পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৬২ নিমাইর গ্রন্থ রচনার সংবাদে চিন্তিত হন ও একদিন গঙ্গাপার হইবার কালে নিমাইর উক্তগ্রন্থের দুই একটি সিদ্ধান্ত শুনিয়া যেমন বিস্মিত হন, নিজ গ্রন্থের আর প্রসুিদ্ধির আশা নাই ভাবিয়া তেমনি বিষাদিত হন। রঘুনাথের এইভাব দর্শনে নিমাই দয়াৰ্দ্ৰচিত্তে নিজ গ্রন্থ গঙ্গায় বিসজ্জন করেন। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশ ২য় বাঃ ২য় খঃ ৭ম অধ্যায়ে তাহা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হইয়াছে। রঘুনাথের কীৰ্ত্তিকথাও পূৰ্ব্বাংশে যথাস্থানে বর্ণন করিয়াছি। অদ্বৈতচার্য্যের কথা বলিয়াছি, অদ্বৈতের কাছে নিমাই কিছুদিন বেদ পাঠ করেন। পূৰ্ব্ব হইতেই অদ্বৈত নিমাইকে জানিতেন, এক্ষণে র্তাহার তীক্ষ্ণবুদ্ধি ধীশক্তির পরিচয় পাইয়া তিনি বিস্মিত হইলেন, নিমাই দৃষ্টিমাত্র পাঠ আয়ত্ত করিয়ালন; বোধ হইত যে বিদ্যাশিক্ষা নিমাইর একটা অভিনয় মাত্র, সমস্তই যেন তাহার পূৰ্ব্বের অধীত। ফলে অত্যন্স কাল মধ্যেই নিমাই বেদে ব্যুৎপত্তি লাভক্রমে “বিদ্যাসাগর” উপাধি প্রাপ্ত গৃহে আগমন করেন। এই সনন্দে তাহার বয়স ষোল বৎসরের অধিক ছিল না। গৃহস্থাশ্রম পাঠ সমাধা করিয়া, সেই অল্প বয়সেই নিমাই নবদ্বীপে ব্যাকরণের এক টোল স্থাপন করেন। তাহার টোলে দেখিতে দেখিতে বিস্তর ছাত্র জুটিল ছাত্রদিগের পাঠের সুবিধার জন্য নিমাই একখানা ব্যাকরণের প্রস্তুতক্রমে তদ্বারা তাহাদিগকে শিক্ষাদান করিতেন; উহা “বিদ্যাসাগরী টিপ্পনী” নামে খ্যাত ও দেশে সুপ্রচারিত হইয়াছিল। এই সময়েই নবদ্বীপবাসী বল্লভাচার্যের কন্যা লক্ষ্মীদেবীর সহিত তাহার বিবাহ হয় ইহার পরে কাশ্মীর দেশীয় কেশব নামক একজন পণ্ডিত, ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন পণ্ডিত সকলকে শাস্ত্রবিচারে পরাস্ত করিয়া, নবদ্বীপের পণ্ডিত সকলকে জয় করিতে আগমন করেন। নবদ্বীপের পণ্ডিতগণ র্তাহার নাম শুনিয়া ভীত হইয়াছিলেন, কিন্তু নিমাই পণ্ডিত অবলীলাক্রমে তাহাকে পরাস্ত করেন। ব্যাকরণীযা পণ্ডিত নিমাইর নিকট পরাজিত হইলে, সেই গর্বিত পণ্ডিতের অহঙ্কার দূর হইয়া মন পবিত্র হয় এবং তিনি নিমাইকে অসাধারণ পুরুষ বুঝিয়া তাহার শরণাপন্ন হন। নিমাই কোন ব্যক্তিকেই সৰ্ব্বসমক্ষে লজ্জিত অপদস্থ করিতে চাহিতেন না, এই জন্য সন্ধ্যার পরে এই পণ্ডিতের সহিত বিচার করিয়াছিলেন। ইহার পর নিমাই পণ্ডিতের মনে এক অভিলাষ জন্মিল, তিনি “বঙ্গদেশে গমন করিতে ইচ্ছা করিলেন। শ্রীহট্টে র্তাহার পূৰ্ব্বপুরুষদিগের বাটী, সুতরাং পৈতৃক বাসস্থানে দেখিতে কৌতুহল জন্মিবে, তাহাতে আশ্চৰ্য্য কি ?’ নিমাই এই উদ্দেশ্যে নবদ্বীপ হইতে যাত্রা করিয়া পদ্মাবতীর তীরে আগমন করিলেন। তৎপরে পদ্মা নদী পার হইয়া তিনি বঙ্গদেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশে পরিভ্রমণ করেন। চৈতন্য ভাগবতে লিখিত আছে যে— ৪. কলাপের আরও একটি “বিদ্যাসাগরী টীকা” শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণ নিবাসী বাণীনাথ বিদ্যাসাগর কত্ত্বক বিরচিত হয়। অদ্যাপি ঢাকাদক্ষিণে বিদ্যাসাগরের বংশীয়েরা আছেন,তাহাদিগকে “সাগবের বংশ" বলে এবং ইহারা আবালবৃদ্ধ সকলেই “বিদ্যাসাগর” উপাধিতে খ্যাত। ৫. বঙ্গদর্শন ১২৮৪ সাল।