পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪২ “রাজা ইষ্টক স্তুপের নীচে পড়িয়াছিলেন," একটা বৃহৎ বিম আড়ভাবে শূন্যে থাকিয়া রাজার প্রাণ রক্ষা করিয়াছিল। "ইষ্টক স্তুপের নীচে পড়িয়া রাজা হে হরি! হে কৃষ্ণ! রবে যখন কাতর কণ্ঠে চিৎকার করিতে ছিলেন, তখন মটাই নামক জনৈক (মটাই কোংর মটাই) ব্যক্তি এই কাতর ধবনি শুনিয়া রাজাকে ইষ্টক স্তুপের ভিতর হইতে উদ্ধার করে। রাজা এইজন্য তাঁহাকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করেন এবং আজীবন মাসিক পেনশন ধাৰ্য্য করিয়া দেন। 驰 ভূকম্পে স্কুল ও কলেজ গৃহাদিও বিনষ্ট হইয়া যায়, এই উপলক্ষে রাজার জনৈক হিতৈষী ব্যয় হাসের প্রসঙেগ বলেন, “এখনই স্কুল ও কলেজ উঠাইয়া দিবার প্রকৃত সময়, এখন উহা উঠাইয়া দিলে কেহ নিন্দা করিবে না।” একথা শুনিয়া রাজা জলদ গম্ভীর স্বরে বলিয়াছিলেন “এই দেহে প্রাণ থাকিতে আমি স্কুল ও কলেজ উঠাইয়া দিতে পারিব না।” “রাজা তখন ঋণজালে জড়িত ছিলেন।” “গিরীশচন্দ্র তাহার নিজবাড়ী প্রস্তুতের পূৰ্ব্বেই স্কুল ও কলেজ-গৃহ নিৰ্ম্মাণ ও মেরামত করাইয়া দিয়াছিলেন।” “শিক্ষা বিষয়ে রাজা স্বয়ং তিন লক্ষ টাকা ব্যয় করিয়া যান।” বিপুল ঋণ ভারাক্রান্ত তদীয় সম্পত্তির পক্ষে অন্যান্য বিষয় ছাড়া কেবল একটি বিষয়ে এরূপ ভাবে অর্থ ব্যয় অন্যের পক্ষে অসম্ভব হইলেও গিরীশচন্দ্রের ন্যায় উচ্চান্তঃকরণ ব্যক্তির শোভনীয়ই বটে। রাজা গিরীশচন্দ্রের জীবনের পুণ্য কাহিনী বিশদভাবে বিবৃত করার পক্ষে স্থানাভাব। দেশের দুর্ভিক্ষ নিবারণ, বিপদগ্রস্তের দুঃখবারণ, আৰ্ত্তের পরিত্রাণে সৰ্ব্বদাই তিনি প্রস্তুত ছিলেন এবং সৰ্ব্বদাই তিনি তত্তদ্বিষয়ে মুক্ত হস্তে দান করিতেন। র্তাহরা সৎকাৰ্য্য প্রাচ্য বীত্যনুযায়ী সম্পাদিত হইত, ইহাতে ঢাক ঢোল বড় বাজিত না—গোপনেই হইত। তাহার ঐ সকল সংখ্যাতীত দানের পাত্র অনেক, সমষ্টি অপরিমিত। এ জিলায় পূৰ্ব্বাঞ্চলের অসংখ্য উপকৃত ব্যক্তি মুক্তকণ্ঠে এখনও তাহার সাক্ষ্য দিতে জীবিত আছেন। গিরীশচন্দ্রের হৃদয় কিরূপ কোমল ছিল, একটি ঘটনায় তাহা বহু ব্যক্তি প্রত্যক্ষ করেন। চট্টগ্রামের প্রবল ঝঞ্জাবাতে জনসাধারণের কষ্টের কাহিনী পাঠ করিয়া রাজার চক্ষু ছল ছল করিতে ছিল, তিনি অনেক কষ্টে আত্মসম্বরণ করিয়া সেই সমস্ত দুস্থব্যক্তির সাহায্যার্থে তৎক্ষণাৎ এক সহস্র মুদ্রা প্রেরণ করিয়াছলেন। ১৩১৪ বাংলার ২রা বৈশাখ রোববার বেলা ৯ ঘটিকার সময় রাজাবাহাদুর র্তাহার নিজ প্রাসাদে শান্তি মোহিত চিত্তে কথা কহিতে কহিতে শান্তিময়ের ক্রোড়ে চির আশ্রয় গ্রহণ করেন। স্বর্গারোহণের অৰ্দ্ধ মিনিট পূৰ্ব্বে তিনি সিভিল সাজ্জন মিঃ ষ্টিনকে বলেন যে “র্তাহার শরীর পূৰ্ব্বাপক্ষা ভাল আছে কিনা।” ফলতঃ মৃত্যুকালে তাহাকে ক্লেশ ভোগ করিতে হয় নাই। “রাজার মৃত্যু সংবাদ শুনিয়া ডিপুটী কমিশনার মিঃ কুহান ডিপুটী কমিশনার আফিস, লকেল বোর্ড ফিস, জজ আদালত, সব জজ আদালত, মুনসেফ কোর্ট ও গবর্ণমেন্ট স্কুল প্রভৃতি বন্ধ দিয়াছিলেন। বন্দর বাজারের মহাজনেরা তাহদের স্ব স্ব দোকান সেই দিনের তরে বন্ধ করিয়াছিলেন। মুরারিচাদ কলেজ হাই স্কুল সাতদিনের তবে বন্ধ হইয়াছিল।” শহর নিস্তব্ধ নীরব হইয়াছিল, “কি ৩৯ ১৩১৪ বাংলার ২৩শে বৈশাখের পরিদর্শক হইতে এ প্রবন্ধে অনেক স্থল উদ্ধত করা হইয়াছে।