পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৬০ অদ্ভুত স্বভাব দেখিয়া পাড়ার স্ত্রীলোকেরা তাহাকে গৌরহরি নাম প্রদান করেন; গৌরহরিই শেষটা গেীরনাথ নামে খ্যাত হন । পিতা তাহার নাম রাখিয়াছিলেন বিশ্বম্ভর মিশ্র। নিমাই হটিতে শিখিলে জননী তাহাকে বিবিধ অলঙ্কারে সাজাইয়া রাখিতেন কিন্তু বালকের চাঞ্চল্য অত্যন্ত অধিক ছিল—গৃহস্থালীর দ্রব্যাদি তাহার হাতে পড়িলেই বিনষ্ট হইত। একদিন একজন অতিথি গৃহে উপস্থিত হইয়াছিলেন, নিমাই তাহার নিবেদিত অন্ন বার আর আহার করিয়া সকলকে বিব্রত করেন। শেষটা অতিথি নিমাইকে বালগোপাল মনে করিয়া, তাহার উচ্ছিষ্টান্নই আহার করেন। আর একদিন নিমাই আস্তাকুড়ে গিয়া পরিত্যক্ত হাড়ির উপরে বসিয়াছিলেন। শচীর বড় শুচিবাই ছিল,তিনি পুত্রকে অশুচিস্থানে দেখিয়া হায় হায় করিয়া উঠিলেন। এই সময় বালক র্তাহাকে বলিয়া উঠিল—“মা! সৰ্ব্বত্রই হরি আছেন, কোন স্থান অপবিত্র?” শচী আশ্চৰ্য্যান্বিত হইলেন, হয়ত ভাবিলেন যে নিমাইকে কেহ এই ব্রহ্মজ্ঞানের কথা শিখাইয়া দিয়াছে; তারপর মাতা উত্যক্ত হইতেছেন দেখিয়া নিমাই তথা হইতে চলিয়া আসিলেন। বাল্যলীলা নিমাইদের বাড়ীর কাছে জগদীশ পণ্ডিতের বাড়ী ছিল, জগদীশের পূৰ্ব্ব নিবাস “বঙ্গদেশে” (সম্ভবতঃ শ্রীহট্টে) ছিল। নিমাই এক একাদশী দিনে হঠ ধরিলেন যে, জগদীশ পণ্ডিত বিষ্ণুর জন্য যে নৈবেদ্য প্রস্তুত করিয়াছেন, তিনি তাহাই খাইবেন। নিমাইকে কত প্রকারে বুঝান গেল, নিমাই মানিলেন না, কোন প্রকারেই তাহার ক্ৰন্দন থামিল না, সেদিন ক্ৰন্দন বারণের মহাস্ত্র হরিনামও ব্যর্থ হইল। এমন সময় তাহার মনে হইল যে এই বালকের দেহে গোপাল বিরাজ করিতেছেন, আর আমনি তিনি একদিন একটা চোর নিমাইর অঙ্গে অলঙ্কার দেখিতে পাইয়া “সন্দেশ দিব” বলিয়া তাহাকে কোলে তুলিয়া লইয়া যায়। কিছুদূর যাইতে যাইতে চোরের মনেব মন্দভাব চলিয়া গেল, এবং সে মোহবশে ঘুরিয়া ফিরিয়া নিমাইর বাড়ীতে আসিল ও তাহাকে রাখিয়া চলিয়া গেল। শ্রীহট্টবাসী মুরারির গৃহ নিমাহদের বাড়ীর পাশ্বেই ছিল, মুরারি গুপ্ত নবদ্বীপে পড়িতেন। তিনি অধ্যাত্মচৰ্চা বড় ভালবাসিতেন। একদিন নিমাই তাহাকে বড়ই বিরক্ত করিয়াছিলেন; মুরারি গুপ্তের জীবন-কথা-প্রসঙ্গে ইতিপূৰ্ব্বে তাহা বলা হইয়াছে। অদ্বৈতাচার্যের কথা পূৰ্ব্বে বলিয়াছি। অদ্বৈতাচার্য যখন নবদ্বীপে রহিতেন, নিমাইর অগ্রজ বিশ্বরূপ প্রায়শঃ তাহার কাছে গিয়া ভক্তিশাস্ত্রের আলোচনা করিতেন। শচীদেবী খাওয়ার জন্য তাহাকে ডাকিয়া আনিতে কখন কখন নিমাইকে পাঠাইতেন। নিমাই যখনই অদ্বৈতের “বৈষ্ণব সভায়” যাইতেন, অদ্বৈতের হৃদয় তখন যেন পূর্ণ হইয়া উঠিত। তিনি ভাবিতেন এ বালককে দেখিলে মন এমন করে কেন? সংসারে কথা ভুলিয়া মন কেন এক অজানা দেশে চলিয়া যায়? ১. ৪র্থ ভাগে সত্যভানুর বিবরণ দেখুন। ২. ১৩১০ বাং আষাঢ় সংখ্যা আসাম বান্ধব পত্রিকায এই জগদীশ ভট্টের জন্মস্থান “পূৰ্ব্বদেশ” কামরূপ ছিল বলিযা বর্ণিত হইয়াছে।