পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৭৪ শ্ৰীমহাপ্রভু ১৪৩১ শকের মাঘ মাসে সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়া নীলাচলে আসেন, পরবত্তী বৈশাখ মাসেই তিনি দক্ষিণ দেশের তীর্থ সমূহ দৰ্শন করিতে গমন করেন, এ অপূৰ্ব্ব কাহিনী বর্ণনের একান্ত স্থানাভাব। দক্ষিণের বহু তীর্থ দৰ্শন ও বহু সহস্ৰ লোককে বৈষ্ণবধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিয়া দুই বৎসর পরে পুনঃ নীলাচলে আগমন করেন। শ্রীগৌরাঙ্গের পরমভক্ত গদাধর পণ্ডিতের নাম একবার মাত্র বলিয়াছি। গদাধর পণ্ডিত শ্ৰীমহাপ্রভুর সহিত নীলাচলে গিয়াছিলেন, তিনি তদবধি, আর কোথায়ও যান নাই; নীলাচলেই ছিলেন, সময় সময় সুস্বরে শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করিয়া শুনাইতেন। একদিন স্বচ্ছতোয়া বিস্তুতরক্ষা নরেন্দ্র-সরসী-তীরে ভক্তগণ সমবেত, শ্রীগৌরাঙ্গ ও নিতানন্দ আজ উপস্থিত, গদাধর শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করিতেছেন; গৌর নিতাই এক আসনে দুই ভাই উপবিষ্ট হইয়া শুনিতেছেন, সম্মুখে সাৰ্ব্বভৌম, রামানন্দ, স্বরূপ প্রভৃতি। এমন সময় রাজা প্রতাপরুদ্র একটি চিত্রকর সহ তথায় উপস্থিত হইলেন ও এক সুন্দর চিত্র অঙ্কিত করিয়া নেওয়াইলেন। ইহাই গৌরনিতাইর অবিকল চিত্র। গদাধর যে শ্রীমদ্ভাগবত পুথি পাঠ করিতেন, তাহার অক্ষর নেত্রজালে অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছিল’ এইজন্য তিনি একখানা নূতন পুথি লিখিয়া লইয়াছিলেন, উহার পাশ্বে ক্ষুদ্রাক্ষরে স্বয়ং শ্ৰীমহাপ্ৰভু কোন কোন শব্দের অর্থ লিখিয়া দিয়াছিলেন। শ্রীনিতানন্দ নিজ শিষ্য বৃন্দাবন দাসের জন্য উক্ত গ্রন্থ গদাধর হইতে গ্রহণ করেন, সে গ্রন্থ বৃন্দাবন দাসের পাট দেনুড়ে এখনও রহিয়াছে। তাহাতে শ্ৰীগৌর গদাধরের যুগল হস্তাক্ষর দেখার সুযোগ ঘটে।” শেষ কথা শ্ৰীমহাপ্রভু নীলাচলে রহিলেন, গৌড় দেশীয় ভক্তবর্গ প্রতিবৎসর রথোৎসবের সময় নীলাচলে গিয়া র্তাহার সহিত সম্মিলিত হইতেন ও ২/৩ মাস তথায় অতিবাহিত করিতেন। মধ্যে একবার মহাপ্ৰভু বৃন্দাবন গমন উপলক্ষে রামকেলি গ্রাম পৰ্য্যন্ত আসিয়াছিলেন; সেবার আর তাহারা নীলাচলে যান নাই। রামকেলিতে রূপ ও সনাতন তাহার সহিত গিয়া দেখা করেন, ইহারা হুসেন শাহের প্রধান কৰ্ম্মচারী ছিলেন। শ্রীগৌরাঙ্গের দর্শনাবধি ইহাদের সংসারে বিতৃষ্ণা জন্মে, এবং তাহারা গৃহত্যাগ ২৭. যে ব্রাহ্মণ শ্ৰীগৌরাঙ্গের সন্ন্যাস দর্শনে পাগল হইয়া “শ্রীচৈতন্য দর্শন জন্য নীলাচলে গমন করেন; দাস নামে খ্যাত হন, তাহার পুত্রের নাম শ্রীনিবাস। শ্রীনিবাস শ্রীচৈতন্য দর্শন জন্য নীলাচলে গমন করেন; কিন্তু তাহার চৈতন্য দর্শন ঘটে নাই। তিনি পথে থাকিতেই শ্রীগৌবাঙ্গের অস্তদ্ধান ঘটে। শ্রীনিবাসেব আশা পূর্ণনা হওয়ায় নীলাচলে পৌছিয়া তিনি ব্যাকুলিত চিত্তে ধবাবলুষ্ঠিত হইতে থাকেন, অনুচর মুখে শ্রীচৈতন্য-বিরহ-কাতর রাজা এই সংবাদ শুনিয়া, তাহাকে শ্ৰীমহাপ্রভুর প্রতিকৃতি দেখাইয়া প্রকৃতিস্থ করেন; চিত্ৰখানা শ্রীনিবাস আপন বুকে ধারণ করেন। ইহার ভক্তি ও ভাব দর্শনে বাজা আর উহা কিবাইযা লন নাই, এবং শ্রীনিবাস তাহা লইয়া দেশে আসেন। ইহা তাহার গুহেই ছিল এবং তাহার বংশধরগণ অধিকারী হন। মহারাজ নন্দকুমার শ্রীনিবাস বংশের শিষ্য ছিলেন, তিনি গুরু রাধামোহন ঠাকুব হইতে উহা প্রাপ্ত হন। কুঞ্জঘাটার সেই তৈলচিত্র হইতেই এক্ষণে শ্রীগৌরাঙ্গের আসল প্রতিকৃতি প্রচাবিত হইতেছে। আমাদের শ্রীনিতাইলীলা লহরী গ্রন্থে এই চিত্র সন্নিবেশিত আছে। ২৮ অনুরাবল্পী নামক প্রাচীন গ্রন্থে লিখিত আছে যে এই গ্রন্থ বৃন্দাপনে নীত হয়। ২৯. এই ৪র্থ ভাগে “শ্রীরাস পণ্ডিত” প্রসঙ্গে ইহাব নামও লিখিত হইয়াছে। ৩০. হস্তাক্ষর চিত্রেব চারিটি ছত্রে যাহা লিখিত আছে, তাহা বিজয়া পত্রিকায় আমরা সচিত্র প্রকাশ করিয়াছিলাম।