পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৩৮ লাঠি তাহাদিগকে দিয়া তদ্বারা হাতী তাড়াইতে অনুমতি দিলেন। লোকেরা কেহই হাতী তাড়াইতে সাহসী হইল না, তখন তিনি স্বয়ং হাতীর কাছে গিয়া বলিলেন “বাবা, যে পথে আসিয়াছ চলিয়া যাও।” সাধু এই কথা যেমন বলিলেন, কথিত আছে যে হাতীটা আমনি চলিয়া গেল। সাধুর ইচ্ছাশক্তির ও আদেশের ক্ষমতা দেখিয়া দর্শকগণ ভক্তিপূতচিতে র্তাহাকে প্রণাম করিল ও তদবধি তাহাকে সকলে “মুনিগোসাঞি” বলিয়া আখ্যাত করিল। মুনিগোসাঞি শেষটা বসন পরিধান করিতেন না, দিনের বেলায় একখানা মোটা গিলাপ গায় দিয়া রাখিতেন, ইহা হাঁটু পর্যন্ত পড়িত, রাত্রে কিছুই গায় থাকিত না, ও উলঙ্গাবস্থায় শ্মশানে গিয়া জপ করিতেন। ত্রিপুরাধিপতি মহারাজ গঙ্গাধর মাণিক্যের বিশেষ প্রার্থনা তদত্ত একটা বড় ঝারি (গড়) তিনি গ্রহণ করিয়াছিলেন ও তাহা ব্যবহার করিতেন। ইহার জল, সকলের সকল প্রকার রােগে, প্রার্থীকে ব্যবহার করিতে দিতেন ও তাহাতেই তাহারা নিরাময় হইত। কখন কখন তাহাকে পদ্মপত্রে উপবিষ্ট হইয়া জপ করিতে দেখা যাইত। তখন তাহার দেহ অসম্ভব লঘু হইয়া যাইত। ইহা শুনিতে অসম্ভব বোধহয় বটে, কিন্তু সাধকপুরুষদের ব্যবহার পক্ষে কোনরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিতে যাওয়া সুযুক্তিসিদ্ধ বোধ হয় না।** রুদ্রদেব ১০৫ বৎসর জীবিত ছিলেন, ১৮৩৮ খৃষ্টাব্দে জীবিত তিনি দেহত্যাগ করেন। লবকিশোর দাস ত্রিপুরার অন্তর্গত ধরমণ্ডলের ধরবংশীয় একব্যক্তি পূৰ্ব্বে পঞ্চখণ্ডে আগমন করিয়াছিলেন, তিনি শিকারে গিয়া সন্নিকটবৰ্ত্তী গ্রামবাসী সাহুকুলোৎপন্না রূপ লাবণ্যশীলা এক বালিকাকে জল আহরণে আসিতে দেখিতে পান। তিনি তৃষ্ণাতুর হইয়া সেই জলাশয়েই জল পান করিতেছিলেন। তিনি বালিকার রূপে মোহিত হন ও তাহাকে বিবাহ করিয়া এদেশে থাকিয়া যান। তাহার নারায়ণ ও বিষ্ণু নামে দুই পুত্র হয়, যথাক্রমে ইহাদের যাদব ও বলরাম নামক দুইটি সুকৃত তনয় জন্মে; তাহাদের আবিষ্কৃত খামার ভূমি “যাদব বলাইর কালাইওরা” নামে আজিও চিহ্নিত হইয়া থাকে, এবং তাহাদের বংশ “যাদব বলাইর বংশ বলিয়া পরিচিত”। বলরামের বৃদ্ধ প্রপৌত্রের নাম লালচন্দ্র ও মুলুকচন্দ্র; লালচন্দ্রের পুত্ৰই লবকিশোর। লবকিশোর যৌবনে কাছাড় জিলাব লক্ষ্মেীপুর থানার পোলিশের দারোগা ছিলেন। পোলিশের স্বভাবসিদ্ধ গুণাবলী যে তাহাতে ছিল না, এমন নহে। তিনি একজন তেজস্বীপুরুষ ছিলেন। “ঈশ্বর মঙ্গলময়” এ কথায় তাহার একান্ত বিশ্বাস ছিল, এজন্য বিপৎপাতে তিনি ভরসাশূন হইতেন না, এবং সৰ্ব্বদাই এই বিশ্বাস র্তাহাকে সদানন্দ রাখিতে পারিত। একদা এক দরিদ্র নিজের অজ্জিত অর্থ দারোগার চরণে উৎসর্গ করিয়া বলিয়াছিল যে অনর্থক অর্থের পরিমাণ এইরূপেই হইয থাকে, এই বাক্যটিতে র্তাহার আত্মদৃষ্টি উন্মোচিত হয়, কার্য্যে আর মনোযোগ থাকিল না, এব: তদবধি পদে পদেই ত্রুটি লক্ষিত হইতে লাগিল। এই সময়ে জিরিঘাট চা বাগানের মেনেজার সাহেবের প্রায় আট সহস্র টাকা অপহৃত হয়; লবকিশোর দুইটি চোর ধৃত করেন, অন্য এক ব্যক্তি ১৪৩, পদ্মপত্রে উপবেশনপূৰ্ব্বক জপ করিতে যাহারা বাল্যকালে দেখিযাছিলেন,এইরূপ দুই এক জন বৃদ্ধ জীবিত আছে বলিসা আমাদের বিবরণ দাতা লিখিয়াছেন।