পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৩ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত শাহ পাতা হযরত শাহ জলাল শ্রীহট্ট আগমনের অল্প পরে শাহপাতা শাহ জালালের যশঃ গৌরব শ্রবণে এদেশে আগমনপূৰ্ব্বক পং ভাদেশ্বরের অন্তর্গত দক্ষিণভাগে বাস করেন। তৎকালে তদঞ্চল জঙ্গল পুরিত ছিল, কদাচিৎ তিনি জঙ্গল হইতে বহির্গত হইয়া জেলেদের পল্লীর নিকটবৰ্ত্তী বাজারে আসিতেন। ঐ জেলে পাড়ায় এক “চণ্ডী” জাতীয়া জেলেনী তদীয় ভিক্ষাজীবী দরিদ্র স্বামীকে নানা যন্ত্রণা তো, কত সহে? একদিন স্ত্রী কর্তৃক প্রহৃত হইয়া যুবক নিজ মনে ধিক্‌কৃত হইল ও জীবনে বীতশ্রদ্ধ হইয়া হিংস্র জন্তু কত্ত্বক নিহত হইবে মানসে জঙ্গলে প্রবিষ্ট হইল। যুবক যাইতে যাইতে হঠাৎ থমকিয়া দাড়াইল। কোন হিংস্র জন্তুর সহিত দেখা হইল না, তৎপরিবৰ্ত্তে এক কস্থাধারী শীর্ণকায় সাধুকে দেখিতে পাইল; যুবক চিনিল যে, এই সাধু সেই ব্যক্তি, যাহাকে মধ্যে মধ্যে বাজারে দেখা যাইত। সাধু এক বৃক্ষমূলে একটি মৃৎভাণ্ডে ডালচাল একত্রে মিশ্রিত করিয়া রন্ধন করিতেছেন, আর ইষ্টনাম জপ করিতেছেন। যুবক মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় দাঁড়াইয়া রহিল, এদিকে সাধু মুষ্টেক অন্ন দুই পাতে পরিবেশন করিয়অ যুবককে ইঙ্গিত করিলেন। আজ্ঞাপালনে প্রবৃত্ত হইয়া যুবক ভাবিল এইবার আশা পুরিবে। সাধুর তাহার মনোভাব বুঝিতে বাকি নাই, তিনি বলিলেন “ভাই মরিবে কেন, বাড়ীতে গিয়া খোদার নাম লও, মঙ্গল হইবে।” যুবক শুনিতে শুনিতে সেই অন্নমুষ্টি খাইতে লাগিল। যুবক অনেক খাইল, আর খাইতে পারে না, কিন্তু সেই অন্নমুষ্টি তখনও শেষ হয় নাই। যুবক সাধুদত্ত অন্নের মহিমায় আশ্চৰ্য্যান্বিত হইল এবং তদীয় আদেশে বাড়ীতে চলিল। যাওয়ার কালে সাধু বলিয়া দিলেন “সাবধান যুবক, এথাকার কোন কথা লোকালয়ে ব্যক্ত করিও না, তাহা হইলে অনিষ্ট ঘটিবে।” যুবক জঙ্গলে প্রবিষ্ট হইলে সেই রণচণ্ডী তাহার জন্য চিন্তিত হইয়াছিল এবং আপনার আচরণের কথা স্মরণে অনুতপ্ত হইয়াছিল। এক্ষণে সে স্বামীকে পুনঃপ্রাপ্ত হইয়া প্রেম-গদগদবাক্যে ক্ষমা চাহিযা, সে কোথায় গিয়াছিল জিজ্ঞাসিল। পত্নীর মিষ্টবাক্য শ্রবণে যুবক মুহুর্তে সকল ভুলিয়া গেল, সাধুর নিষেধ বাণী আর তাহার স্মরণ রহিল না, সে সাধুর কথা সর্বাগ্রেই প্রকাশ করিয়া ফেলিল! সাধুবাক্যের ব্যত্যয় নাই; তৎক্ষণাৎ সে এক ভীষণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হইল ও দেখিতে দেখিতে গতাসু হইল। এই আশ্চৰ্য্য কথা পরমুহুর্তে গ্রামে গ্রামে প্রচারিত হইল, সাধুকে বাহির করিতে বহুলোক দা, কুড়ালি দ্বারা জঙ্গল আবাদ করিতে লাগিল। জঙ্গল বহুদূর পর্যন্ত পরিষ্কৃত হইল; কিন্তু কস্থাধারী সাধুকে পাওয়া গেল না। সেই স্থানের নিকটে বহুশাখাসম্বলিত একটি প্রকাণ্ড বটবৃক্ষ ছিল, একদিন হঠাৎ লোকে তাহার মূলে কস্থাধারীকে দেখিতে পাইল। সে দিন তত্ৰত জমিদার গৃহে এক উৎসব ছিল, জমিদার সাধুকে নেওয়ার জন্য লোক পাঠাইলেন। সাধু বলিলেন “আমার কাপড় নাই, আমি যাইতে পারি না”