পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৪৮ গ্রহণ করিতেন না; ছায়ার ন্যায় সদা পতিত অনুগতি করিতেন। র্তাহার মুখে সর্বদাই হাসি দেখা যাইত, তিনি অতি মিষ্টভাষিণী ও প্রিয়ংবদা ছিলেন। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা অন্যরূপ, সতীর স্মিতপ্রফুল্ল বদনে বিষাদের কালিমা-রেখা পতিত হইল, হাসির স্থলে অশ্রুরাশি দেখা দিল, বিষ্ণুদাস কঠিন পীড়াগ্রস্ত হইলেন। পীড়িত সকলেই হয়, কিন্তু বিষ্ণুদাস পীড়িত হওয়া মাত্রই পতিপ্রাণ শৈলজার প্রাণে কি এক আশঙ্কার উদয় হইল, আর তাহা দূর হইল না। সতীর আশঙ্কা দেখিতে দেখিতে সত্যে পরিণত হইল, বিষ্ণুদাস ব্যাধি হইতে উঠিলেন না—মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন। পতির মৃত্যুর পর শৈলজার আর এক ভাব দেখা গেল, পূৰ্ব্বে যিতি বাতা-বিতাড়িত ব্রততীর মত ব্যাকুলিতা ছিলেন, এক্ষণে তিনি স্থির ধীর প্রশান্ত, গৈরিক স্রাবের পূৰ্ব্বে বহ্নি-গর্ভ গিরি যেরূপ শান্তভাবাপন্ন বোধ হয়, তদুপ। এই ভাব দুষ্টে সমাগত স্বজনগণ সহজেই বুঝিতে পারিলেন যে, সতী পতির সহগামিনী হইবেন। তখন ভব্য ব্যক্তিবর্গ প্রবোধ দিয়া, তাহাকে নিরস্ত করিতে চাহিলেন; কিন্তু কিছুতেই সে দৃঢ় সঙ্কল্পের অন্যথা হইল না। যখন বিষ্ণুদাসের চিতা জুলিয়া উঠিল, তখন সতী সহস্যননে পতির পাদদেশে বসিয়া পান খাইতে খাইতে পরমার্থ তত্ত্বেব উপদেশ দিয়া উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে আশ্বস্ত করিলেন। বিস্ময়-বিহুলচিত্তে সমাগত সকলে দেখিতে লাগিল যে, সতীর কটিদেশ পর্যন্ত দগ্ধ হইয়া গিয়াছে, কিন্তু মুখে একটুও বিকাব নাই, তিনি তখনও কথা কহিতেছেন। তাহার উপর উদর দগ্ধ হইয়া গেলে, আর বসিয়া থাকিতে পারিলেন না-পতি পদে ঢলিয়া পড়িলেন। সতীর পবিত্র আত্মা নশ্বরদেহ পরিত্যাগ করিয়া পতিব সহিত উদ্ধলোকে চলিয়া গেল। যে স্থানে সতী “সহমরণ’ গমন করেন, সে স্থান “সতীকুণ্ড” রূপে খ্যাত হইয়াছে বরাক নদীর যে স্থান হইতে “খিরাউন” খালা গিয়াছে, এই “সতীকুণ্ড” সেই স্থানেই দেখিতে পাওয়া যায। শ্যামরাম দাস শ্রীহট্ট শহরে গৌরকিশোর দাস নামে সাহু বংশীয় এক ধনবান ভূম্যধিকারী ছিলেন। ধনজনের অভাব না থাকিলেও তিনি একটি পুত্ররত্বের অভাব অনুভবে সৰ্ব্বদা ভাবিত থাকিতেন এবং তজ্জন্য তাহার দান ধ্যানের ক্রটি ছিল না, ইহার প্রদত্ত ঢাকাদক্ষিণ ঠাকুর বাড়ীর আনন্দ রাম মিশ্র নামীয় ১২২১ সনের ২৪শে মাঘ তারিখযুক্ত দুলালী পরগণায় /১ ভূমি দেবত্র দানের রিজেস্টরীকৃত এক দলিল আমরা দেখিয়াছি। ভগবান গৌরকিশোরের আশা পুরাইয়াছিলেন, শীর্ষোল্লেখিত শ্যামরামই তাহার পুত্র। শ্যামরাম বাল্যাবধিই সুশীল ও মেধাবী। শহরবাসী ধনী সন্তানের কোন দোষই তাহাতে ছিল না। তিনি যেমন নীিত, তেমনি পরোপকারী ছিলেন। সরকার বাহাদুর র্তাহাকে মুন্সেফপদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন এবং তিনিও দক্ষতার সহিত যে কাৰ্য্য সম্পাদন করেন। তাহার সময়ে পৈত্রিক সম্পত্তি ও সম্মান আরও বদ্ধিত হইয়াছিল। শ্রীহট্ট শহরের অধিকাংশ ভূমি ইহার ছিল, পরে সরকারী কার্য্যে গবর্ণমেন্ট তাহা গ্রহণ করেন। শহরের উপরে ইহার অনেক অট্টালিকা ছিল, অদ্যপিও তাহার ২/১টি আছে। ইহার পুত্রের নাম সূৰ্য্যকুমার দাস। সূৰ্য্যকুমার বাবুর দৌহিত্রগণ তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অধিকারী হইয়াছেন।