পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭৩ উপসংহার 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত বাথিন্ন্যাস প্রকাশ করিয়া, অচিন্তিত-পূৰ্ব্ব গভীরার্থ-বচন-পরস্পরায় শান্ত সাগর মথিত করিয়া বেদান্তের ব্যাখ্যা করিলেন তাহাতে সাবর্বভৌমের মস্তক ঘূর্ণিত হইল, বিস্মিত হইয়া তিনি মনে করিলেন— “এ শক্তি মানুষে সম্ভবে না। “সাবর্বভৌম বড়ই ম্ৰিয়মাণ হইয়া পড়িলেন। এমন সময় শ্রীগৌরাঙ্গ একটি শ্লোক উচ্চারণ করিয়া তাহা ব্যাখ্যা করিতে সাৰ্ব্বভৌমকে বলিলেন, তাহা এই—— “আত্মারামাশ্চ মুনয়ো নিগ্ৰস্থা অপু’রুক্রমে। কুৰ্ব্বন্ত হৈতুকী ভক্তি মিথ্যস্তুত গুণোহরি।” বাত্যাবিতাড়িত বিক্ষুব্ধ জলধি বক্ষে ভাসমান ব্যক্তি যেমন সাদরে সাময়িক অবলম্বনকে ধরে, সাবর্বভৌম শ্লোকটি পাইয়া তেমনি সন্তুষ্ট হইলেন ও নিজ প্রণয়ে গৌরব পুনঃ প্রতিষ্ঠিত কল্পে অপূবর্ব প্রতিভাবলে শ্লোকটির নয় প্রকার অর্থ করিলেন। অর্থ করিয়া একটু গৰ্ব্বসহকারে সাৰ্ব্বভৌম শ্রীগৌরাঙ্গের অভিমত জানিতে র্তাহার মুখের দিকে চাহিলেন। শ্ৰীগৌরাঙ্গ একটু হাসিলেন, তারপর বলিলেন, “আপনি বৃহস্পতিতুল্য—ব্যাখ্যাও অপূৰ্ব্ব ও অন্যান্য সাধারণ, তবে শ্লোকের আরও অভিপ্রায় আছে।” সাৰ্ব্বভৌমের মুখ পুনঃ মলিন হইল, তৎপর শ্রীচৈতন্যের অভিপ্রায়মত শ্লোকার্থ শুনিতে ব্যগ্র হইলেন। শ্রীচৈতন্য তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রণালীতে শ্লোকের অষ্টাদশ প্রকার অর্থ করিলেন। এইবার আর সাৰ্ব্বভৌমের শ্রীচৈতন্যকে মনুষ্য বোধ রহিল না। তিনি আপনার বিদ্যাপরিমাণ জানেন, স্বীয় ছাত্র নৈয়ায়িক শিরোমণি রঘুনাথের জ্ঞানাস্পদ্ধাও জ্ঞাত আছেন, কিন্তু একি, আজ যে বিদ্যাবিভবের, অনন্ত জ্ঞান গরিমার সৌষ্ঠবসম্পন্ন চিত্র দেখিলেন, তাহা অসীম অপরিমেয়; তাহা কদাপি মানুষে সম্ভাবিত হইতে পারেনা। সাৰ্ব্বভৌমের মনে একথা থাকিয়া থাকিয়া উখিত হইতে লাগিল, তখন তিনি দ্বন-নেত্ৰে ভক্তিভরে সম্মুখবত্তী শ্রীচৈতন্যের প্রতি চাহিতেই তাহার মাথা ঘুরিয়া গেল দেখিলেন সম্মুখে এক বিদ্যুতপ্রভ ঋড়ভুজ মূৰ্ত্তি। ইহা কি সাৰ্ব্বভৌমের চিত্ত বিভ্ৰম? তিনি দেখিলেন যে, সে মূৰ্ত্তির উদ্ধোখিত শ্যামাভ ভুজদ্বয়ে ধনবৰ্বাণ ধূত, মধ্যের নীলদুতি করদ্বয়ে মধুর মুরলী রহিয়াছে এবং নিম্নের পীতকান্তি হস্তদ্বয়ে দণ্ডকমণ্ডলু সুশোভিত। রাম, কৃষ্ণ, গৌর তিনে এক—অভেদ। so সাৰ্ব্বভৌম যখন প্রকৃতিস্থ হইলেন, তখন সেই গবির্বত বৃদ্ধ, যুবকের চরণে, লক্ষণাৎ নিম্নের শ্লোক উচ্চারণপূবর্বক দণ্ডবৎ পতিত হইলেন— “কালান্নষ্টং ভক্তিযোগং নিজং যং প্রাবিষ্কৰ্ত্তং কৃষ্ণচৈতন্য নামা। আবির্ভূত স্তস্য পদারবিন্দে গাঢ়ং গাঢ়ংলীয়তাং চিত্ততুঙ্গঃ ।” নীলাচলের রাজা প্রতাপরুদ্র সাৰ্ব্বভৌমের মুখে এ সংবাদ শুনিলেন, আর র্তাহাদের বর্ণনানুরূপ একটি প্রতিমুৰ্ত্তি শ্রীমন্দিরের পাষাণগাত্রে খুঁদাইয়া রাখিলেন, তাহা হইতেই ষড়ভূজ মূৰ্ত্তির নানারূপ ছবি প্রচারিত হইয়াছে। ২৬. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাঃ ২য় খঃ ৭ম অধ্যায়ে ইহার বিবরণ দ্রষ্টব্য।