পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৭ উপসংহার 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত বরিস্পর্শে র্তাহার অন্তরের সব ময়লা বিধৌত হইয়া গিয়া কাজিকে অমৃতের অধিকারী করিয়া তুলে। ফলতঃ যত ক্ষুদ্র বৃহৎ খালা নালা ডোবা সে মহাবন্যার জলে আপ্লাবিত হইয়া একাকার হইয়া যায়। বঙ্গের প্রত্যেক অংশ হইতে যত খালা নালা, নদী, সকল আসিয়া এই মহাসাগরে মিলিত হয়। ভেসে যায়।” এই সেদিন মাত্র—প্রখর ঐতিহাসিক আলোকের মধ্যে সোণার বাঙ্গালার সোণার দেবতা যে স্বর্ণযুগে পত্তন করিলেন, কোন কালে কেহ কখন তাহা দেখে নাই, শুনে নাই,—তাহার আস্বাদন করে নাই। র্তাহার কৃপার সে “অনপিত” সুধা যুগে যুগে ধরাবাসী পান করিয়া তৃপ্ত হইবে—অমর হইবে। বাঙ্গালী জাতি ধন্যতাহীদেরই শ্রীগৌরাঙ্গ সে অনপিত, অপ্রাকৃত কৃষ্ণপ্রেম রস জগতে বিলাইয়া দিয়াছেন; আরোও ধন্য যে শ্রীগৌরাঙ্গ তাহাদেরই। করিয়াছিলেন। ইহারা কেহই নিবের্বাধ নিরক্ষর ছিলেন না। অদ্বৈত, শ্রীবাস; মুরারি, গঙ্গাদাস; পুণ্ডরাক, মুকুন্দ, গদাধর, জগীনন্দ, ইহারা সকলেই নিমাইর চরিত্রে আকৃষ্ট হইয়াছিলেন। কিন্তু তিনি যে ঈশ্বরাবতার, একথা তাহারা সহজে বলেন নাই। বালুকণাকে পৰ্ব্বতচিন্তা চলিতে পারে, যশকণিকাকে মহাসাগর মনে করা যাইতে পারে কিন্তু ক্ষুদ্র মনুষ্য কীটকে অনন্ত বিশ্বের অধিপতি ঈশ্বর মনে করা যাইতে পারে না; মনুষ্যকে ঈশ্বরজ্ঞান হিন্দুশাস্ত্রানুসারে মহাপাপ জনক। এ সকল ঋষিকল্প মহাপুরুষগণ কঠোর পরীক্ষা করিয়া, প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাইয়া তবে তাহাকে ঈশ্বর মনে করিয়াছিলেন। বৰ্ত্তমানে যদি কেহ পরীক্ষা করিতেন, তবে তাহা হইতে অধিক পারিতেন না। পরীক্ষায় প্রবুদ্ধ হইয়া তাহারা তাহাকে ঈশ্বর মনে করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, ভগবান ভাবে, তাহাকে ধ্যান-ধারণা করিতেন—পূজা করিতেন। কিন্তু সে সবই মনে মনে, শ্ৰীমহাপ্রভুর সম্মুখে কেহই তাহাকে ঈশ্বরভাবে কিছু বলিতে কি করিতে পারিতেন না; দৈবাৎ অজানিতভাবে কোন নুতন লোক তাহা বলিলে তিনি “বিষ্ণু বিষ্ণু” বলিয়া কানে হাত দিতেন ও অতি বিষাদিত হইতেন। ঈশ্বরাবেশ শ্রীগৌরাঙ্গ ভক্তভাবে ভক্তবৎ চলিলেও, সময় সময় তাহার ঈশ্বরভাব প্রকটিত হইত; সেই সময়ে তাহার দেহ হইতে জ্যোতি নিঃসৃত হইত, তাহার ক্রিয়া মুদ্রা ভিন্নাকার ধারণ করিত। যিনি আপনাকে তৃণাদপি হীন জ্ঞান করিতেন, দেব দ্বিজে যাহার ভক্তির তুলনা মিলিত না, তিনিই তখন বিষ্ণুমন্দিরে প্রবিষ্ট হইয়া বিষ্ণুচক্রপাশ্বে ঠেলিয়া ফেলিয়া তাহার আসনে বসিতেন এবং তিনি যে জগৎপতি, তাহা অকুষ্ঠিতচিত্তে বলিতেন। তখনই তিনি নানাবিধ সফল বর প্রদান করিতেন বা ভবিষ্যৎবাণী বলিতেন। কিন্তু ইহাও তাহার একটি ব্যবহারের কাছে অকিঞ্চিৎকর মনে হয়; এই সময় তিনি পূজনীয় ব্যক্তিবর্গ হইতেও সহস্যে পূজা গ্রহণ করিতেন, তৎকালে মা শচী প্রণাম করিলে বা অদ্বৈত আসিয়া সচন্দন তুলসীদল চরণে লিপ্ত করিলেও কিছুই বলিতেন না। নিমাইর ন্যায় জ্ঞানী, শাস্তুনিষ্ঠ হিন্দু সন্তান, নিমাইর ন্যায় সরল, বিনীত ও গুরুজনভক্ত গৃহস্থসন্তান স্ববশে থাকিয়া ইহা করিতে পারেন না। এই অবস্থায় নিমাইর দেহে ঈশ্বরাবেশ ঘটিত বলিয়া ভক্তবর্গ ইহাকে আবেশাবস্থা বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। ফলতঃ ভক্তবর্গ নিমাই পণ্ডিতে ক্রমশঃ নানা ভাবের সমাবেশ দেখিতে পাইতেন;