইতে লাগিল । বঞ্চিত ঘোষ কিন্তু গৃহে ফিরিলেন না, সেই বৃক্ষমূলে বসিয়া আত্মচিন্তা করিতে করিতে র্তাহার জ্ঞানের উদয় হইল, মুখ বালক কবি হইয়া উঠিল; গাইতে লাগিলেন ঃ–