পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৭ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ঘটনাস্রোত গড়াইয়া চলিল, একদিন যখন রাধানাথ স্কুলে আসিতেছিলেন, তখন সোম মহাশয় র্তাহাকে স্কুল আসিবার পূৰ্ব্বেই বলিলেন, “আমাদের একজনকে আজ স্কুলের সংশ্রব ত্যাগ করিয়া, বিদ্যালয় পরিচালনার পথ নিষ্কণ্টক করা কৰ্ত্তব্য।” আমনি রাধানাথ বাহিরে তাকিয়াই ছাত্রবর্গকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন “এস ছাত্রগণ! আমার বিদ্যালয় আমিই পরিচালন করিব।” ছাত্রগণ নিমেষ মধ্যে রাধানাথের পাশ্বে “কাতারে কাতারে” আসিয়া দাড়াইল রাধানাথের হৃদয় তখন আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া উঠিল; তিনি স্কুলের অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরিচালক হইলেন। ছাত্রদের প্রতি র্তাহার এরূপ স্নেহ ও সহানুভূতি ছিল যে বন্ধুহীন কোন প্রবাসী ছাত্র পীড়িত হইয়া পড়িলে তিনি স্বয়ং ঔষধ ও পথ্য লইয়া তাহার পরিচর্যার নিযুক্ত হইতেন। স্কুলের ন্যায় পরিদর্শক পত্র লইয়াও র্তাহাকে বিব্রত হইতে হইয়াছিল। সে সকল ভদ্রলোক যৌথভাবে পরিদর্শকের ব্যয় বহন করিতেছিলেন, একে একে তাহারা পৃষ্ঠভঙ্গ দেন, তখন প্রেসটি স্বগীয় দীননাথ মোক্তার মহাশয় ক্রয় করেন ও রাধানাথ চৌধুরীর অত্যাগ্রহে পরিদর্শক বন্ধ না কবিয়া প্রচারভার গ্রহণ করেন। কিন্তু ইহাতে অর্থক্ষতি হইতেছে দেখিয়া কিছুদিন মধ্যেই তিনি পরিদর্শক বন্ধ করিতে উদ্যোগ করেন। তখন রাধানাথ স্বয়ং ইহার মুদ্রণব্যয়ভারও গ্রহণ করেন। কেবল দেশের হিত কল্পেই জানিয়া শুনিয়া এইরূপ অর্থক্ষতি সহ্য করিতে তিনি অগ্রসর হন। রাধানাথের আর্থিক আয় যে বড় বেশী ছিল তাহা নহে; কিন্তু তাহার উদ্দেশ্য সৎ ছিল এবং প্রবল সৎসাহস ছিল। অল্প দিনেই রাধানাথ বুঝিতে পারিলেন যে নিজের প্রেস না হইলে এইরূপে পরিদর্শকের প্রাণ বাচাইয়া রাখিতে পরিবেন না, তখন তিনি একটি প্রেস করিতে সঙ্কল্প করিলেন, কিন্তু অর্থ কই ? তখন তিনি পৈত্রিক সম্পত্তি পরহস্তে দিয়াও পরম প্রিয় প্রতিজ্ঞাটি পুরাইতে অভিপ্রায় করিলেন। সৎকার্য্যে র্তাহার একান্ত উৎসাহ ও আন্তরিকতা দৃষ্টে মোহিত হইয়া তদীয় ভ্রাতৃবর্গ এই সদনুষ্ঠানে তাহাকে সহায়তা করিলেন। তখন জমি বিক্রয় ব্যতীতই একটি প্রেস আনয়ন করা হইল এবং পরিদর্শক নিজের প্রেস হইতে বাহির হইতে লাগিল। রাধানাথ চৌধুবীর সময়ে শ্রীহট্ট শহরে ক্ষুদ্র বৃহৎ হিতকর অনুষ্ঠান যাহা কিছু হইয়াছিল, তাহাতেই তাহার সংশ্রয ছিল। শহরে কাহারও গৃহে অগ্নি লাগিলে সৰ্ব্বাগ্রেই তাহাকে তথায় দেখা যাইত, কেহ মোকদ্দমা করিতে আসিয়া নিরাশ্রয়ে পীড়িত হইয়া পড়িলে, রাধানাথকে তাহার শুশ্রষায় ও পরিচর্য্যায় নিয়োজিত রহিয়াছেন দৃষ্ট হইত। একদা এক রাজপুরুষ পথিপাশ্বস্থ এক রুগ্ন ভিখারীর বিনাদোষে কশাঘাত করিতে থাকেনরাধানাথ বিদ্যুৎ বেগে মধ্যে পড়িয়া সে আঘাত নিজপৃষ্ঠে লইলেন। দেখিযা লোক অবাক হইয়া চলিয়া গেলেন। একদা কলিকাতা হইতে স্টিমারে প্রত্যাগমনে কালে একটা প্রথম শ্রেণীর আরোহী ৩য় শ্রেণীর এক দরিদ্র আরোহীকে তামাক সেবনোপলক্ষে প্রহার করিতে উদ্যত হইলে, রাধানাথ বাধা দিয়া তাহাকে নিবৃত্ত করেন। ভাড়া দিতে পারলেই এখনই দরিদ্র ব্যক্তি প্রথম শ্রেণীতে স্থান পাইতে পারে ইহা স্মরণ করাইয়া দিলেন। আর একবার একব্যক্তি এক নিবের্বাধ আরোহীকে তাহার জাতি তুলিয়া গালি দেয়, রাধানাথ ইহার প্রতিবাদ করিয়া সেই উদ্ধত ব্যক্তিকে নিরস্ত করেন। তাহাকে সংবাদপত্র সম্পাদক জানিয়া সে ব্যক্তি পরে রাধানাথকে ভদ্রতার সহতি একটা “চুরট” দিতে অগ্রসর হইলে, রাধানাথ তাহা প্রত্যাখ্যান করিয়া বলেন—“যিনি একটি দুর্বল ব্যক্তিকে জাতি তুলিয়া গালি দিতে