পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s৩ তৃতীয় অধ্যায় ; উপেন্দ্ৰ বংশ বর্ণন 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত আমার বাচিয়া থাক। শাশুড়ীর আদেশের কথা আর লুকাব না; আমার দোষে নিমাইর যেন কোন অনিষ্ট না ঘটে!” পুত্র-স্নেহ-বিহুলা শচীদেবীর মনে এইরূপ চিন্তার উদ্রেকমাত্র তৎক্ষণাৎ পুত্রকে শ্রীহট্টে যাইতে অনুরোধ করিলেন। তাহাতেই শ্ৰীমহাপ্রভুর পুনৰ্ব্বার পূৰ্ব্বদেশাগমন ঘটে। এই সময়ে শ্ৰীমহাপ্রভুর আরও দুই এক স্থলে অলক্ষিতে গমন করিয়াছিলেন বলিয়া গ্রন্থাদিতে লিখিত আছে। তিনি শ্রীহট্টে আসিলে প্রথমে বুরুঙ্গায় যেরূপে রামা-সম্মিলন ও কুটুম্ব-পরিচয় ঘটে, তাহা দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলিয়াছি। বুরুঙ্গা হইতে শ্ৰীমহাপ্রভু ঢাকাদক্ষিণে উপস্থিত হন। শোভা-সম্মিলন সায়াহকাল, অস্তোন্মুখ সূর্য্যের সমুজ্জ্বল স্বর্ণ-কিরণ রেখা হরিত পত্রাবলীতে প্রতিফলিত হইয়া দিক হরিদ্রাভ হইয়া উঠিয়াছে, নিৰ্জ্জন গ্রাম্য বাটিকা যেন হিঙ্গুল রাগে রঞ্জিত হইয়াছে পূৰ্ব্বদিকে ক্রমশঃ পিঙ্গলাভা প্রকাশ পাইতেছে, বায়সকুল ব্যাকুলভাবে পশ্চিমদিকে উড়িয়া যাইতেছে, এমন সময় প্রতপ্ত কাঞ্চন-লাঞ্ছিত কান্তি গৌরবিগ্রহ পিতামহ গৃহে উপনীত হইয়া বহিৰ্ব্বাটিকায় ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; বোধ হইল যেন ঐ স্বৰ্গ প্রতিমার অঙ্গ-কান্তিতে দিক প্রভাসিত হইয়া উঠিয়াছে হরিত পত্রাবলী পীত-দীপ্তি প্রাপ্ত হইয়াছে। পরমানন্দ-পত্নী সুশীলদেবী এই নবীন উদাসীনকে প্রথমেই দেখিতে পাইলেন ও জরাতুয়া শাশুড়ীকে র্তাহার আগমন সংবাদ বলিলেন। বৃদ্ধা ধীরে ধবে কোন প্রকারে আসিলেন, দণ্ডীকে তাহার মনুষ্য বুদ্ধি হইল না। তিনি নারায়ণ বুদ্ধার সাধ মিটিল। সুশীলা পরম যত্নে পায়স পিষ্টক প্রস্তুত পূৰ্ব্বক প্রভুকে আহার করাইলেন। নাতির সহিত নানাবিধ আলাপ হইল, সাংসারিক সুখদুঃখের কথাও বাকি থাকিল না। উপেন্দ্র মিশ্র ধনী ছিলেন বটে, কিন্তু তৎকালে নানা কারণে তৎপুত্ৰগণের সাংসারিক অবস্থা ইন হইয়া পড়িয়াছিল, বৃদ্ধা তাই নাতির কাছে সে কথাও বলিলেন। এইরূপে শ্ৰীগৌরাঙ্গের সহিত বৃদ্ধার যখন কথা হইতেছিল, মেহের ভরে বৃদ্ধার, নাতির প্রতি তখন সন্ন্যাসী বুদ্ধির লেশ মাত্রও ছিল না; মেহের গাঢ়তায় তখন নিৰ্ম্মল-হৃদয়া বৃদ্ধার নেত্রে তাহার স্নেহাদ্র-মধুর অপূৰ্ব্ব রূপ প্রতিভাত হইল, স্নেহাবশে বৃদ্ধা দেখিলেন যে গৌরসুন্দর সন্ন্যাসী বেশে নহেন। যেন গৃহস্থের সরল ছেলে! বৃদ্ধার তখন বাহ্যজ্ঞান নাই, তিনি যেন এক অজানা রাজ্যে চলিয়া গেলেন, অমনি শ্ৰীগৌরাঙ্গের প্রতি তাহার ঈশ্বর-বুদ্ধির উন্মেষ হইল। বৃদ্ধার চক্ষের সম্মুখে হঠাৎ যেন স্বর্ণ কান্তি ইন্দ্ৰনীলমণিদু্যতিতে পরিবৰ্ত্তিত হইয়া গেল। এ কি? ইহা কি জরাগ্রস্তা শোভাদেবীর দৃষ্টিবিভ্রম? না তাহার মানসিক ভাব-সঞ্জাত চিত্ত বিক্রিয়ার ফল? বৃদ্ধা ভক্তি-পূতচিত্তে স্ততি করিতে লাগিলেন। ২২ এই সময়ে তাহার মাত্র দুই পুত্র জীবিত ছিলেন, প্রাচীন মনঃসন্তোষণী গ্রন্থে উক্তি-বাক্যে তাহা জানা যায। “তান যেই দুই পুত্র অদ্য বৰ্ত্তমান । অদ তান সেই সব আছয়ে সন্তান । বৃত্তিহীন হইয়া তারা বাঁচিবে কেমনে।”—ইত্যাদি।