পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৫ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পয়সাকে তিনি “চাড়” (মৃৎপাত্রাদির ভগ্ন অব্যবহার্য খণ্ড) বলিতেন। অল্প কয়েক বৎসব হইল ইহারও মৃত্যু হইয়াছে। শিবচন্দ্র ন্যায়পঞ্চানন শিবচন্দ্র ন্যায়পঞ্চাননের জন্মভূমি বাণিয়াচঙ্গ। বাণিয়াচঙ্গের জাতুকৰ্ণ গোত্রীয় ব্রাহ্মণকুলে তাহার উদ্ভব হয়। ইদানীন্তন কালে ইনি একজন সুবিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন। “ন্যায়, স্মৃতি, ব্যাকরণ, পুরাণ, সাহিত্য প্রভৃতি প্রায় প্রত্যেক বিভাগেই র্তাহার তুল্য এবং প্রগাঢ় অধিকার ছিল। এতদ্ব্যতীত ধৰ্ম্মক্রিয়ানুষ্ঠান জ্যোতিষ গণনা, গদ্য পদ্য সংস্কৃত রচনা ইত্যাদি বিষয়েও তিনি প্রধান শ্রেণীতে আসন পরিগ্রহ করিয়াছিলেন। তিনি অতিশয় তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও মেধাবী ছিলেন।” অধ্যয়ন পরীক্ষাচ্ছলে, ইংরেজী, ভূগোল, ইতিহাস, অঙ্ক, জ্যামিতি ইত্যাদিতেও বিশেষ ব্যুৎপন্ন হইয়াছিলেন। সামাজিক এমন অনেক ব্যবহার আছে, যাহা কেবল শাস্ত্রদ্রষ্টা দ্বারা মীমাংসা হয না, ঐ সকল বিষয়ে তাহার নিকট এমন সদুপদেশ ও মীমাংসা পাওযা যাইত, যাহাতে ব্যক্তিমাত্রেই তদীয় প্রখর বুদ্ধিকে ধন্যবাদ না দিয়অ পারিতেন না।” “শিবচন্দ্রের প্রখর স্মৃতিশক্তিতে লোকে তাহাকে শ্রুতিধর সংজ্ঞা প্রদান করিয়াছিলেন।” “শুনা গিয়াছে, তিনি একদা কোন মোকদ্দমার রায়ের নকল আনিতে যান। রায় বড় ছিল, তাই কৰ্ম্মচারীবর্গ উহার নকল লইতে অনেক টাকা ফিস লাগিবে বলেন, উহাতে দরিদ্র ব্রাহ্মণ এত টাকা দিতে অসমর্থ হইয়া কোন কৰ্ম্মচাবীকে, একবাব তাহাকে রায় খানা পড়িয়া শুনাইতে অনুরোধ করিলেন। পঠিত রাষ শ্রবণান্তর তিনি বাড়ী আসিযা অবিকল তাহা লিখিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।” “সাধাবণতঃ ব্রাহ্মণ পণ্ডিতকে ক্রোধন ও অহঙ্কার হইতে দেখা যায়, ন্যায়পঞ্চাননের তাহার লেশ মাত্রও ছিল না। বরং ইহা তাহার একপ্রকার দোষ ছিল যে, তিনি না ঘাটাইলে বিদ্যাগৌরব প্রদর্শন করিতে নিতান্ত কুষ্ঠিত হইতেন। সংক্ষেপতঃ বিচার-মল্ল বলিতে যাহা বুঝায়, তিনি তাহাব সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলেন। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের আদর্শ স্বরূপ তিনি ধৰ্ম্মকৰ্ম্মাদিতে দৃঢ়মতি ছিলেন। শুনা যায় একবার তাহার শরীরে কোনও এক ভীষণ ব্যাধির সূত্রপাত দেখা দিয়াছিল; তিনি কেবল শাস্ত্রানুমোদিত সদানুষ্ঠান দ্বারাই তাহা হইতে সম্পূর্ণ অব্যাহতি পাইয়াছিলেন।” “তিনি এতাদৃশ বিনীত ও নিরহঙ্কার ছিলেন যে নিতান্ত অন্তরঙ্গ ব্যক্তি ব্যতীত তাহার সমস্ত গুণাবলী কেহই জানিতে পারিত না। ফলতঃ র্তাহার প্রগাঢ় বিদ্যার এবং বিনয়গম্ভীর স্বভাবের ইয়ত্তা করা সুদূর পরাহত।” বিগত ১৩০১ বাংলার ২৬শে আষাঢ় রজনীতে সন্ন্যাসরোগে শ্রুতিধর শিবচন্দ্র মৃত্যুমুখে পতিত হন। শ্রীহট্টগৌরব স্মৃতিফলকাবলীতে সৰ্ব্বপ্রথমেই তাহার ফলক নিবিষ্ট হইয়াছে। শিবরাম জলডুবের রাঢ়জাতীয় শস্তুরামের বৃদ্ধ প্রপৌত্র সোণা ও গণেশ্বরের নামে তত্ৰত “সোণাগণাই” ১৪৬ উদ্ধৃত অংশসমূহ ১৩০১ বাং ২বা শ্রাবণের পরিদর্শক পত্রে প্রকাশিত প্রবন্ধ হইতে গৃহীত হইয়াছে।