পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭৬ হইতে স্বগৃহে আগমন করিলেন। সমগ্র গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবতের দশম গুন্ধ তাহার কণ্ঠস্থ ছিল। বাড়ীতে আসিয়া তিনি এক টোল স্থাপন করেন, অনেকেই সেই টোলে শিক্ষার্থী হইয়া আসিয়াছিল, সেই ছাত্রদের মধ্যে দুই এক জন খ্যাতিনামা পণ্ডিত এখনও আছেন। জ্যোতিবির্বদ্যা ও অঙ্কশাস্ত্রে তাহার বিশেষ পারদর্শিতা ছিল, ফলিত জ্যোতিষ আলোচনা দ্বারা তিনি প্রশ্ন গণনায় ভবিষ্যৎ ফলাফল বলিয়া দিতে পারিতেন। এক বৎসর পৌষ মাস হইতে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত কিছুমাত্র বারিপাত না হওয়াতে দেশের কৃষককুল বড়ই ব্যাকুল হইয়া উঠে। ইটার মনসুর নগরের জমিদার দেওয়ান গফুর মিয়া, প্রশ্ন গণনায় নিত্যানন্দের সুখ্যাতি শ্রবণে, তাহাকে আহ্বান করতঃ বৃষ্টি ফলাফল গণনা করিতে বলেন। গণনা করিয়া তিনি স্বয়ংই সন্দিহান হইয়া নিরুত্তর রহিলেন, পরে দেওয়ানের পুনঃ পুনঃ প্রশ্নে উত্তর করিলেন—“দেওয়ান সাহেব ! গণনায় অসম্ভব বিষয় দেখিতে পাইতেছি, বলিতে সঙ্কোচ হইতেছে। কথা শুনিয়া দেওয়ানের কৌতুহল হইল এবং অসঙ্কোচে গণনার ফল প্রকাশ করিতে বলিলেন। নিতানন্দ বলিলেন—গণনায় আজই বিষম বৃষ্টি হইবে, প্রবল বেগে ঝড় উঠিবে, বলিতে সঙ্কোচ হইতেছে। দেখিতেছি সাহেবের গৃহের পর্যন্ত অনিষ্ট হইতে পারে। বারবার গণনাতেও একই ফল বাহির হইল।” দেওয়ান হাসিয়া উঠিলেন; পণ্ডিতের উভয় কথাই সম্ভাবনার অতীত। কারণ তখন আকাশে মেঘের চিহ্ন মাত্রও ছিল না। নিতানন্দ একরূপ অপ্রস্তুত ভাবেই নিজ গৃহে ফিরিয়া আসিলেন কিন্তু সেই রাত্রেই আশাতীত বৃষ্টি হইল, প্রবল ঝড় বহিল এবং তাহাতে বাস্তবিকই দেওয়ানের বাড়ীর একটি গৃহের চালা উড়াইয়া লইয়া পাশ্ববৰ্ত্তী পুষ্কণীর জলে ফেলিয়া দিল। দেওয়ান সাহেব এবং যাহারা ঐ গণনার সংবাদ রাখিতেন, তাহার নিত্যানন্দ ঘোষের গণনার সাফল্য দর্শনে তৎপ্রতি শ্রদ্ধাবান হইলেন। দেওয়ান পরদিন পুনঃ লোক পাঠাইয়া র্তাহাকে নেওয়াইলেন এবং একখানা শালবস্ত্র ও একটি স্বর্ণমুদ্রা পারিতোষিক স্বরূপ প্রদান করিলেন। কেবল তাহাই নহে, তাহাকে স্বীয় “দ্বারপণ্ডিত” নিযুক্ত করিলেন। ধাৰ্য্য হইল যে, তিনি সপ্তাহে একদিন করিয়া দেওয়ান গৃহে উপস্থিত হইবেন। নিতানন্দ আজীবন দেওয়ানের দ্বারপণ্ডিত ছিলেন। যে দিন তিনি দেওয়ানের গৃহে যাইতেন, তাহার প্রত্যেক বারই তিন টাকা করিয়া বিদায় পাইতেন। শেষকালে তিনি মহাদেবী বড়কাপনের শ্যামসুন্দর ভট্টাচাৰ্য্যকে নিজ পদে রাখিয়া অবসর গ্রহণ করেন । নিত্যানন্দের একটি ষাড় ছিল, তিনি ষাড়টাকে বাধাইয়া লওয়াতে দেশীয় পণ্ডিতমণ্ডলী তাহাকে দোষী সাব্যস্ত করেন, ইহাতে সমাগত পণ্ডিতবর্গের সহিত শাস্ত্র বিচার হয়; ইটার প্রসিদ্ধ পণ্ডিত রাজগোবিন্দ সাবর্বভৌম প্রভৃতি বিচার সভয়া উপস্থি ছিলেন কিন্তু কিছু স্থিরীকৃত না হওয়াতে, মীমাংসার জন্য নবদ্বীপে লেখা হয়। নবদ্বীপের পণ্ডিতবর্গ নিত্যানন্দের মীমাংসারই পক্ষে মত দেন। ইহাতে দেশীয় পণ্ডিতবর্গ নিত্যানন্দের পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাইয়া প্রসন্নচিত্তে সকলে তাহাকে “নিমাই পণ্ডিত” উপাধি প্রদান করেন। নিত্যানন্দ ঘোষ, নদীয়ার নিমাই পণ্ডিতের পার্ষদ বংশীয়, “নিমাই পণ্ডিত” উপাধিটি সেই সম্বন্ধ সূচক বোধ হয়।