পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৫ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত সখ্যাতির সহিত জুনিয়ার স্কলারশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া বৃত্তি ও দুইটি মডেল প্রাপ্ত হন। গোবিন্দচরণ তখন চাকুরী গ্রহণে অনুরুদ্ধ হন, কিন্তু তিনি অধ্যয়ন ত্যাগে স্বীকৃত না হইয়া ঢাকায় গিয়া ইংরেজী পড়িতে চাহিলেন। তৎকালে রেল বা ষ্টিমারে দূরদেশে যাইবার সুবিধা ছিল না, নৌকাপথে যাইতেও ডাকাতের বিশেষ ভয় চিল। তদবস্থায় মা কোন প্রকারেই পুত্রকে একা পাঠাইতে না পারিয়া তাহার সহিত ঢাকায় চলিলেন। তথায় দুই বৎসর অধ্যয়নের পর গোবিন্দচরণ সিনিয়ার স্কলারশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া গৃহে আসিলেন। এতদূর পড়িয়াও গোবিন্দচরণ যে খৃষ্টান হন নাই, তদৃষ্টান্তে শহরবাসীর মন হইতে ইংরেজী শিক্ষার প্রতি বিদ্বেষ বহু পরিমাণ দূর হয়। দেশে আসিবার পর গোবিন্দচরণ কিছুদিন ময়মনসিংহের জেলা স্কুলে শিক্ষকতা করেন, কিন্তু শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হইলেন। গোবিন্দচরণ গোড়া হিন্দু ছিলেন, কিন্তু প্রবল জ্ঞান-স্পহাবশতঃ স্কুলে কাৰ্য্যকালীন তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। আট বৎসর পরে মিশনারি সাহেবের সহিত কোন বিষয়ে মতান্তর হওয়ায় তিনি কৰ্ম্ম ত্যাগ করেন; গোবিন্দচরণ নিজ ছাত্রদেরকে বড়ই ভালবাসিতেন, সহাস্যবদন শিক্ষক হাস্য কৌতুকের সহিত ছাত্রদিগকে শিক্ষা দান করিতেন; ছাত্রগণ র্তাহাকে ভাল না বাসিয়া থাকতে পারতেন না। তিনি স্কুল ত্যাগ মাত্র প্রায় সকল ছাত্রই তাহার সঙ্গে চলিয়া আসেন; ইহাই বলিতে গেলে মিশন স্কুলের মৃত্যুর কারণ; গোবিন্দ চরণ সেই ছাত্রদেরকে তখন স্বয়ং শিক্ষা দিতে আরম্ভ করিলেন। ইহার পরেই ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে শ্রীহট্ট গবর্ণমেন্ট স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম কিছুদিন যিনি (উমাচরণ বাবু) প্রধান শিক্ষক ছিলেন, তিনি চলিয়া গেলে স্কুল কমিটির মেম্বরদের সকলেই ইচ্ছা হয় যে, গোবিন্দচরণকে প্রধান শিক্ষকের পদ দেওয়া হয় যে। এই সময় শ্রীযুক্ত দুর্গাকুমার বসু নামক এক হইবে বুজিতে পারিয়া তিনি ইহার জন্য স্বয়ং কমিটিকে অনুরোধ করেন। র্তাহার অনুরোধ রক্ষা হইলে তিনি সানন্দে দ্বিতীয় শিক্ষকের পদ গ্রহণ করেন। গোবিন্দচরণকে অতঃপর কাছাড় জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ প্রদান করা হয়, কিন্তু জন্মভূমির মায়ায় আকৃষ্ট হইয়া ও নিজ পুত্র কন্যার শিক্ষার সুবিধার জন্য শীঘ্রই তিনি সে দেশ ত্যাগ করিয়া পূৰ্ব্ব পদে উপস্থিত হন। তৎপর তিনি কিছুদিন শ্রীহট্ট নৰ্ম্মাল স্কুলের প্রধান শিক্ষকরূপে কাৰ্য্য করেন। ইহার পরে জোড়হাট, ধুবড়ী ও গৌহাটিতে হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ গ্রহণ করিতে গবৰ্ণমেন্ট কত্ত্বক অনুরুদ্ধ হন, কিন্তু পূৰ্ব্বোক্ত কারণে এই পদোন্নতি গ্রাহ্য করেন নাই। শ্রীহট্টে থাকিয়া স্বয়ং স্বদেশীয় ছাত্রবর্গকে শিক্ষাদানের অপিরসীম আনন্দ অপেক্ষা তিনি আর্থিক লভ্য অকিঞ্চিৎকর বোধ করিতেন। সঙ্গীত বিদ্যায় তাহার বড়ই অনুরাগ ছিল, তিনি সুকণ্ঠ ছিলেন না, সাধনায় কণ্ঠস্বর সুন্দর হইতে পারে বলিয়া তিনি তৎসাধনায় কঠোর প্রয়াস করিতেন। অভ্যাসকালে শীতের সময় গলা জলে নামিয়া তাহাকে সঙ্গীত সাধনা করিতে দেখা গিয়াছে। র্তাহার চিকিৎসকদিগকে দেশী কসরত দেখাইয়া বিস্মিত করেন।