পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৫০ হওয়া কৰ্ত্তব্য, শ্রীবাস তাহাই পাইলেন—গৌরনিতাইকে পুত্ররূপে পাইলেন। এক গেল—দুই হইল, নশ্বর গেল—অবিনশ্বর রহিল। কীৰ্ত্তনের তেজ উত্তরোত্তর প্রবদ্ধিত হইল; তখন গুজব উঠিল যে, গৌড়ের মোসলমান বাদশা কীৰ্ত্তন দমনে আসিতেছেন। নিরীহ ভক্তবর্গের কেহ কেহ যথার্থই ভীত হইলেন। একদিকে ভয়, অন্যদিকে অনুরাগ, ভক্তবর্গ বড়ই বিপদে পড়িলেন। যখন অনুরাগেরই জয় হইল,—যখন তাহারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইলেন, তখন শ্রীগৌরাঙ্গ দয়ার্দ্র হইয়া মনের অমূলক আশঙ্কাটাও দূর করিয়া দিলেন। শ্রীবাসের ভ্রাতুষ্পপুত্রী নারায়ণী তখন চারি বৎসরের বালিকা, সে সম্মুখে খেলিতেছিল, তাহার প্রতি চাহিয়া একদিন শ্রীগৌরাঙ্গ শ্রীবাস পণ্ডিতকে বলিলেন—“পণ্ডিত! গৌড়ের বাদশাহ আসিতেছে শুনিয়া ভীত হইয়াছ মিথ্যা কথা—বাদশাহ আসিবেন কেন ? যদিইবা আসেন, ভয় কি ? হরিনামে কি তাহার রুচি জন্মিতে পারে না? যদি আসেন, নিশ্চয় জানিও, তাহার সঙ্কল্প পরিবৰ্ত্তিত হইবে,— মনের বিদ্বেষবুদ্ধি দূর হইয়া মন নিৰ্ম্মল হইবে, আমার বাক্য মাত্রে তিনি ভক্তিপরিপ্লুত হইবেন। হইবে কি না, উদাহরণ দেখ।” এই বলিয়াই নিমাই সম্মুখে ক্রীড়ারতা বালিকাকে বলিলেন “নারায়ণি! তোমার কৃষ্ণপ্রেম হউক।” শ্রীগৌরাঙ্গের আদেশের কি মহিয়সী শক্তি, শ্রবণমাত্র চারি বৎসরের বালিকা যন্ত্রচালিতবৎ হইতে জলধারা বহিতে লাগিল, ও বালিকা ব্ৰজগোপিকার মত কৃষ্ণবিরহ হাহাকার করিতে লাগিল। শ্ৰীবাসাদি দেখিলেন, নিমাইর বদনমণ্ডল হইতে অপূৰ্ব্ব জ্যোতি বিচ্ছুরিত হইতেছে, তাহারা “জয় গেীর ভগবান’ বলিয়া জয়ধবনি দিয়া উঠিলেন। সেই হইতে র্তাহাদের মনে আর আশঙ্কার লেশও রহিল না; সেই হইতে শ্রীগৌরাঙ্গেরও সময় সময় ভাবানাবেশ হইতে আরম্ভ হইয়াছিল। শ্রীগৌরাঙ্গ যখন সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়া নীলাচলে চলিয়া যান, তখন হইতে “শ্রীবাসাঙ্গন” পরিত্যক্ত হয়; শ্রীবাস গৌরশূন্য নবদ্বীপে বাস করিতে না পারয়িা, এস্থান ত্যাগ করতঃ কুমারহট্টবাসী হন। সেই স্থানবাসী বৈকুণ্ঠ দাস নামক একটি ব্রাহ্মণ তনয়ের সহিত বাল্যকালেই নারায়ণীর বিবাহ হয়, কিন্তু নারায়ণী বালবিধবা হইয়া পড়েন। স্বামীর মৃত্যু হইলে স্বল্পগর্ভা নারায়ণী মাতুলায়ন শ্রীহট্টে গমন করিয়াছিলেন। কথিত আছে শ্রীহট্ট থাকে কালে,” তথায় বঙ্গের প্রসিদ্ধ কবি বৃন্দাবন দাসের জন্ম হয়। বৃন্দাবন দাসের সৰ্ব্বপ্রধান কীৰ্ত্তি শ্রীচৈতন্য ভাগবত গ্রন্থ তিনি লিখিয়াছেন-— “নারায়ণী চৈতন্যের উচ্ছিষ্ট ভাজন। তার গর্ভে জন্মিল শ্রীদাস বৃন্দাবন।” বৃন্দাবন দাস শ্ৰীমহাপ্রভুর প্রকট থাকা কালেই জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহার সহিত দেখা হয় নাই; এই জন্য তিনি গ্রন্থ মধ্যে খেদ করিয়াছেন। ১৪৮ সজ্জনতোষনী পত্রিকা ১২৯৭ সালে কবি বৃন্দাবন দাসের জীবনচরিত(বঙ্গরত্ব ২য় ভাগ) প্রণেতা দেনুড়বাসী শ্রীযুক্ত অম্বিকাচরণ ব্রহ্মচারী কবিরঞ্জন মহাশয়ের লিখিত প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য।