পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৪ (b) “গুণনিধি পতিত পাবন তোমার নাম। ভবের সম্পদ পাইয়া, মুই পাপী ডুবিলুরে, মুখে না লইলু রামনাম এ ভব সায়রে, পন্থ কি করিলু রে, আমি অধম ডাকি তোরে। অকুলে না গেলু সে কুলে না রইলু, ঠেকিলু দুকুল মাখায়। বোর কণ্টক বনে, পন্থা চিনাও মোরে; চরণে ঠেলিয়া কর পার। পাইয়া পরশমণি, কোলে না তুলিনু রে, বলয়ে বঞ্চিত ঘোষে। শিমলির ফুল চাইতে, জনম গোয়াইলুরে, দিন গেল মিছা পরবাসে। যাহার কৃপায় রত্নাকর ঋষি হইতে পারেন; মূখ গোবিন্দ দাস কবিত্ব লাভে গ্রন্থাকার হইতে পারেন, তাহার কৃপাতেই এই বালকের মুখে ঈদৃশ ভক্তি সিক্ত সঙ্গীত বহির্গত হইয়া ছিল বলিয়া কথিত। বালকেব এই করুণ গীতিকা তাহার মৰ্ম্ম বেদনারই ধ্বনি; আহার নিদ্রা ত্যাগ করিয়া অদ্ভুত বালক এইরূপ কাদিতে লাগিলেন। শেষোক্ত গীতের ভাবে বোধ হয় যে, তিনি একবারে বঞ্চিত হন নাই, যে সময়েও “পরশমণি’র ক্ষণিক দেখা পাইতেন, কিন্তু তাহাতে তাহার তৃপ্তি ঘটে নাই; পরে যখন দেখিলেন যে সে ক্রদনের শ্রোতা পাশ্বের বন জঙ্গল মাত্র, যাহার জন্য তাঁহার প্রাণ আকুলিত, তাহাব দর্শন পাইতেছেন না, তখন তদীয হৃদয় দগ্ধীভূত হইয়া গেল, তিনি সহ্য করিতে না পারিয়া প্রাণ ত্যাগ মানসে জলে ঝাপ দিলেন । সেই সময় এক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটিল, পাশ্ববৰ্ত্তী অরণ্য হইতে এক গৌরবর্ণ সন্ন্যাসী একতন্ত্রী যন্ত্র বাজাইয়া হরিনাম করিতে করিতে সেই স্থানে উপস্থিত হইলেন। সেই পরম রূপবান সন্ন্যাসী মুহুৰ্ত্তে ব্যাজ ব্যতিরেকে জলে ঝাপ দিয়া পড়িলেন ও বঞ্চিতকে উত্তোলন করিয়া সেই অশ্বখ তলে লইয়া বসাইলেন। সন্ন্যাসী বলিলেন—“বৎস, তোমার এ কুবুদ্ধি কেন হইল ? তুমি যাহার দর্শনের জন্য ব্যাকুল, তাহাকে কি সহজে মিলে? আগে মন্ত্র গ্রহণ কর, তাহার পর সেই মন্ত্রটি এক দিয়া রাত্র অবিচ্ছেদে জপ কর, তখন ভাগ্য থাকিলে দেখিতে পাইবে।” এই বলিয়া সন্ন্যাসী তাহাকে কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত কবিলেন। বালক মন্ত্র পাইয়া গুরুকে প্রণাম করিয়া উঠিতে না উঠিতে, ঘন অরণ্যের অন্তরালে নিমেষ মধ্যে সন্ন্যাসী অদৃশ্য হইয়া পড়িলেন। বঞ্চিত গুরুকে আর কোন কথাই জিজ্ঞাসার অবসর পাইলেন व्षों | তদনন্তর বঞ্চিত অনন্য চিত্তে গুরুদত্ত কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করিতে লাগিলেন। জপ করিতে করিতে তাহার'হৃদয়ে স্মিত বিকশিত-বদন জগন্মোহন মদন মোহনের অনরূপ জাগিয়া উঠিল, নবীন নারদ কান্তি রূপ মাধুরীর ধ্যানে তাহার চিত্ত ডুবিয়া গেল। এক দিবা রাত্রি চলিয়া গেল,—ইহার মধ্যে বঞ্চিতের বাহ্যজ্ঞান হয় নাই, উষারে কিরণ বিকাশে কানন ভূমি যখন জাগিয়া উঠিল, পক্ষিকুল অভীষ্টসিদ্ধি কোলাহলে বনস্থলী মুখরিত হইল, তখন ধ্যান ভঙ্গে বঞ্চিত চক্ষুরুন্নীলন করিলেন। এ কি ? বঞ্চিত কি দেখিতে পাইলেন ? দেখিলেন যে