পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৫ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পিটিতে আরম্ভ করেন ও ইহাতে অনেকটা কৃতকাৰ্য্য হন। কৰ্ম্মানুরোধে নিদ্রা আসিতে না এবং কয়েক দিনে তাহা একরূপ অভ্যাস হইয়া যায়। প্রভাতের পূৰ্ব্বে একঘণ্টা কি অৰ্দ্ধঘণ্টা মাত্র বসিয়া হাঁটুতে মাথা রাখিতেন, ইহাতেই একটু মাত্র নিদ্রাবেশ হইত। এইরূপে নিদ্রা কমিয়া গেলে প্রায় অবিচ্ছেদে নাম লওয়া চলিতে লাগিল। এই সময় হইতে তিনি একবেলা স্বহস্তে পাক করিয়া আহার করিতে আরম্ভ করেন। এক বৎসর এইরূপ ভাবে গেল; একবৎসরের পরিশ্রমে, পাইকারী দরে সস্তায় বাসন বিক্রয় করিয়াও র্তাহার হাতে ৫০০ টাকা শিক্ষাগুরুকে এবং বাকি ৩০০ টাকা ভ্রাতৃহস্তে অৰ্পণ করিলেন। জ্যেষ্ঠকে বলিলেন “ভাই, আমার দ্বারা সংসারের কিছু হইবে না, সম্পত্তি তোমাদেরই রহিল, দিনান্তে একমুষ্টি তণ্ডুল ব্যতীত আমি আর কিছু চাহি না।” এই দিনই সকলে জানিল যে মনোমোহিনীকে তিনি শিক্ষা গুরুরূপে দর্শন করেন; মনোমোহিনীও তাহা সেই দিনই জানিতে পারিলেন। এই সময় দুর্গাপ্রসাদের বয়স ২৪ বৎসরের অধিক নহে, এই সময় হইতে দৈনিক একমুষ্টি মাত্র করিয়া অন্নাহার করিতে আরম্ভ করিলেন। কিন্তু এক দুৰ্ব্বিপাক উপস্থিত হইল, পূৰ্ব্বে কৰ্ম্মের ঝোকে নিদ্রা আসিত না, সারারাত্র হরিনাম করিতে পারিতেন। এক্ষণে কৰ্ম্মত্যাগ করায় কতক রাত্র পরেই নিদ্রা উপস্থিত হইতে লাগিল। তিনি নিদ্রা তাড়াইতে কখন কখন উঠিয়া দৌড়িতেন, কখন কখন বা জলে নামিতেন। শীতে গায়ে কাপড় দিতেন না, যে গৃহে থাকিতেন তাহার চালে এক গাছি বড় শিকা খাটাইয়া সেই শিকায় এইজন্য উঠিয়া বসিতেন ও ঝুলিতেন; পড়িবার ভয়ে নিদ্রা দূর হইত। এইরূপে আর বৎসর গেল । ইহাব পর আহার ত্যাগই ইন্দ্রিয় দমনের শ্রেষ্ঠ উপায় বলিয়া মনে করিলেন এবং দিন দিন অন্তর একবেলা আহারের বন্দোবস্ত করিলেন। ইহাও অভ্যস্ত হইয়া গেল, কিন্তু তাহাতে দেহষষ্টি একেবারে ক্ষীণ হইয় পড়িল। সেইরূপে আরও এক বৎসর কাল অতীত হইল, তৎপর তাহার এক বিধবা মাসী বহু অনুরোধে তাহার পাক প্রস্তুত করিয়া দিবার ভার গ্রহণ করেন। অবিশ্রান্ত হরিনাম লইতে হইত বলিয়ার্তাহার লোকের সহিত আলাপের সময় ছিল না, লোকের সহিত আলাপ করিতেন না; শেষটা আলাপের ইচ্ছাই হইত না। এইরূপে আলাপ বন্ধ থাকিতে থাকিতে অবশেষে শব্দ উচ্চারণের শক্তি দূর হইল, বাক্য কখন বন্ধ হইয়া গেল। তখন আর ইচ্ছ করিয়াও আলাপ করিতে পারিতেন না, জিহায় জড়তা বশতঃ শব্দ উচ্চারিত হইত না। এইরূপ অবস্থা ঘটবার সঙ্গে সঙ্গে কৰ্ত্তব্যাকৰ্ত্তব্য জ্ঞান—স্নানাহারের ইচ্ছা প্রভৃতিও দুর হইতে লাগিল। তখন হইতে নাম স্বতঃস্ফূরিত হইত; নাম তখন অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছে—সতত তালুমূলে টক্‌ টক্‌ ধ্বনির সহিত নামের ক্রিয়া চলিত। তখন যে কেহ ডাকিলে বা কিছু আদেশ করিলে আজ্ঞাবাহী ভূত্যের ন্যায় চলিতেন; কিন্তু এই নির্বাক পুরুষকে কেহ সংকীৰ্ত্তনে লইয়া গেলে, সেই কীৰ্ত্তন খুবই জমিয়া উঠিত, এইজন্য লোকে তাহাকে কীৰ্ত্তনে লইয়া যাইত। তাহার পর সাধু আর এক নিয়ম করিলেন। একদিন মাসী অন্ন লইযা আসিলে, তিনি গুরুগৃহ দেখাইয়া দিলেন। মাসী বুঝিলেন, সাধু প্রসাদ খাইতে ইচ্ছা করিয়াছেন; তিনি থালা লইয়া মনোমোহনীর গৃহে গেলেন। মাসীর অনুরোধে সেই থালা হইতে মনোমোহনী কিঞ্চিৎ খাইলে মাসী তাহা লইয়া