পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৩ দ্বিতীয় অধ্যায় : রঙ্গদ বংশ বর্ণন 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত সভাজয় করিয়া “সবস্ত্র বিদায়” প্রাপ্ত হইলেন “ শ্রীহট্টের গঙ্গারাম দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত ছিলেন। শ্রাদ্ধ অবসানে পুঠিয়ারাজ গঙ্গারামকে ছাডিয়া দিলেন, নিজ সভায় সভাপণ্ডিতরূপে রাখিতে বিশেষ যত্ন করিতে লাগিলেন। গঙ্গারাম রাজানুরোধ ত্যাগ করিতে না পারিয়া কিছুকাল পুঠিয়া রাজধানীতে অবস্থিতি করিলেন। এই সময়ে তিনি যোগানুষ্ঠানে নিৰ্দ্দিষ্ট সময় নিভৃতে অবস্থিতি করিতেন, কাজেই রাজসমীপে থাকিতে ইচ্ছ না থাকায়; দেশে আসিবার অভিপ্রায় করিলেন ও দেশে চলিলেন। তিনি নৌকাযোগে আসিয়াছিলেন। বাড়ীতে আসিয়া যখন পৌছলেন, তাহার ভ্রাতৃবর্গ এবং আত্মীয় স্বজন কর্তৃক তিনি পরম আদরে গৃহীত হইলেন। ১৩ “কত শত পণ্ডিত সমস্ত পবে জ্ঞানী। পরাজিত হৈয়া গেল পবাজয় মানি।। বস্ত্রের সহিত সেই মুদ্রা সমুদয। প্রাপ্ত হন শিবোমণি সভা করিয়া জয।”—শ্রীচৈতন্যবত্বাবলী। ধীবরের গল্প শ্রীচৈতন্যরত্নাবলীতে গঙ্গারামের প্রসঙ্গে কযেকটি অদ্ভুত উপাখ্যান উল্লেখ আছে, তাহা বংশ বৃত্তান্তে সংযোজন যোগ্য না হইলেও উপাখ্যানাংশে মন্দ নহে। যখন তিনি নৌকাযোগে অসিতেছিলেন, হবিগঞ্জের সন্নিকটে উপস্থিত হইল দেখিলেন যে এক ধীবর মাথায় মৎস্যের ঝাকা লইয়া যাইতেছে। পণ্ডিতেব অভিপ্রায় মত নাবিক মৎস্যের প্রকাব জিজ্ঞাসিলে ধীবর অবজ্ঞা সহকারে উত্তব করিল যে ইহা চিতল কাতল, রাক্ষণের ক্রযযোগ্য “ইচা বৈচা” নহে। এই সময উচ্চট খাইযা ধীবর ভূপতিত হইল, মৎস্যও মাথ হহ ত পড়িয়া গেল,বিস্মিত ধীবর ও তৎপত্নী চাহিয়া দেখে যে নাছ-গুলি “ইচা বৈচা” অর্থাৎ ক্ষুদ্র মৎস্য পরিণত হইয়া গিফাছে! এ অলৌকিক ব্যাপার দৃষ্টে তথায বহুলোক একত্রিত হইযা ইহা নৌকারোহীর যোগবলেব ফল বলি-ই নিদ্ধারণ কবিল। তাহাবা তখন নৌকার অনুসরণে চলিল, কিন্তু তখন বহুদূরে চলিযা যিাছে। প্রত্যক্ষ প্রদর্শন ইন্দেশ্বর পরগণাস্থ আনন্দকিশোব ভদ্র, শিরোমণিব পিতৃ শিষ্য ছিলেন। একবাব তিনি মহাষ্টমীতে আদ্যাশক্তির অৰ্চনাব অভিপ্রায়ে শিরোমণির নিকট পত্র দেন, কিন্তু শিবোমণি এ পত্রের কথা ভুলিয়া যান। তখন ও বর্ষাজলে, খাল বিল জলপূর্ণ—নৌকা ব্যতীত চলিবার ক্ষমতা নাই। সেই মেঘাচ্ছন্ন অষ্টমীদিনে সন্ধার সময হঠাৎ তাহার নিমন্ত্রণের কথা স্মৰণ হইল,এখন উপায? তবে কি পূজা পণ্ড হইবে শিবোম- তখন কওঁব্যাকৰ্ত্তব্য জ্ঞান থাকিল না, উন্মত্তবৎ তিনি ইন্দেশ্বর যাত্রা করিলেন ও মধ্যরাত্রে পিতৃশিয্যের গৃহে পৌছিলেন , সকলেই বিস্ময় সহকারে মনে করিল যে সন্ধায় সময যাত্রা কবিযা বিনা নৌকায় বুরুঙ্গা হইতে তিনি কোন অলৌকিক শক্তির বলেই সে জল প্লাবিত পথ অতিক্রম করিয়া আসিতে সমর্থ হইযাছেন। যাহা হউক, তিনি অনতিবিলম্বে দেশসমূহে প্রবিষ্ট হইয়া অল্পকাল মধ্যেই পূজা সমাধা করিলেন। কৰ্ম্মকৰ্ত্তা ইহাতে কিঞ্চিৎ ক্ষুন্ন হইলেন, রীতিমত পূজা হইয়াছে বলিয়া বিশ্বাস হইল না। শিরোমণি ইহা বুঝিতে পারিলেন ও আনন্দ ভক্ত-মহিমা প্রকাশের জন্য ভক্তবৎসলার অঘটন ঘটান কিছু আশ্চয। নহে;দেবলীলা তো আর মানবীয কাৰ্য নহে, অলৌকিকত্বই ইহার আদি অস্ত ও মধ্য। কিন্তু সঞ্চ, ই যে এমন ঘটনা ঘটিলে, কিশোরকে জিজ্ঞাসা কবিলেন যে তাহার মন"কথা"(বিরক্ত) কেন? আনন্দ কিশোব তখন সাক্ষবে বললেন-—“প্রভো পুষ্পদুৰ্ব্বাদ যথা স্থানে সজ্জিত রহিয়াছে, আপনি গৃহে প্রবেশ করিযা আমনি আসিলেন, পূজা হইল কৈ ?” তখন আবক্তনেত্রে "প্রত্যক্ষদেখ” বলিয়া শিবোমণি কুশাঘাতে দেবীর চরণ বিদীণ কাবলেন,আব প্রতিমাদেহ হইতে রক্ত স্রোতঃ বহিল!! আনন্দকিশোব হায হায় করিতে লাগিলেন, কিন্তু শিবোমণি তাহার গুহে আব তিষ্টিলেন না, অবিশ্বাসিন! অদ্যাবধি আমাদেব তাজ্য হইলি” বলিয়া চলিয়া আসিলেন। সেই রাত্রেই আনন্দকিশোরের গুহ দগ্ধ হইয়া গেল-অচিব কাল মধ্যেই তাহাব স্ত্রীপুত্রাদির মৃত্যু হইল, গৃহ শ্মশান হইল। তাহা কখন শ্বাস কৰা যায না। কারণ অলৌকিক দেবলীলা কোনবীপ নিযমে শৃঙ্খলিত নহে। অমাবস্যায় চন্দ্র প্রদর্শনের ন্যায় এই ঘটনাও শ্রীহট্টের বহুপবিবাবে কীৰ্ত্তিপ্রকাশ কল্পে ঘোষিত হইযা থাকে। এক একটি প্রধান ঘটনাকে যে অনেকেই স্বাযত্ত করিতে যত্ন করিয়া থাকেন, এস’ল টনা তাহাক প্রমাণ। এই ঘটনাটিও একাধিক স্থলে উল্লেখ করিব ললিহা এস্থলে বর্ণন কনিলাম ।