পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৯৬ কিন্তু সাংসারিক অবস্থার পীড়নে তাহাকে শীঘ্রই পড়াশুনা ছাড়িয়া সংসারের ভার গ্রহণ করিতে হয়। তাহার উপর পৈতৃক শত্রুদের উৎপীড়নের মাত্রাও প্রথমতঃ অল্প হয় নাই; কিন্তু ইহাতে সাংসারিক কার্যে র্তাহার এতাদৃশ পরিপক্কতা জন্মে যে, তদীয় কাৰ্যকুশলতা দৃষ্টে চতুর ব্যবহারজীবীও চমৎকৃত হইতেন। সংকীৰ্ত্তন বা কবির দলে গীত হইবার নিমিত্ত গনের প্রয়োজন হইলে, ঈষদায়াসেই ইনি তাহা সুষ্ঠু রচনা করিয়া ধনাগমের উপায় উদ্ভাবনেই রত থাকিতেন। তিনি গ্রামে যৌথ কারবারে লোন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করেন ও প্রায়পঞ্চাশ বৎসর কাল তাহা দক্ষতার সহিত পরিচালিত করিয়াছিলেন। মথুরানাথ আচার ও ধৰ্ম্মনিষ্ঠ, সত্যপরায়ণ ও অমায়িকপুরুষ ছিলেন। তাহার ব্যবহারে বালবৃদ্ধ সকলই মোহিত ছিল। গ্রামস্থ লোকের তৎপ্রতি এত বিশ্বাস ছিল যে, অতি গোপনে তাহার কাছে নিজ অর্থবিত্ত সবর্বদা গচ্ছিত রাখিত। বিপদ আপদ উপস্থিত হইলে, তাহা হইতেই সৰ্ব্বাগ্রে তাহারা সৎপরামর্শ পাইত। আত্মীয় কুটুম্বের কোন ক্রিয়াকলাপ হইলে মথুরানাথ না গেলে যেন তাহা অপূর্ণই রহিত। অভ্যাগত অতিথি কদাপি তাহার গৃহ হইতে পরাজুখ হয় নাই। গ্রামে তিনি একটি সাপ্তাহিক ধৰ্ম্মসভা স্থাপন করিয়া তাহাতে ধৰ্ম্মালোচনা করিতেন, তাহাতে গ্রামবাসীর প্রভূত উপকার সাধিত হয়। এই সমস্ত কারণে মথুরানাথ লোকের স্মৃতিপথারূঢ় হইয়া রহিয়াছেন। বিগত ১৩০৪ বাংলার ফালুন মাসে তিনি পরলোকগমন করেন। মহাদেব পঞ্চানন সংসারশক্তি-বিরহিত ভাবে কিরূপে সংসারে অবস্থিতি করা যাইতে পারে, বাণিয়াচঙ্গের গৌতমগোত্রী মথুরানাথ তাহা দেখাইয়া গিয়াছেন, এই সাধক মহাত্মার পুত্ৰই মহাদেব। মহাদেবের জন্মের পূৰ্ব্বে তাহার পিতামাতা যে রূপে দেব-দেব মহাদেবের কৃপা-নিদর্শন অনুভব করেন, তাহা “বংশবৃত্তান্ত” বর্ণন প্রসঙ্গে পূৰ্ব্বে বর্ণিত হইয়াছে। মহাদেব যখন ভূমিষ্ঠ হন, তখন শিশুদর্শনে গিয়া সকলেই দেখিতে পান যে, শিশুর গলদেশ বেষ্টন করিয়া একটা সপও জাত হইয়াছে এই সপটি জাত হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই একদিকে চলিয়া গিয়াছিল। কিন্তু কিছুদিন পরে একদিন কাৰ্য্যান্তর হইতে তাহার মাতা ফিরিয়া আসিয়া দেখিতে পান যে, সেই সপটি আসিয়া শিশুর গলদেশ বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে। মাকে দেখিয়া সাপটি পলাইতে চাহিল ও তিনি তৎক্ষণাৎ কিছু দুগ্ধ আনিয়া দিলে তাহা পান করিয়া চলিয়া গেল। ইহার পর আর একদিন এইরূপ হইল, তৃতীয় দিনে মথুরানাথ স্বয়ং এই দৃশ্য দেখিয়া বিস্মিত হন ও সাপটিকে ধরিয়া দুগ্ধ খাইতে দেন। ইহার পর আর ইহাকে দেখা যায় নাই। এই সকল কাণ্ড দর্শনে মথুরানাথ পুত্রের নাম মহাদেব রাখেন। মহাদেব যখন ক্ৰন্দন করিতেন তখন কালী কালী বলিলে ক্ৰন্দন ত্যাগ করিতেন। কিঞ্চিৎ বড় হইলে কালীমূৰ্ত্তি গঠন করিয়া খেলিতেন—ফুল ও দুৰ্ব্বাদ্বারা পূজা করিতেন। একদিন তাহার মাতা শিবপূজার নৈবেদ্যাদি সম্মুখে রাখিয়া দ্যান করিতেছেন, এমন সময় পুত্র সম্মুখের নৈবেদ্যটি নিয়া আত্মসাৎ করিয়া ফেলিলেন। দেবোদিষ্ট নৈবেদ্য হরণ করায়, পুত্রের ভবিষ্যৎ অনিষ্টাশঙ্কায় মাতা ভীত হইলেন; কিন্তু পুত্রকে তজ্জন্য তিনি তাড়না করিলেন না—তাড়না করিতে ইচ্ছাও হইল না।