পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪৮ ছিলেন, তিনি বিবাহ না করায়, তাহার ভাগিনেয় ফেদুরাম এই সম্পত্তি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।" মোনশী মহাশয় যখন স্বীয় কনিষ্ঠ ভ্রাতৃদ্বয়ের বিবাহের উদ্যোগ করিতে ছিলেন, তখন তাহার বিধবা খুল্লতাত পত্নী নিজ পুত্রের বিবাহ হইল না বলিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কোন প্রকারে ইহা জ্ঞান হইয়া অগ্ৰেই সেই বিধবার ক্ষোভ নিবারণ করেন, কেবল তাহাই নহে, সেই পিতৃহীন খুল্লতাত ভ্রাতাকে উপাৰ্জ্জন-ক্ষম করিবার উদ্দেশ্যে লাতুর বাজারের একটা দোকানে ইহাকে গোমস্তা করিয়া দিয়াছিলেন; এই দোকান হইতে সেই ভ্রাতা স্বীয় অবস্থায় উন্নতি বিধান পূৰ্ব্বক স্বচ্ছন্দে জীবনতিবাহিত করেন " মোনশীর আর একজন জ্ঞাতি ভ্রাতার অবস্থা অতি শোচনীয় ছিল, এইজন্য র্তাহাকে তিনি নিজের উকালতি সনন্দ দান করিয়া স্বয়ং ব্যবসায় ত্যাগ করেন, সেই ভ্রাতার নাম রাজীবলোচন ছিল। রাজীব লোচন এই দান প্রাপ্ত সনন্দ বলে উকালতি করিয়া আপন অবস্থার পরিবর্তন করিয়াছিলেন। গৌরীচরণ মোনশী একজন সমাজ তত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন, কঠিন সামাজিক প্রশ্ন সকল সহজে মীমাংসা করিয়া দিতেন, এজন্য নানা স্থান হইতে বিবাহ মীমাংসার জন্য তাহার কাছে লোক আসিত, সেই আগন্তুকবর্গ তাহার আদর আপ্যায়নে ও পরামর্শ প্রাপ্তে তুষ্ট হইয়া প্রত্যাগমন করিত। 确 বিবাহের সপ্ত প্রদক্ষিণ কালে কন্যাকে বহন করিয়া প্রদক্ষিণ করাইবার প্রতি তাহার মনোগত ছিল না, তজ্জন্য তিনি আপন মধ্যম পুত্রের বিবাহ কালে কন্যাকে হটাইয়া সপ্ত প্রদক্ষিণ করাইয়া ছিলেন। তৎকালে যদিও ইহা বিসদৃশ বলিয়া অনেক বোধ করিয়াছিল, কিন্তু পরে শ্রীহট্টের সাহু সমাজে ইহা ক্রমশঃ গৃহীত হয়; ইদানীং সকলেই ইহার আবশ্যকতা অনুভব করিতেছেন এবং এই প্রথা সৰ্ব্বত্রই প্রবৰ্ত্তিত হইতে আরম্ভ হইয়াছে। মোনশী গৌরীচরণ পরম জ্ঞানী ও বিষ্ণু ভক্তিপবায়ণ ছিলেন। ঢাকার অন্তর্গত উথলীর স্বগীয় বৃন্দাবনচন্দ্র গোস্বামী প্রায়শঃ লাতু আসিয়া তৎসহ সম্মিলিত হইতেন। একদা শ্রীহট্টের সুনাম প্রসিদ্ধ “বাবু” মুরারিচাদ রায়কে তিনি বলিয়াছিলেন “যখন মন বড় ব্যাকুল হইয়া উঠে, তখন লাতুতে গিয়া গৌরীচরণের সহিত আলাপ করিলেই শান্তি পাই।” বৈষ্ণব সাধক গোস্বামী মহাশয়ের স্থান অতি উচ্চে, সুতরাং তাহার এই বাক্যে গৌরীচরণের সমাজ ধৰ্ম্ম তৎপরতা ও জ্ঞান গৌরবে পরিমাণ অনুমান করা যাইতে পারে। বেকি টেকার সাধক হরনাথ চক্ৰবৰ্ত্তী এবং রফি নগরের সিদ্ধ ফকির শাহ ভৌলা প্রায়ই র্তাহার সহিত দেখা করিতে আসিতেন। ভোলা বলিতেন—“লাতুতে এক ধুনী ও তিন চেরাগ জুলিতেছে।” ধুনী অর্থাৎ জ্বলন্ত অগ্নি স্বরূপ মোনশী গৌরীচরণ আর তিন চেরাগ অর্থাৎ প্রদীপ স্বরূপ তাহার পুত্র ত্রয়কে উদ্দেশ্য করিয়াই ইহা বলা হইত। তাহার পুত্রত্ৰয়ের নাম চৈতন্যচরণ, বৈষ্ণবচরণ ও গুরুচরণ। চৈতন্য চরণ নসিরাবাদের মুন্সেফ ছিলেন, মধ্যম বৈষ্ণব চরণ ঢাকায় সব জজ হইয়াছিলেন ৪৬ কামাখ্যা নামক জনৈক কায়স্থ-সন্তান লাতুব অষ্টপতি লংশে বিবাহ করেন, তাহাব অধস্তন বংশীযবর্গ তদীয নামানুসাবে “কামুর গোষ্টি" নামে খ্যাত হয়। ফেদুবাম এই বংশীয় ছিলেন এ এক্ষণে বিলুপ্ত প্রায, ফেদুবামেব পুত্র শ্ৰীযুত গোবিন্দচরণ বায় জীবিত আছেন। _ ৪৭ মোনশী মহাশয়েব এই ভ্রাতার নাম ভবানীচবণ, ইহাব পুত্রই লাতুব অন্যতম জমিদার শ্ৰীযুত বৈকুণ্ঠ চরণ বায় অষ্টপতি মহাশয় বৰ্ত্তমান আছেন।