পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩৬ কে জানিত যে বালক দুষ্ট সঙ্গীবর্গ সহ সারাদিন খেলিয়া বেড়াইত, যে বালক পুঁথির নাম শুনিয়া পলাইত, তাহার মুখ হইতে গভীর জ্ঞানের ধ্বনি উত্থিত হইবে? কে জানিত যে, সেই বালকেই হরিনামে দেশ মাতাইয়া তুলিবে? কাহার দ্বারা কি কৌশলে ভগবান কি কাজ করাইয়া থাকেন, তাহা লোক-বুদ্ধির অগোচর। দেশের জমিদার, ইটার রাজবংশীয় ইস্রাইল খাঁ এই বালক তপস্বীর মহিমা শ্রবণে তৎসহ সাক্ষাৎ করিলেন, তাহার ধৰ্ম্মভাব ও দৈব-শক্তির কথা জ্ঞাত হইয়া তিনি তৎপ্রতি বিশেষ সহানুভূতি প্রদর্শন পূবর্বক তদীয় তপঃক্ষেত্র পরিস্কৃত করাইয়া দান করিলেন, ইহাই “মোহন্তালয়” (অপভ্রংশ মহলাল) নামে খ্যাত হইল। এইরূপে অঞ্চল হরিনামের ধ্বনিতে পূরিত হইল। একদিন বঞ্চিত কৃষ্ণ প্রেমাবশে নাচিতে নাচিতে ইটার ভাঙার হাটে উপস্থিত হইলেন। জোড়ারাম নামক তত্ৰত্য এক ব্যবসায়জীবী অতি ধাৰ্ম্মিক ছিলেন, ক্রেতার একটি পয়সাও অতিরিক্ত লইতেন না। তিনি অন্বর্থনামা মহাজন ছিলেন। বঞ্চিত জোড়ারামকে বলিলেন, “সাধো, আমি বহুদিন যাবৎ উপবাসী, তুমি আমাকে দুটি অন্ন খাইতে দাও।” সাধুর অবারিত করুণায় জোড়ারাম কৃতাৰ্থ হইলেন। জোড়ারামের গৃহে আনন্দোৎসব সম্পন্ন হইল, হরিনামের পবিত্র ধ্বনিতে সে স্থান পরিপূরিত হইয়া উঠিল। হরিশ্চন্দ্র নামে এক জাত্যভিমানী ব্যক্তি সৰ্ব্ব জাতির একত্র সমাবেশ ও মিশামিশি দেখিয়া অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া বহুলোক সহ জোড়ারামের গৃহে উপস্থিত হইলেন কিন্তু বঞ্চিতের কাছে আসিলে আর তাহার আক্রোশ থাকিল না; তিনি বুঝিতে পারিলেন, ধাৰ্ম্মিকের কাছে সঙ্কীর্ণতা উপস্থিত হইতে পারে না, ধৰ্ম্ম সামাজিকতার অতীত, সিদ্ধপুরুষ বঞ্চিত সামাজিকতা প্রভৃতি ভেদ বিচারের বহু উদ্ধ স্তরে আরোহণ করিয়াছেন। বুঝিলেন যে, ভেদ বিচার ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না মনে আত্মপর জ্ঞান রহিত হয়। বাদশাহ সাক্ষাত বঞ্চিতের বয়স পঞ্চদশ বৎসর মাত্র, এই সময় দিল্লীর বাদশাহ দেশের সাধু সমন্তের সংবাদ গ্রহণের অভিলাস করিয়া, কৰ্ম্মচারীবর্গের উপর তালিকা প্রস্তুতের আদেশ দেন। তদনুসারে গ্রহণের অভিলাস করিয়া, কৰ্ম্মচারীবগের উপর তালিকা প্রস্তুতের আদেশ দেন। তদনুসারে শ্রীহট্টের শাসনকৰ্ত্তা বা আমিল, শ্রীহট্টের শ্রেষ্ঠ সাধু সমূহের মহিমা, নামাবলী জ্ঞাপন করিলে, তাহাদের কয়েকজনকে দিল্লী লইয়া যাইতে তিনি আদিষ্ট হন। এই আমিলের জন্মভূমি দিল্লী ছিল। তৎকালে শ্রীহট্টে পাগল শঙ্কর, ঠাকুর বাণী, বৈষ্ণব রায় এবং বঞ্চিত ঘোষ মহিমাই বিশেষ রূপে প্রকাশিত হইয়াছিল। সুতরাং আমিল ইহাদিগকে লইয়া দিল্লী যাত্রা করেন। শ্রীহট্টের সীমা অতিক্রম ు ঘোষ ব্যতীত আর তিন জন আমিলকে বঞ্চিত করিয়া অদৃশ্য হন, তখন আমিল অগত্যা এই মহাত্মাকে লইয়া দিল্লী গমন পূৰ্ব্বক তাহাকেই সম্রাট সদনে উপস্থিত করেন। বাদশাহ সাধুর “কেরামত” বা গুণপনা দর্শনে ইচ্ছা করিলেন, কিন্তু যাহারা ‘ভবের বাদশাহের” হুকুমে চলিয়া থাকেন, তাহারা কোনও ব্যক্তি বিশেষে ইচ্ছা পূরণের জন্য “ইন্দ্রজাল” জারি করিতে রাজি হন না, বঞ্চিতও হইলেন না। বঞ্চিতের ব্যবহারে বাদশাহ বিরক্ত হইলেন, এবং অখাদ্য খাওয়াইয়া তাহার জাতি নষ্ট করিতে আদেশ দিলেন। দৈব বশতঃ সেই সময় দিল্লী নগরে ভীষণ