পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৫০ গৌরীশঙ্কর নিরুদ্বেগে নবদ্বীপে ন্যায় অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন ও অসাধারণ প্রতিভা বলে অল্প কাল মধ্যেই সুখ্যাতি অৰ্জ্জন করিতে সমর্থ হইলেন, তাহার যশঃপ্রভা কলিকাতা প্রভৃতি অঞ্চলেও বিকীর্ণ হইয়া পড়িল। গৌরীশঙ্কর যথাকালে অধ্যাপক হইতে “তর্কবাগীশ” উপাধি লাভ করেন এবং কতিপয় মহানুভব ব্যক্তির পরামর্শে কলকাতায় আগমন করেন। কলিকাতায় অল্পকাল মাত্র অবস্থিতির পরেই তিনি শোভাবাজারে রাজা কমলকৃষ্ণ রাম বাহাদুরের সহিত পরিচিত হন, গুণগ্রাহী কমলকৃষ্ণ র্তাহাকে সভাপণ্ডিত নিযুক্ত করিয়া মাসিক ২০ টাকা বৃত্তি, ও শোভাবাজারের বালাখানায় বাসের জন্য একটি বাটিকা নিদ্ধারিত করিয়া দেন। প্রখ্যাত কীৰ্ত্তি সম্পন্ন রাজা রামমোহন রায় যখন সতীদাহ নিবারণের জন্য চেষ্টান্বিত হন, তখন গৌরীশঙ্কর র্তাহার প্রধান সাহায্যকারী ছিলেন; ইহার হিন্দু শাস্ত্রানুমোদিততর্কে সতীদাহের বিরুদ্ধে পক্ষকে অনেক সময় নিরুত্তর থাকতে হইত। তিনি সতীদাহ সম্বন্ধে রাজার সহিত এক মতাবলম্বী তাহার কৰ্ম্ম-ক্ষেত্র অতঃপর আরও প্রসরতর হইয়া পড়িল, স্বৰ্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত পরিচালিত সংবাদ প্রভাকরের অনুকরণে ১৮৩৯ খৃষ্টাব্দে শোভাবাজারের রাজাব আনুকূল্যে “সম্বাদ ভাস্কর” পত্র প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকা প্রথমতঃ দৈনিক ছিল। এই কাগজের শীর্ষে দুইটি সংস্কৃত শ্লোক থাকিত, তাহাতে ভাস্কর সম্পাদকের নাম ও তিনি যে পূৰ্ব্বদেশ বাসী, তাহার উল্লেখ ছিল। ভাস্কর ব্যতীত গৌরীশঙ্কর “বসরাজ” নামে একখানা পত্রিকা প্রকাশ করেন, রসরাজ ব্যঙ্গ বিদ্রুপের অফুরন্ত উৎস স্বরূপ ছিল, কিন্তু উহা জন্ম মাত্রই বিপন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। ইহাতে কাশীমবাজারের রাজা কৃষ্ণনাথের কুৎসা প্রকাশিত হওয়ায় তৎবিরুদ্ধে রাজা মানহানির মোকদ্দমা উপস্থিত কবেন, ইহাতে গৌরীশঙ্করের বিনাশ্রমে ছয় মাস কারাবাসের ও পাঁচ শত টাকা জরিমানার এবং ১০০০ টাকার দুই জন জামিন দেওয়ার আদেশ হয়। 藝 ১৮৪৭ খৃষ্টাব্দ হইতে সম্বাদ ভাস্কর সপ্তাহে দুইবার করিয়া বাহির হইতে আরম্ভ হয়, পরে >br(? O খৃষ্টাব্দ হইতে সপ্তাহে তিনবার করিয়া প্রকাশিত হইতে থাকে এবং মূল্য ১২ টাকা স্থানে ৮ টাকা নিরূপিত হয়। এই সময়ে তিনি রসরাজ বন্ধ করিয়া দেন। গৌরীশঙ্কর গ্রস্থ প্রণয়নেও বিরত ছিলেন না। ১৮৩৭ খৃষ্টাব্দে রাজা রাধাকান্ত দেব বাহাদুর “নীতি-কথা” নামক একখানা শিশু পাঠ্য পুস্তক প্রকাশ করিয়াছিলেন, গৌরীশঙ্করই নীতি কথার রচয়িতা ছিলেন। গৌরীশঙ্করের নীতি কথার তিনটি ভাগ প্রকাশিত হইয়াছিল এবং ইহার বহু সংস্করণ বাহির হইযাছিল। এতদ্ব্যতীত তিনি “ভূগোল” “জ্ঞান প্রদীপ” ১ম ও ২য় ভাগ এক মার্কণ্ডেয় পুরাণোক্ত দেবী মহাত্মা চণ্ডীর একখানা উৎকৃষ্ট সংস্কৃত টীকা প্রণয়ন করিয়াছিলেন। কাশীদাসের মহাভারত যখন প্রথম মুদ্রিত হইয়া প্রচারিত হয়, তখন শ্রীরামপুরের কেরী সাহেবের পণ্ডিত, যশোহর বাসী জয়গোপাল তর্কালঙ্কার ইহার অনেক স্থল পরিবর্তন করিয়া ভাষা শুদ্ধি বিধানের যত্ন করেন, জয়গোপালের পরে গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশও এই প্রয়াস পাইয়াছিলেন, তাহার সংশোধিত মহাভারতের বন পকেবর সমাপ্তিতে লিখিত আছে ঃ “শ্রীগৌরী শঙ্কর বলে ভারতের শাখা। বণপৰ্ব্ব অপূৰ্ব্ব সমাপ্ত রস মাথা।