পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১২৬ শ্রীহট্টে থাকিতে পারিলেন বলিয়া সুখী হইলেন। তিনি রন্ধনাদি করিয়া সকলকে খাওয়াইয়া যে একটু সময় পাইতেন, তাহাতেই স্কুলের নিদিষ্ট পাঠ অভ্যাস করিতেন, এইরূপে ২১ বৎসর বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া ১০ টাকা বৃত্তি প্রাপ্ত হন (১৮৭৬ খৃঃ)। বৃত্তি পাইয়া তিনি কলিকাতায় গিয়া মেট্ৰপলিটন ইনষ্টিটিউশনে ভৰ্ত্তি হন। যে দুই বৎসর বৃত্তি ছিল, এই বিদ্যালয়েই সুখ্যাতির সহিত অধ্যয়ন করেন। র্তাহার পর কলিকাতায় থাকার তাহার কোন সুবিধাই হইল না, তখন বিমৰ্ষভাবে কলিকাতা ত্যাগ করিয়া রাধানাথকে আসিতে হইল; পড়িবার সুযোগ ঘটিল না বলিয়া রাধানাথ বড়ই দুঃখিত হইলেন, মনে মনে সঙ্কল্প করিলেন যে যতদিন বাচিবেন—দেশের দরিদ্র ছাত্রদের পাঠের অসুবিধা দূরীভূত করিতে চেষ্টা করিবেন। বলিতে ভুলিয়াছি যে তিনি কলিকাতায় থাকাকালেই কলিকাতা প্রবাসী শ্রীহট্টের মনস্বী ছাত্রবৃন্দ কর্তৃক স্ত্রীশিক্ষাবিধায়িনী “শ্রীহট্টসম্মিলনী’ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতৃবর্গ মধ্যে রাধানাথ অন্যতম ছিলেন। সরল মনে কোন জনহিত-জনক শুভ সঙ্কল্প করিলে মঙ্গলময় ভগবানই সে সৎকার্য্যের সহায় হইয়া থাকেন। রাধানাথ যখন শ্রীহট্টে আগমন কবেন, তখন “মুফতি স্কুল নামক শ্রীহট্টের একটি ইংরেজী বিদ্যালযে উঠিযা যাইতেছিল, রাধানাথের সতীর্থ স্বদেশবৎসর শ্ৰীযুত বিপিনচন্দ্র পাল ও শ্ৰীযুত রাজচন্দ্র চৌধুরী তৎকালে শ্রীহট্টে সমুপস্থিত হইয়া (১৮৮০ খৃঃ ৫ই জানুয়ারীতে) মুফতি স্কুলের ছাত্রবর্গ লইয়া “শ্রীহট্ট নেশনেল স্কুল” স্থাপন করেন। বিপিনবাবুর উদ্যোগে এই সময়ে “পরিদর্শক” নামক সংবাদপত্র প্রচারিত হইতে আরম্ভ হয়। তিন মাস কাল মধ্যেই স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ২৫০ জন হয়, এই ভাবে কিছুকাল স্কুল পরিচালনা করিল নিঃসস্বল যুবকদের অর্থাভাব উপস্থিত হইল, কিন্তু তাহদের “মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পতন’ পণ ছিল। কঠোর পরিশ্রমে কিছুকাল মধ্যেই বিপিন বাবুর স্বাস্থ্য ভঙ্গ হওয়ায় তিনি কলিকাতা যাইতে বাধ্য হইলেন, অপরেরাও তাহার অনুসরণ করিতে উদ্যত হন; যখন স্কুলের অবস্থা এইরূপ শঙ্কটাপন্ন, সেই সময়েই মহাপ্রাণ রাধানাথ কপদক শূন্য নিঃসম্বল হইলেও অগ্রসর হইলেন ও এই দুইটি ব্যযসাধ্য গুরুভার স্বইচ্ছায় নিজ মাথায় তুলিয়া লইলেন। কিন্তু অর্থাভাবে অচিরেই তাহাকে বিপন্ন হইতে হইল, তখন “দেশ হিতৈষণায় সমধিক অগ্রণী” স্বগীয় জয়গোবিন্দ সোম মহাশয়ের উপদেশ ও সাহায্য তিনি বিশেষ উপকৃত হন। জয়বাবু কলিকাতা হইতে দুইজন উপযুক্ত শিক্ষক প্রেরণ করিলেন, রাধানাথবাবু স্বয়ং ২য়শিক্ষকের কাৰ্য্য গ্রহণ করেন। তদ্ব্যতীত জয়বাবুর জ্যেষ্ঠভ্রাতা রেভারেণ্ড সনাতন সোমও শিক্ষাদানে যোগ প্রদান করেন। রাধানাথবাবু ও সনাতনবাবু এক কপদকও বেতন লইতেন না। রাধানাথবাবুর স্কন্ধে স্কুল ব্যতীত পরিদর্শকের ভারও ন্যস্ত হইয়াছিল বলিয়াছি, এ দুইটি কাৰ্য সুদক্ষতার সহিত সম্পাদন করিতে যে কতদূর পরিশ্রমের প্রয়োজন, তাহা সহজেই বোধগম্য হয়। ছুদিন পরে সনাতনবাবুব সহিত তাহার মতদ্বৈত উপস্থিত হয়। সনাতনবাবু ৪র্থ শ্রেণী পৰ্য্যন্ত বাইবেল পাঠের প্রবৰ্ত্তন করিতে চেষ্টা করিলে, রাধানাথ তাহার তীব্র প্রতিবাদ করেন। এই হইতে উভয়ের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত হয় এবং প্রশ্ন উঠে যে উভয়ের মধ্যে স্কুলের আধিপত্য কে গ্রহণ করিবেন ? কিন্তু তিনি ভাবেন নাই যে যিনি সমস্ত ছাত্রের হৃদয় অধিকার করিয়া বসিয়াছেন, র্তাহাকে স্কুল হইতে তাড়ান সহজ নহে।