পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭৮ করিয়াছিলেন, তাহাতে দ্রুতগতি উন্নতিপথে ধাবিত হইতেন, ইহাতে সন্দেহ নাই। সেই অফিসের উদ্ধতন কৰ্ম্মচারী তাহাকে অত্যন্ত ভালবাসিতেন। কিন্তু একটি আকস্মিক ঘটনায় তাহাকে কাৰ্য্য ত্যাগ পূবর্বক দেশে আসিতে হয়। ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে সিমলা হইতে কলিকাতার অফিস আসিলে,একদিন আফিস হইতে বাসায় আসিবার কালে দৈবাৎ ওয়েলিংটন স্কোয়ারে সারসের (William Circes) নামক এক সাহেবের হাতের একখানা দাগতোলা ছুরী (Eraser) উত্তর সাহেবের গলদেশে লাগিয়া একটা শিরা ছিন্ন হইয়া যায়, এবং ক্ষত হইতে রক্তপাত হইয়া সাহেবের মৃত্যু হয়। প্যারীচরণ অভিযুক্ত হইয়া স্পষ্টাক্ষরে সমস্ত ঘটনা স্বীকার করেন; বিচারে তাহার তিন মাসের জন্য কারাদণ্ড হয়। তিন মাসের পর কারামুক্ত হইয়া দেশে আসিবার পূৰ্ব্বে আফিসের সেই উদ্ধতন কৰ্ম্মচারীর সহিত সাক্ষাৎ করেন, সেই সদাশয় সাহেব প্যারীচরণকে অত্যন্ত ভালবাসিতেন, তিনি তাহাকে কলিকাতায় থাকিতে অনুরোধ করেন এবং পুনৰ্ব্বার কার্য দিতে প্রতিশ্রত হন, তিনি অতঃপর সেই অনুরোধ রক্ষা করেন নাই। দেশে আসিয়া তিনি সংবাদ পত্রের অভাব অনুভব করেন ও শ্রীহট্ট হইতে “শ্রীহট্ট প্রকাশ” নামক সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রচার করেন। প্রথমতঃ উহা কলিকাতা হইতে ছাপাইয়া আনা হইত, কিন্তু অতি সত্বরই তিনি একটি মুদ্রা যন্তর আনয়ন করিয়াছিলেন। শ্রীহট্ট প্রকাশ ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দ হইতে প্রচারিত হয়। এক সময় এদেশে শ্রীহট্ট প্রকাশের খুব নাম ডাক ও প্রচার ছিল। এমন কি, অশিক্ষিত সমাজে সংবাদ পত্র মাত্রকেই শ্রীহট্ট প্রকাশ নামে অভিহিত করতে শোনা গিয়াছে। প্রচার বাহুল্য এই সংবাদপত্রের নাম দেশে কিরূপ পরিচিত হইয়াছিলেন, ইহাতে বুঝা যায়। প্যারীবাবু শ্রীহট্ট প্রকাশ প্রকাশে বিব্রত থাকায় অবসর অল্পই পাইতেন তখন মফঃস্বল সংবাদদাতা মিলিত না; সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিশেষ বেগ পাইতে হইত; প্রায় সমস্ত লেখাই স্বয়ং লিখিতে হইত। তদ্ব্যতীত দেশীয় লোকদিগকে বেতন দিয়া রাখিয়া প্রেসের কাজ স্বয়ং শিখাইয়া কাজ লইতে হইত, একেবারেই সময় ছিল না। সুতরাং তিনি কোন বৃহত্তর কাব্যগ্রন্থ প্রণয়ন করিতে না পারিলেও তিনি যে উচ্চাঙ্গের কবিপ্রতিভা-সম্পন্ন ছিলেন, তাহা তদীয় যে কোন কবিতা পাঠেই বোধ হয়। শ্রীহট্ট প্রকাশে বেনামীভাবে অনেকটি কবিতা তিনি প্রকাশ করেন, তাহার সকলটিই এক্ষণে বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে, তন্মধ্যে হাস্যাত্মক ও শ্লেষব্যঞ্জক কবিতাও ছিল।” “রণরঙ্গিণা” নামে প্যারীবাবুর কৃত ক্ষুদ্র এক পুস্তিক আমরা দেখিয়াছি, উহা ফরাসী রমণীগণের স্বাধীনতার আকাঙক্ষী-জ্ঞাপক একটি কবিতা মাত্র। তাহার “পদ্যপুস্তক” ৩য় ভাগের কবিতাগুলি ৮৭ তদ্রুপ একটি কবিতাল আরম্ভ মনে আছে, তাহা এই ঃ– “গুন শ্রোতাগণ, সমাহিত চিতে, নব-রস-কথা মনের সুখে। দিবে হরিদাস, বাউল বাবাজি, মাধুকরী মাখি সবাব মুখে । আর একটি কবিতার আরম্ভ এইরূপ ছিল ৪— 'পদ্রম-বন মধু ভ্রমরেল ঝি, হংস পুচ্ছ-মুখে বসগো আসি।”