পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৯৮ পারে কি না সন্দেহ, কিন্তু ৯৯৯ ব্যক্তিই নিশ্চিত নরকের পথে ধাবিত হয়; এমত স্থলে ইহা সৰ্ব্বথা পরিত্যজ্য। এ সম্বন্ধে বহুতর সুরাপক্ষপাতী পণ্ডিতকে তিনি বিচারে পরাস্ত করিয়াছিলেন। তাহার পৈত্রিক শিষ্য সংখ্যা প্রায় দ্বিসহস্রাধিক ছিল, তিনি সুরাপানের ঘোরতর প্রতিবাদী হওয়াতে ইহাদের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়। তাহার শাস্ত্রীয় বিচারের প্রণালী অতি সুন্দর ও সরল ছিল, শাস্ত্রার্থ জটিল করিয়া প্রতিবাদীর পরাভব করা অপেক্ষা শাস্ত্রের জটিল স্থলের সরল মীমাংসা করিতেই তাহার অত্যাগ্রহ লক্ষিত হইত; তিনি বিনা কারণে পাণ্ডিত্য প্রদর্শনে একান্ত অনিচ্ছুক ছিলেন, সহজে বিচারবিতর্কে বৃত হইতে চাহিতেন না; শেষটা শাস্ত্র বিচারে যাইতেন না ও ভালবাসিতেন না; বিচারবিতর্ক ত্যাগ করিয়া অনুষ্ঠানে নিষ্ঠা প্রদর্শন করিতেন। তিনি কালীভক্ত ছিলেন; শেষকালে গৃহে থাকিয়া কালীভজনা করিয়া সমাধিতে প্রচুর আনন্দ উপভোগ করিতেন। একদিন কালীস্তুতি করিতে করিতে সমাধিস্থ হন, সে সমাধি আর ভাঙ্গে নাই। মহাদেবের জীবনে অনেক অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হইয়াছিল, তদ্‌ষ্টে লোকে তাহাকে দেবাদিদেব মহাদেবেব অবতার জ্ঞান করিত। মহেন্দ্রনাথ দে মহেন্দ্রনাথ শ্রীহট্টের অন্তর্গত জগৎশ্রী গ্রামবাসী কায়স্থকুলোদ্ভব স্বগীয় দেওয়ানজী দোলগোবিন্দের পুত্র। মহেন্দ্রনাথ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন প্রতিভাবান ছাত্র ছিলেন, গণিত শাস্ত্রে ইহার ন্যায় কৃতীছাত্র এ জেলায় বড় খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। মহেন্দ্রনাথ যোগ্যতার সহিত বিশ্ববিদ্যালযের শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া এম, এ, বি এস সি, উপাধি ধারণ করিয়া দেশে আসেন। তিনি নিজেব স্বাৰ্থ বা অর্থচিন্তায় বিব্রত না হইয়া দেশে যাহাতে জ্ঞানের প্রসার প্রবৃদ্ধি হয়, তৎপক্ষে স্বয়শক্তি নিযোগ করেন। এজন্য তিনি উচ্চ বেতনের কোন রাজকাৰ্য্য গ্রহণ না করিয়া শিক্ষাদান কাৰ্য্যে নিযুক্ত হন। দেশের লোকের সৎশিক্ষা ও জ্ঞান প্ৰবৰ্দ্দনের জন্য তদৎ কয়েকটি উন্নত হৃদয় যুবকের উদ্যম ও উচ্চ আকাঙক্ষা জন্মিয়াছিল। এই সুন্দর সঙ্কল্পের আভাস “প্রভাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত একখানি পত্র পাঠে * জানা যায়। সে পত্রের প্রথমে লিখিত ছিল—“যে শ্রীহট্টে শ্রীচৈতন্য, রঘুনাথ শিরোমণি, রাজযোগী দিব্যসিংহ, বৰ্ত্তমান যুগের চাণক্যস্বরূপ নৃসিংহ প্রভৃতি জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, রাজনীতিতে, ধৰ্ম্মনীতিতে ভাষাতত্ত্বে, জ্ঞানবত্তায় যে শ্রীহট্ট একদিন বাঙ্গালায় যুগান্তর উপস্থিত করিয়াছিল— আমরা সেই শ্রীহট্টে জন্মগ্রহণ করিয়া যদি আবার এই বিংশ শতাব্দীর বাঙ্গলদেশে জ্ঞানে ও প্রতিভায় আগুন জ্বালাইয়া না দিতে পাবি, তবে আমাদের জঙ্গলে জন্ম গ্রহণ করাই ভাল হইত।” মহেন্দ্রনাথ প্রমুখ যুবকদের আকাঙক্ষ এই কয়েক পংক্তি পাঠেই বুঝিতে পারা যায়। কিন্তু মানুষেব সাধু ইচ্ছ সৰ্ব্বত্র পূর্ণ হয় কৈ ? মহেন্দ্রনাথ সংস্কৃত, বাঙ্গালা, ইংরেজী ও ফরাসী ভাষা জানিতেন। লাটিন ও গ্রীক ভাষায়ও তাহার কিছু কিছু জ্ঞান ছিল; তিনি মৃত্যুর পূৰ্ব্বক্ষণে র্তাহার “প্রিয় ল্যাটিন ও গ্রীক পুস্তকের নাম করিয়া দিন দিন বলিয়া তীব্রস্বরে চীৎকাব করিয়াছিলেন।” ১০৫. কবিমগঞ্জ হইতে প্রকাশিত “প্রভাত’ পত্র—১৩১৮ বাং ১ম পক্ষ, “কতিপয় যুবকের উচ্চ আকাঙ্খা” প্রবন্ধ।