পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৯ জীবন বৃত্তাস্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত শ্ৰীবাস পণ্ডিত শ্রীহট্টের পঞ্চখণ্ডে পণ্ডিতের পাড়া নামক এক পল্লী আছে, তত্রত্য, ব্রাহ্মণবর্গের সাধারণ খ্যাতি পণ্ডিত। শ্রীবাস পণ্ডিত সপরিবারে শ্রীহট্ট হইতে নবদ্বীপে চলিয়া গিয়াছিলেন। শ্রীচৈতন্য ভাগবতে লিখিত আছে যে, শ্রীবাস প্রভৃতি শ্রীহট্টবাসী ছিলেন। নবদ্বীপের যে পল্লীতে শ্রীহট্টবাসিগণ বাস করিতেন, শ্রীবাস তথায়ই বাসস্থান নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন। জগন্নাথ মিশ্রের বাড়ীর সন্নিকটেই তাহার বাড়ী ছিল। শ্ৰীমহা প্রভুর পিতা জগন্নাথ মিশ্র শ্রীবাসের সমবয়স্ক ও বন্ধু ছিলেন। বন্ধু তনয় নিমাইকে শ্ৰীবাস পুত্রবৎ স্নেহ করিতেন; মান্য ব্যক্তি ও পিতৃবন্ধু বলিয়া নিমাইও শ্রীবাসকে দেখিলেই নমস্কার করিতেন। যুবক নিমাইর একটা কাণ্ড এই ছিল যে, বৈষ্ণব পাইলে তিনি একটু রঙ্গ করিতে ছাড়িতেন না, এই বৈষ্ণব যদি আবার শ্রীহট্টবাসী হইত, তবে মাত্রা আরও চড়িত। শ্রীবাস বৈষ্ণব প্রধান, কিন্তু গুরুলোক বলিয়া নিমাই তাহাকে কিছু বলিতে পারিতেন না। একদিন কিন্তু সে সুযোগ ঘটিয়া গেল। একদিন শ্রীবাস পথে নিমাইকে পাইয়া বলিলেন—“ভাল নিমাই। এখন তুমি নিতান্ত ছেলে মানুষ নও, এখন নদীয়া যুড়িয়া তোমার যশঃ সৌরভ, এখন কি আর তোমার চাপল্য শোভা পায় ? তুমি বৈষ্ণববর্গকে অনর্থক চটাও কেন?” নিমাই দাড়াইয়া মাথা হেট করিয়া শান্ত ছেলের মতো কথা কযেকটি শুনিলেন, যেন বড়ই লজ্জা পাইয়াছেন। কথা শেষ হইলে ভূমি-লগ্ন নয়নেই বলিতেছেন— “সে ভাল, তবে আরো কিছুদিন পড়ে নেই, তারপর আপনাদের কৃপায় ভক্ত হইব;” একটু থামিয়া বলিতেছেন,—“এমন ভক্ত হইব যে ব্রহ্মা শিবাদি আমার দ্বারস্থ থাকিবেন” “ভাল উপদেশ দিতে আসিযাছিলাম” ভাবিয়া ধৰ্ম্মনিষ্ঠ উপদেষ্টা আর তথায় তিষ্ঠিলেন না—চলিয়া গেলেন। যে, সে সমস্ত বাক্য একেবারে মিথ্যা নহে। শ্রীবাসও তখন বুঝিতে পারেন যে নিমাই যে ভক্তিধনের অধিকারী, তাহাতে ব্ৰহ্মা শিবাদি র্তাহাব দ্বারস্থ হওয়া বড় কথা নহে। নিমাইর অতুলনীয় প্রেমভক্তি, নিমাইর মধুর কীৰ্ত্তন-লীলা শ্ৰীবাসাদি সকলকেই আকৃষ্ট করিল, র্তাহারা নিমাইর পার্ষদভক্তরূপে পরিণত হইলেন। তখন শ্রীবাসের বাড়ীতেই কীৰ্ত্তনের স্থান নিদিষ্ট হইল, এই স্থানেই সকলে সম্মিলিত হইতেন ও সন্ধ্যার পরে দ্বার দিয়া সংকীৰ্ত্তন করিতেন। শ্রীবাসের বাড়ী প্রাচীর বেষ্টিত ছিল। শ্ৰীবাসাদি নিমাইকে ঈশ্বরাবতার বলিয়া বিশ্বাস করিতেন; কি কি লক্ষণ দর্শনে কোন পরীক্ষার পর তাহাদের মনে এই বিশ্বাস জ্ঞাত হয়; এস্থলে তাহা বলিবার প্রয়োজন নাই; তাহাদের এ বিশ্বাস অটল ছিল। একদা শ্রীবাস-গৃহে কীৰ্ত্তন হইতেছে, শ্রীবাসের এক মাত্র পুত্র মুমূর্ষ অবস্থায় শায়িত, হঠাৎ গৃহে ক্ৰন্দন উঠিল, ব্যাপার কি শ্ৰীবাস তাহা বুঝিলেন, বুঝিয়া কীৰ্ত্তন ছাড়িয়া গৃহে গিয়া সকলকে সাবধান করিয়া বলিলেন, “দেখ, আমার আঙ্গিনায় স্বয়ং ভগবান ভাববশে নৃত্য করিতেছেন, তদবস্থায় শিশুর মৃত্যু হইয়াছে ইহা তাহার পরম ভাগ্য, আমাদেরও ভাগ্য। যদি চিৎকার করিয়া তোমরা তাহার কীৰ্ত্তনের বাধা জন্মাও, আমি জাহ্নবীতে প্রবেশ করিব।” স্ত্রীলোকেরা ক্ৰন্দনে ক্ষান্ত হইলেন। শ্ৰীবাস পুনঃ কীৰ্ত্তনমণ্ডলীতে আসিলেন; এদিকে শ্ৰীগৌরাঙ্গ কি আর স্থির থাকিতে পারেন? যে ব্যক্তির অবস্থা ঈদৃশ শোকে দুঃখের অতীত হইয়া গিয়াছে, তৎপতি ষে দেবদুল্লভ পুরস্কার প্রযুক্ত