পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পঞ্চম বৎসরে মহাদেবের বিদ্যারত্ব হয়, তাহার পাঠে অভিনিবেশ ও প্রখর স্মৃতিশক্তি দর্শনে শিক্ষক ও ছাত্র সকলেরই মনে ধারণা হয় যে, মহাদেব অসাধারণ পণ্ডিত হইবেন। তাহাদের অনুমান অসত্য হয় নাই, অষ্টাদশ বৎসর বয়ক্রম পূর্ণ না হইতেই তিনি সমুদয় শাস্ত্রাঙ্গে সুশিক্ষিত হইয়া “পঞ্চানন” উপাধি লাভ করেন। উপাধি লাভের পরেই তিনি সংখ্যাদর্শনের একখানা ভাষ্য লিখেন এবং তদারা ভারতীয় দার্শনিক সমাজে পরিপূজ্য হন। তৎপরে তিনি কয়েকটি গৰ্ব্বিত পণ্ডিতকে বিচারে পরাজিত করেন। পরে তাহার দৈবশক্তির কথা লোকমুখে প্রচারিত হইয়া পড়ে, তৎশ্রবণে অতঃপর কোন পণ্ডিতই তৎসহ বিচারে সাহসী হইতেন না। মহাদেবের দৈবশক্তি তাহার জন্মজাত ছিল; কোনরূপ সাধন-লব্ধ ছিল না, তিনি যখন পাঠদশায় ছিলেন,তখন এবং তাহার পূবর্ব হইতেই ঘটনা বিশেষে ইহা প্রকাশিত হইয়া পড়িয়াছিল। তদ্বংশীয় শ্রীযুক্ত সারদানন্দ ভট্টাচাৰ্য মহাশয় আমাদিগকে যে বিবরণ প্রদান করিয়াছিলেন, তাহাতে লিখিত আছে যে, বেজোড়ার রমানাথ বিশারদ ইহার সহপাঠী ছিলেন।” উভয়ে একদা গুরুগৃহ হইতে বাড়ী আসিতে ছিলেন, একটা বন্যপথ পার হইবার কালে রমানাথ কিঞ্চিৎ অগ্রে ছিলেন, তিনি হঠাৎ একটি ব্যাঘ্ৰ কত্ত্বক আক্রান্ত হন। কিন্তু ব্যাঘ্র তাহার কোন অনিষ্ট করিতে পারে নাই। ইত্যবসরে মহাদেব তথায় আসিয়া পড়িলে, তাহাকে দর্শন মাত্র ব্যাঘ্ৰ চলিয়া যায়। এই ব্যাপার দৃষ্টে রমানাথ মহাদেবকে জিজ্ঞাসা না করিয়া ক্ষান্ত থাকিতে পারিলেন না যে কেন তাহাকে দেখিয়াই ব্যাঘ্ৰ মাজ্জারবৎ নিরীহভাবে চলিয়া গেল। উত্তরে মহাদেব বলেন যে, তন্ত্রবিদ্যায় আরও অগ্রসর হইলে তিনি স্বযংই ইহা প্রত্যক্ষ করিতে পারিবেন। তাহার পরে মহাদেব ও রমানাথ উভয়ে একত্রে এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসী সমীপে উপস্থিত হন। সন্ন্যাসী বিশারদকে দেখিয়াই বলিয়া উঠেন—“বৎস, তুমি স্বনামধন্য পুরুষ, কিন্তু তোমার মৃত্যুর আর বিলম্ব নাই।” এই বলিয়া তিনি র্তাহার মৃত্যুর দিন নির্দেশ করিয়া বলিয়া দিলেন। এতৎশ্রবণে মহাদেব কিয়ৎক্ষণ নিস্তব্ধ থাকিয়া বলিলেন—“মহাশয়! ঐ সময় প্রকৃতপক্ষে উহার মৃত্যু ঘটিবেক না, মৃতবৎ হইলেও পরে বাচিয়া উঠিবেন।” মনে কি জানি ভাবতরঙ্গ উঠিল, তিনি চাহিতে চাহিতে মূচ্ছিত হইয়া পড়িলেন। মুচ্ছভঙ্গের পর বিশারদকে বলিলেন—“বৎস, তোমার বন্ধুটিকে সামান্য মনে করিও না, সাক্ষাৎ মহাদেব বলিয়াই জানিও।” মহাদেব ও বিশারদের মধ্যে প্রগাঢ় প্রণয় ছিল, এই প্রণয় চিরদিন অক্ষুন্নই ছিল; বিশারদের জ্যৈষ্ঠপুত্রের সহিত মহাদেবের দুহিতার পরিণয় সম্পাদিত হওয়ায় উভয় পরিবারের ঘনিষ্ঠতা বদ্ধিত হইয়া উঠিয়াছিল। মহাদেব সুরাপান মহাপাপ জ্ঞান করিতেন; এমন কি, পূজাদি উপলক্ষে মন্ত্রপূত সুরাপানেও তিনি পক্ষপাতি ছিলেন না। তিনি বলিতেন, সুরাপানে প্রতি সহস্রে একব্যক্তি “কুলকুণ্ডলিনী” জাগাইতে ১০৪ এই প্রবন্ধে বিশারদ সম্বন্ধীয় যে যে কথা লিখিত হইয়াছে, তাহাও উক্ত বিবরণ প্রদাতার প্রেরিত। কিন্তু বিশারদ বংশীয়গণ উহা সৰ্ব্বাংশে স্বীকার করেন না। বিশারদের বিবরণ অতঃপর কথিত হইবে।