পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৮৪ দেশে আসিয়াছিলেন; ইহা তাহার শ্রীহট্টে প্রথমাগমন। সন্ন্যাসের পর তিনি শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণ পৰ্য্যন্তও গিয়াছিলেন।** বাণীকিশোর (ঠাকুরবাণী) ঠাকুরবাণী এক প্রসিদ্ধ সিদ্ধপুরুষ। বাণী হইতে তদ্বংশীয়গণ “গোস্বামী” উপাধি ধারণ করিয়া আসিতেছেন। ঠাকুরবাণীর বংশবৃত্তান্ত পূবেৰ্ব বর্ণিত হইয়াছে।” ঠাকুরবাণীর শিষ্য সম্প্রদায় শ্রীহট্ট জেলার বহুস্থানে অবস্থিতি করিতেছেন। ঠাকুরবাণীর জীবনের কয়েকটী আখ্যায়িকা মাত্র জ্ঞাত হওয়া যায় | বাণীর পিতার নাম হরিশ্চন্দ্র, নিবাস দিনারপুর। বাণীকিশোর যখন কিশোর বয়সে পদার্পণ করেন, তখন তাহার পিতৃবিয়োগ হয়; বাণী বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে তাহার মাতাই যোগাড়যন্ত্র করিয়া তাহাকে বিবাহ দেন। মাতা বিবাহ দিয়া বধূ ঘরে আনিলেন বটে, কিন্তু উদাসচিত্তে পুত্র কোন প্রকারেই কাজ কৰ্ম্ম দেখিতেন না। কিঞ্চিৎ জমাজমি ছিল, মাতাই তাহার “বিলিবন্ধন” করিতেন। একবাব এই ভূমির রাজস্ব বাকি পড়িয়াছিল, কর আদায়ের জন্য প্যাদা উপস্থিত হইলে বাণীকিশোর ভয়ে পলায়ন করিয়াছিলেন। নিকটে এক ঝাড় জঙ্গল ছিল, তাড়াতাড়ি কোথাও যাইতে না পারিয়া সেই বনের আড়ালে মাথাটি গুজিয়া রাখিলেন, বাকি দেহখানা বনের বাইরেই রহিল। বনের আড়ালে মাথা থাকায় তিনি অবশ্য প্যাদাকে দেখিতে পাইলেন না, এবং মনে করিলেন যে, তাহার মত অন্যেও তাহাকে দেখিতে পাইতেছে না। বাণীর চিত্ত যে শিশুর ন্যায় একবারে সরল ছিল, ইহাতেই বুঝা যায়। এরূপ সরল-চিত্ত পবিত্ৰাত্মা দেবানুগ্রহ লাভে কেন অসমর্থ হইবেন ? যাহারা কোন কিছু গোপন করিতে গিয়া হাস্যাস্পদকাপে ধরা পড়ে, “বাণীঠাকুরের ভাগা” কথাটি তাহদেব প্রতি তুল্য-উদাহরণ স্বরূপ প্রযোজ্য হইযা থাকে।* এই ঘটনার পর ঠাকুরবাণী গৃহত্যাগ করিয়া নানাস্থান ভ্রমণ করেন। শ্রীহট্ট শহরে উপস্থিত হইলে তিনি পাগল বলিয়া বন্দিশালে নীত হইয়াছিলেন, কিন্তু তাহার বন্ধন পুনঃ পুনঃ মুক্ত হইয়া পড়ায় কাবারক্ষক বিস্মিত হন,——তিনি ইহা নবাবকে জ্ঞাপন করেন। শ্রীহট্টের নবাব এই সংবাদ অবগত হইয়া বাণীকে সিদ্ধপুরুষ জ্ঞানে অনেক অর্থদান করেন। তিনি সেই অর্থ পথে পথে বিতরণ করিয়া তথা হইতে চলিয়া আসেন। শহরেব লোকেরা তাহার মহিমা জ্ঞাত হইয়া, তাহাকে অন্যত্র যাইতে দিল না, তিনমাস কাল পরম যত্নে তথায় বাখিয়া দিল; এবং অনেকেই তাহার নিকট হইতে মন্ত্রগ্রহণ করিয়া কৃতাৰ্থ হইল। শ্রীহট্ট হইতে ঠাকুরবাণী রূপনাথদর্শনে জয়ন্তীয়ায় উপস্থিত হন। জয়ন্তীয়াতে তিনি সাত দিন ছিলেন। তথায় এক রাত্রে তিনি স্বপ্নে দেখিলেন যে, স্বয়ং মহাদেব তাহাকে বলিতেছে—“সাধো ৯৬, “এই উত্তরাংশের উপসংহাবাধ্যায শ্রীচৈতন্যচবিত” দ্রষ্টব্য। ৯৭. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৩য ভাঃ, ৩য় এবং ৪র্থ খণ্ডের যথাক্রমে ৫ম ও ৩য় অধ্যায় দ্রষ্টব্য। &br এই গল্পটি বাণীবংশজ আমাদের শ্রদ্ধাভাজন প্রেবক মহাশয় হইতে প্রাপ্ত নহে। সাধু মহাত্মা সরল, তাহাবা সাংসাবিক বিচারবুদ্ধির চালে চলেন না বটে, কিন্তু নানা কারণে এ গল্প কতদূর সত্য বলা যায় না :তবে “বাণী ঠাকুরের ভাগা" কথাটা সুপ্রচারিত।