পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩২ যাহার প্রভাবে মানব মর হইয়াও অমরত্ব লাভে সমর্থ, যে মহিমাময় হরিনাম সাধককে নামীর না; এ সকল নামের আনুষঙ্গিক ফল, মুখ্য ফল নহে। এ সকল ঘটনা মনের একাগ্রতা বা তজ্জনিত শারীরিক কোন ক্রিয়া বিশেষের ফল বলিয়া মনে করাই যদি সঙ্গত বোধ হয়—আপত্তি নাই, এবং ইহাতে সাধারণের নাম মাহীত্বো বিশ্বাসাধিক্যেরই সম্ভাবনা। হরিহরের একমাত্র পুত্রের নাম রঘুনাথ ন্যায়ালঙ্কার, ইনি স্বীয় কবিত্বগুণে বিখ্যাত হইয়াছিলেন,” কিন্তু তদীয় কোন কাব্যগ্রন্থের সংবাদ আমরা জ্ঞাত হইতে পারি নাই। গঙ্গারাম শিরোমণি ইহারই পুত্র। সুপ্রসিদ্ধ গঙ্গরাম দেশে ব্যাকবণাদি অধ্যয়ন পূৰ্ব্বক বেদাধ্যয়ন মানসে দ্রাবিড় দেশে গমন করেন ও যতীর আচার অবলম্বনে সাত বৎসর তথায় অবস্থিতি করিয়া অধ্যয়ন সমাপন পূৰ্ব্বক কাশীতে উপস্থিত হন। কাশী চিরদিন বিদ্বান ব্যক্তির আদর করিয়াছে গঙ্গারাম আদৃত না হইবেন কেন? অনেক দণ্ডী, অনেক পণ্ডিত, নূতন বিদ্যা-বিলাসীর নাম শুনিয়া আসিলেন; কিন্তু হায়, তাহার গৰ্ব্ব চূর্ণ করিতে আসিয়া স্বয়ংই হতগৰ্ব্ব হইতে লাগিলেন। শ্রীহট্টবাসী গঙ্গাবাম কাশীবিজয়ী পণ্ডিত ছিলেন । কাশী বিজয়ান্তে গঙ্গারাম সগৌরবে দেশে প্রত্যাগমন কালে পুঠিয়া রাজধানীতে উপস্থিত হইলেন। পুঠিয়া-রাজের মাতৃবিয়োগ হইয়াছিল এবং কাশী প্রভৃতি স্থানেব পণ্ডিতবর্গ রাজমাতার শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রিত হইয়া আসিতেছিলেন। গঙ্গারাম বিদেশী ছাত্র, ঐ শ্রাদ্ধে তাহার নিমন্ত্রণ হয় নাই, এই জন্য তিনি কাশীর এক পণ্ডিত বন্ধু সহ ছদ্মবেশে পুঠিয়াতে আসিবেন। সেই পণ্ডিত সভায় নানা শাস্ত্রের বাদবিতণ্ডা হইতেছিল। গঙ্গারাম মলিনবেশে এক প্রান্তে উপবিষ্ট হইয়া শুনিতেছিলেন। কিছুক্ষণ পবে কোন সিদ্ধান্ত-বিরুদ্ধ কথা শুনিয়া তাহার অসহ্যবোধ হইল; তিনি সতেজে গৰ্জ্জিয়া উঠিলেন। তখন সকলেরই সচকিত-দৃষ্টি র্তাহার উপর পতিত হইল, সেই দীনবেশী তখন সংস্কৃত ভাষা অবজ্ঞায় সহিত বলিলেন—“মহাত্মগণ, ভয় নাই, আমি মনুষ্য।" তারপর তিনি অপূৰ্ব্ব বাথিন্যাস প্রকটিত করিয়া, শাস্ত্ৰ-সাগর মন্থন পূৰ্ব্বক অদ্ভুত প্রতিভাবলে মধুময়ী সংস্কৃত ভাষায় বক্তৃতা দ্বারা পণ্ডিত মণ্ডলীকে স্তম্ভিত ও তাঁহাদের বাক্যে দোষ প্রদর্শন করিলেন। পণ্ডিত মণ্ডলীর প্রত্যুত্তরের আর অবসর রহিল না; তখন তিনি সুললিত বাক্য পরস্পরায় সুমীমাংসা করিয়া তাহাদিগকে আপ্যায়িত করিলেন। পরদিন পণ্ডিতবর্গ পুনঃ একত্র সমবেত হইলেন;কিন্তু গঙ্গারামের সম্মুখে সবারই প্রতিভা মলিন হইয়া গেল! তৃতীয় দিনও পণ্ডিতবর্গের জেদ বজায় থাকিল না! তৃতীয় দিনে জয়লাভ করিলে, সমবেত পণ্ডিতমণ্ডলী অকপটে গঙ্গারামের জয়ধ্বনি দ্বারা সভা মুখরিত করিয়া তুলিলেন। শিরোমণি 赣 ১১. “তস্য পুত্র ন্যায়ালঙ্কাব বলুনাথ কবি। কবি মণ্ডলীতে যথা গ্রহ মধ্যে ববি।”—শ্রীচৈতন্যবত্বাবলী। ১২. “কাশীবাসী দণ্ডী ঋষি বেদবিদ যত। সমূহ হইল সৰ্ব্ব শাস্ত্রে পরাভূত।" —শ্রীচৈতন্যবত্বাবলী।