পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৫ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত একবার পঞ্চখণ্ডের স্বগীয় বাসুদেবের রথটানাকালে দৈববশতঃ টানের বেগে বথের কিছুটা গড়াইয়া, যে দীঘীর তীরে রথটানা হইতেছিল, উহার উপরে চলিয়া যায় কি উপায়ে রথকে ঠিক রাখিয়া যথাস্থানে আনা যাইবে যখন সকলেই এই পরামর্শে ব্যস্ত ছিল, তখন রঘুরাম কাহাকেও কিছু না বলিয়া জলে নামিয়া, ঠেলিয়া একাই রথ উঠাইয়া দেওয়াতে দর্শকমাত্রই বিস্মিত হইয়া রহিল। একদা সন্নিকটবৰ্ত্তী গোলাপরায়ের বাজারের অংশ লইয়া দুই বিরুদ্ধ দলের হাঙ্গামা উপস্থিত হয়, রঘুরাম একপক্ষে উপস্থিত হইয়া, পাশ্ববর্তী বঁাশ ঝাড় হইতে একটা বরুয়া বাশ একটানে উৎপাটিত করিয়া লইলে বিপক্ষগণ তাহার পরাক্রমের পরিচয় পাইয়া পলাইয়া প্রাণ বাচাইয়াছিল। রঘুরামের যে জমিজমা ছিল, তাহার রাজস্ব না দেওয়াতে র্তাহাকে শ্রীহট্টে নেওয়া হয়, কিন্তু রঘু রাজস্ব পরিশোধ করিতে অপারগ হইলে, তখনকার একতর ভীষণ দণ্ড, তক্তার নিকট চাপ দিলেও তাহার কোন কষ্টই হয় নাই। তাহার বলের পরিচয় পাইয়া কর্তৃপক্ষ বিদেশাগত এক “পলওয়ানের” সহিত তাহাকে “কুস্তি’ করিতে বলেন, কিন্তু সেই ব্যক্তি ইহার শরীরের গঠন ও দৃঢ়তা দৃষ্টে শহর ত্যাগ করিয়া চলিয়া যায়। কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হইয়া রঘুর অধিকৃত ভূমির রাজস্ব রেহাই দেন। রঘুনাথের ভ্রাতার নাম ছিল রামনারায়ণ, ইহার ৭ম পুরুষে রায়চাদের উদ্ভব, রায়চাদের সময়ে বঘুনাথের অজ্জিত সম্পত্তি কিছুই ছিল না, রাযচাদের শ্রম ও সততামূলে অবস্থার সুপরিবত্তন ঘটে, ইহাব প্রপৌত্র রঘুনাথের কথা প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। রতনমণি সাহাজী রতনমণি সাহাজী শ্রীহট্টশহরবাসী সাহুবংশীয় একজন ব্যবসায়ী; ইহার চরিত্র অতি মাজ্জিত ছিল। সাধারণতঃ লোকের বিশ্বাস “বাণিজ্য যে করে তার সত্য কথা নাই।” ইদানীং অনেকক্র তাহা দৃষ্ট হইলেও পূৰ্ব্বে ব্যবসায়িবর্গের ব্যবহার প্রায়শঃ ইহার বিপরীত ছিল। এজন্য “মহাজন” ও “সাধু” ইত্যাদি সততাসূচক নাম প্রাপ্ত হন। রতনমণি যদিও বড় বেশীদিনের ব্যক্তি নহেন, তথাপি তাহার চরিত্র পূবর্বকার বণিশ্বর্গের ন্যায় নিৰ্দ্দোষ ও সততাময় ছিল। রতনমণি পরম সাধু ছিলেন, কৃষ্ণনাম শ্রবণমাত্র তাহার চক্ষু ছল ছল করিত, কৃষ্ণের মহিমাসূচক কোন সঙ্গীত শুনিলে চক্ষে জল আসিত। শ্রীভগবানের প্রতি কিরূপ আশক্তিতে এ ভাব জন্মে, সংসারের কীট আমরা তাহার কি বুঝিব? যে কৃষ্ণ নাম লয়, রতনমণির গৃহে তাহার অবারিত দ্বার ছিল। pf ঢাকাদক্ষিণের শ্ৰীমহাপ্রভূবিগ্রহ দর্শনে তাহার অত্যন্ত অনুরাগ ছিল, প্রতিবৎসর বারুণী, ঝুলন ও রথে তিনি নিয়মিতরূপে যাইতেন। তদ্ব্যতীত যখনই কোন একটা উৎকৃষ্ট ফল পাইতেন, অমনি তাহা লইয়া শ্ৰীমহাপ্রভুকে দিতে আসিতেন। তখন পরিপুষ্ট পীতবর্ণ কদলী, কখন বা সরস সুপক্ক আম্র, কোল দিন একটা বৃহৎ কায়ফল (পেপে) লইয়া ঢাকাদক্ষিণে যাইতে প্রায়ই র্তাহাকে দেখা যাইত। একবার রথের পূৰ্ব্বে তিনি বৃন্দাবনে গিয়াছিলেন। সেবারে রথের দিন, ঢাকা দক্ষিণে র্তাহার যাওয়া হইল না, মনে বড়ই অশান্তি উপস্থিত হইল। রথ হইতে ঠাকুর না নামান পৰ্য্যন্ত তিনি অভুক্ত থাকিতেন; এবার সে নিয়মে অভুক্ত অবস্থায় ঠাকুর তুলার নিৰ্দ্দিষ্ট সময়ে তিনি তুলসী তলায় গিয়া বসিয়া রহিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে তাহার ভাবের ঘোর ভাঙ্গিয়া গেল, ত্রস্তভাবে “আহা কি