পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৪৪ জমিদার লোকমুখে ইহা শুনিয়া ভাল কাপড় দিয়া আবার সেই ব্যক্তিকে পাঠাইলেন। সাধু কাপড় গ্রহণ করিলেন কিন্তু নিজে ব্যবহার না করিযা “বড়শীত” এই কথাটি বলিয়া অগ্নিতে নিক্ষেপ করিলেন। ভূস্বামী তখন ক্রুদ্ধ হইয়া সেই বস্ত্র চাহিয়া পাঠাইলেন, সাধু হাসিতে হাসিতে অগ্নি হইতে সেই বস্ত্রই তুলিয়া দিলেন। দগ্ধবস্ত্র পুনঃ প্রাপ্ত হইয়া ভূস্বামী বিস্মিত হইলেন। ভূস্বামী অনতিবিলম্বে সেই স্থানে স্বয়ং আগমন করিলেন, হায়! তখন কস্থাধারী দেহত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছেন!! অশ্রবিসর্জন পূবর্বক ভূ-স্বামী স্বহস্তে র্তাহাকে সমাধিস্থ করিলেন। এই সাধুর নাম পাতা শাহ! ইহার কবর এখন তথায় আছে। শাহ পেড়া পেড়া শাহ মোসলমান জাতীয় ছিলেন। পেড়া শাহের প্রকৃত নাম কি ছিল বলা যায় না। পেড়া শাহের স্ত্রী অসচ্চরিত্রা রমণী ছিল, এবং পতিকে পরিত্যাগপূৰ্ব্বক জনৈক প্রতিবেশীর সঙ্গে পলাইয়া গিয়াছিল। পেড়া শাহ পত্নীকে ভালবাসিতেন, সে র্তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলে তিনি তাহার বিবহে জৰ্জ্জবিত হন। নিকটে এক প্রৌঢ়ার বাড়ী ছিল, পেড়া তাহার কাছে কখন কখন হৃদয়ের জ্বালা প্রকাশ করিতেন। স্ত্রীর কথা কহিতে কহিতে তাহার নয়ন দিয়া জলধারা বহিত। একদিন সেই প্রৌঢ়া তাহাকে বলিল “তুমি ত স্ত্রীব জন্য কাদিতেছ কিন্তু সে দুষ্টা কি তোমায় স্মরণ করিতেছে, সে হয়তঃ এখন উপপতির সহিত রসালাপে মত্ত আছে। এত কাদিতে পারিতে যদি খোদার নামে, তবে খোদা থাকিতে পারিতেন না, তোমায় দেখা দিতেন, তোমার দুঃখ তাপ দূর করিতেন।” পেড়া স্থির হইয়া কথাগুলি শুনিলেন, দীর্ঘশ্বাস পবিত্যাগ করিয়া বলিলেন, “ঠিক বলিয়াছ, কিন্তু খোদাকে ডাকা আমার মতো গরিব কিরূপে পরিবে, পোড়া পেটই এখন বৈরী, কে আমার আহর যোগাইবে বল ?” স্ত্রীলোক বলিল—“আমি দিব, তুমি খোদার উপর নির্ভর কর।” পেড়া শাহ জঙ্গলে লুক্কাইত হইলেন, মনুষ্যসঙ্গ একবারে পরিত্যাগ করিলেন; মাত্র দিবসের মধ্যে একবার আসিয়া সেই মোসলমানীর গৃহে আহার করিয়া যাইতেন; কাহারও সহিত আলাপ করিতেন না। দরিদ্র রমণী কোন প্রকারে শাক অন্ন যোগাইত। একদিন তাহার বাড়ীতে তদীয় জামাতা আসিবার কথা ছিল, এবং সেই জন্য ভাল তণ্ডুল সংগৃহীত হইয়াছিল। ভাল তণ্ডুল দুষ্টে তিনি বধূকে সাধুর জন্য তাহা পাক করিতে বলিলে, বধু নিতান্ত অনিচ্ছার সহিত তাহা পাক করে। খাইতে আসিলে সেই তণ্ডুলের অন্ন তাহাকে দিতে আসিলে তিনি বলিলেন, “এ অন্ন খাইব না, ইহা জামাতার জন্য আনা হয়, ঠুহা আমাকে দিতে তোমার বধূর ইচ্ছা ছিল না।” পেড়া শাহা বধূর মনের কথা কিরূপে জ্ঞাত হইলেন? ফলতঃ এই ঘটনা হইতে তিনি সিদ্ধ পুরুষ বলিয়া খ্যাত হন; তিনি যাহাকে যাহা বলিতেন, তাহা সফল হইত। তিপলি বিলের ধারে জলড়বে একস্থানে তিনি বসিয়া রহিতেন। ইনি মুসিম শাহ নামক এক ব্যক্তিকে বড়ই স্নেহ করিতেন। মুসিম শাহও কালে গুরুর ন্যায় লোকের শ্রদ্ধার পাত্র হইয়াছিলেন । বহুলোক ঔষধপ্রাপ্তির আশায় তাহার কাছে যাইত। টাকা