পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৩ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত হইয়া গিয়াছে, সুতরাং এক্ষণে ইহাতে বিশ্বাস সংস্থাপিত করা কঠিন হইয়াছে। পক্ষীর স্বর এবং গতি ও অঙ্গভঙ্গি হইতে অনেক সময় প্রাকৃতিক অবস্থা বিপৰ্য্যয়ের জ্ঞান লাভ করা যাইতে পারে, “কাকচরিত্র” আলোচনায় অনেক সময় ভবিষ্যৎ শুভাশুভ নির্ণীত হইত, তাহার অনেক বিশ্বাস্য কাহিনী শুনা গিয়া থাকে। দয়ালকৃষ্ণ কাকচরিত্র ভাল রকম জানিতেন। একদা দস্তিদার গৃহে ব্ৰাহ্মণভোজন হইতেছিল, হঠাৎ দয়ালকৃষ্ণ বলিয়া উঠিলেন—“আজ সুন্দররাপে ব্রাহ্মণ ভোজন হইল না, আমরা আজ ব্রাহ্মণভোজনে দধি ও ক্ষীর দিতে পারিব না।” “কেন পরিবেন না; ক্ষীর লইয়া তো গোয়ালা আসিতেছে?” পাশ্ববৰ্ত্তী জনৈক পরিচারকের এ কথার উত্তরে বলিলেন—“হতভাগ্য গোয়ালার পদস্থলিত হওয়ায় এই মাত্র তাহার দধি ও ক্ষীরের কড়াই (পাত্র) পতিত হইয়া ভাঙ্গিয়া গেল; কাজেই ইহা দিতে পারিব না।” এইকথা বাৰ্ত্তার ক্ষণপরেই গোয়ালা রিক্তহস্তে আসিয়া পথের ঘটনা জানাইল। গোয়ালা সত্য বলিতেছে কি প্রতারণা করিতেছে, তাহা জানিতে (এবং দয়ালকৃষ্ণের উক্তির যথার্থ পরীক্ষার্থ) তখনই ঘটনাস্থলে লোক প্রেরিত হইল; সেই লোক দেখিয়া বিস্মিত হইল যে যথার্থই পথে দধিভাণ্ড ও ক্ষীরাধার ভগ্ন হইয়া দধি ও ক্ষীর পতিত হইয়াছে। দয়ালকৃষ্ণ কাকধবনি হইতেই এই বিষয় জ্ঞান হইয়াছিলেন। স্বগীয় জমিদার নবকৃষ্ণ দস্তিদার এই দয়ালকৃষ্ণের ভ্রাতুষ্পপুত্র ছিলেন। নবকৃষ্ণের সুযোগ্য পুত্ৰগণ এক্ষণে বংশের গৌরব রক্ষা করিতেছেন। দীননাথ দত্ত হবিগঞ্জ সবডিভিশনের অন্তর্গত তরফ পরগণার সাতকাপন নামক পল্লীতে ১৭৬৬ শকের কাৰ্ত্তিক মাসে তত্রত রতিরাম দত্তের একটি পুত্র জাত হয়। নাম দীননাথ দত্ত। ইহার পূৰ্ব্বপুরুষ পূৰ্ব্বে অন্যত্র ছিলেন। দীননাথের অষ্টম পুরুষ পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী বৈদ্যনাথ দত্ত সাতকাপনের দুৰ্য্যোধন করের কন্যা লীলাবতীকে বিবাহ করিয়া এস্থানে বসতি করেন, তদবধি দত্ত বংশীয়গণ এস্থান বাসী। বৈদ্যনাথের পুত্র বাধানাথ, তৎপুত্র গঙ্গাহরি, তাহাব পুত্র প্রাণবল্লভ, তৎপুত্র রঘুনাথ, তৎপুত্র রঞ্চিত রাম, ইনিই দীননাথের পিতামহ। পুরুষ বৈদ্যনাথকে প্রায় ২৫০ বৎসরের পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী লোক বলা যাইতে পারে। দীননাথ দত্ত ইংরেজী অধ্যয়ন না করিলেও, জ্ঞান ও বুদ্ধিতে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী সুশিক্ষিত ব্যক্তি হইতে নূ্যন ছিলেন না। ইহার গবেষণা শক্তি অতি প্রশংসনীয় ছিল। ইনি পরোপকারী, দেশ হিতৈষী অধ্যবসায়ী ছিলেন; এ দেশে দেশবাসীগণ যাহাতে যৌথ করবার করিতে সমর্থ হয়, তদ্বিষয়ে তাহার ঐকান্তিক যত্ন ছিল এবং এ বিষয়ে তিনিই প্রথম পথ প্রদর্শক কাছাড় নেটিভ জয়েন্ট ষ্টক কোংও ভারত সমিতির তাহার নিদর্শন স্বরূপ বৰ্ত্তমান আছে। উক্ত কোম্পানি দুইটি ইহারই উদ্যোগে উন্নত অবস্থায় উপস্থিত হইতে সমর্থ হয়। ধৰ্ম্মানুষ্ঠানে তাহার বিশেষ শ্রদ্ধা ছিল, তিনি একেশ্বরবাদী ছিলেন এবং নববিধান মতের অনুসরণ করিতেন। গত ১৯২৪ শকের মাঘ তারিখে তিনি পরলোক গমন করেন; তদীয় সুযোগ্য পুত্র শ্রীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ দত্ত পিতৃপদানুসরণে যোগ্যতার সহিত ভারত সমিতির কার্য্য করিয়াছেন।