পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৬৮ বিবিধ অলৌকিক ভাব অবলোকন করিতেন,—আর তাহারা সকলেই সুখের সমুদ্রে ভাসিতেন। যদি সৌভাগ্য রূপে, কাহারও এমন বিশ্বাস হয় যে ভগবান রক্ষক থাকিতে নিজের চেষ্টা উদ্যমের আবশ্যক নাই, তবে তাহার কৰ্ম্ম করিবার মোটেই ইচ্ছা থাকে না; নবদ্বীপের ভক্তবর্গের কতকটা তদবস্থা উপস্থিত হইয়াছিল। প্রত্যেক বিষয়েরই যে দুইটা দিক আছে একটার সঙ্গে অন্যটার ঘনিষ্ট সম্পর্ক, একথাটা তাহারা অনেকটা ভুলিয়া গিয়াছিলেন। এ অবস্থাটা সংসার রক্ষার পক্ষে উপযোগী নহে, তাই অতি সত্বরই ইহার প্রতিক্রিয়াও নিমাই কত্ত্বক আরম্ভ হইয়াছিল। কৃষ্ণসুখে বিচ্ছেদ মানব অভাবের দাস, অভাবের তাড়নায় বিতাড়িত হইয়া ভ্ৰমিত হয়। যদি অভাব বোধ না থাকে, তবে সাংসারিক দুঃখের অনেকটা লাঘব বটে। যদি এমত দৃঢ় বিশ্বাস জাত হইতে পারে যে তাহদের অভাব উপস্থিত হইলেই ভগবান তাহা পূরণ করবেন, তবে তজ্জন্য আর চিন্তা থাকে না। বৃন্দাবনের গোপ গোপীদের অবস্থা এইরূপই হইয়াছিল, তাহাদের অভাববোধ ছিল না—দুঃখের লেশও ছিল না; কৃষ্ণ-সঙ্গ ব্যতীত তাহদের বাঞ্ছান্তরও ছিল না। সে বাঞ্ছাও আবার তাহাদের আত্মতৃপ্তির জন্য নহে—কৃষ্ণের সুখের উদ্দেশ্যেই মনে হইত। কিন্তু সকলেরই সীমা আছে—ইহা তাহারই বিধান, সঙ্গসুখেও বিচ্ছেদ আছে। যদিও বিচ্ছেদে রসের পরিপুষ্টিই সাধিত হইয়া থাকে, তথাপি তাহার স্বভাবসিদ্ধ আশুযন্ত্রণা যে নাই—এমন নহে; ইহা “তপ্তইক্ষুচবর্বর্ণবৎ।” শ্ৰীকৃষ্ণকে অক্রুর মথুরায় লইয়া গেলেন, বৃন্দাবনে বিচ্ছেদানল জুলিয়া উঠিল। প্রবলবেগে জাহ্নবী-ধারা বহিতেছিল, অগস্তঋষি গণ্ডুষে তাহা পান করিয়া সে খর-ধারা রোধ করিলেন। নবদ্বীপে যে প্রেমতরঙ্গ উত্থিত হইয়াছিল, যে কীৰ্ত্তন কোলাহল সদা শ্রত হইতেছিল, নিমাইকে সন্ন্যাসমন্ত্রে দীক্ষিত করিয়া পথের কাঙ্গাল সাজাইয়া দিলেন। অক্রুরকে ব্রজবাসিগণ দোষ দিয়াছিলেন, কেশব ভারতীকে দোষ দেওয়া কঠিন। ভারতী ভুবনমোহন নিমাইকে সন্ন্যাসী সাজাইতে চাহেন নাই। বার বার নানা কথা বলিয়া গৃহে ফিরাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু যে বিশাল স্রোত পরিমিত স্থানে নির্বদ্ধ থাকিবার নহে, যাহা সমস্ত দেশ প্লাবিত করিয়া দিকদিগন্তে প্রধাবিত হইবে, তাহার গতিরোধ করিবে কে? ভারতী কতক্ষণ প্রতিবন্ধকতা করিবেন? দেশের ধৰ্ম্ম-দুৰ্গতি দূর করিতে নিমাই চলিয়াছেন, তাহার অজস্র নয়নবারি ভারতীয় দৃঢ়তা ও সঙ্কল্প ভাসাইয়া লইয়া গেল, তদীয় ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভারতী বুঝিতে অসমর্থ হইলেন, সুতরাং ভারতীকে দুষিতে পারা যায় না। যে শক্তি মাতা ও পত্নী হইতে অনুমতি প্রাপ্ত হইতে সমর্থ হইয়াছিল কেশব ভারতী তাহার গতিরোধ করিতে পারেন নাই, ইহাতে তাহার দোষ কি ? সন্ন্যাসী তরুণ নিমাই অরুণ বসন পরিধান করিয়া নবীন উদাসীন সাজিলেন, নাম হইল শ্র | যাহারা উপস্থিত ছিলেন, তাহদের অধিকাংশের মনে এই ঘটনাটি পাষাণের রেখার ন্যায় অঙ্কিত হইয়া গিয়াছিল, সংসারের প্রতি অনাস্থা জন্মিয়াছিল, আত্মদৃষ্টি উদ্বুদ্ধ হইয়াছিল। কোন কোন দ্রষ্টা এরূপ বিহল হইয়াছিল যে তাহাদের জ্ঞান লোপ হইয়াছিল; কেহ কেহ মূচ্ছিত হইয়াছিল এবং কেহ কেহ উন্মত্ত হইয়াছিল। ইহা কল্পনার কথা নহে—বাস্তব ঘটনা; গঙ্গাধর নামক একব্যক্তি কেশব