পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২০৬ ক্রোধেতে মোহেতে স্বামী স্ত্রীকে মাতা ভগ্নি বলিলে এবং স্ত্রী স্বামীকে পিতা বলিলে—“” ইত্যাদি সোণারামের দুই পুত্র রসরাজ ও শম্ভুনাথ । শন্তুনাথের কথা ১৮৩০ খৃষ্টাব্দে শম্ভুনাথের জন্ম হয। শম্ভুনাথ শৈশবে ঘটনাবশে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হইয়া পঙ্গু হইয়া পড়েন; অপরের সহায়তা ব্যতীত চলা ফেরা করিতে, কি গৃহ হইতে বহির্গত হইতে পারিতেন না। এই জন্য তিনি বিবাহ করেন নাই। হবিষ্যান্ন ভোজন, পূজা অৰ্চনা ও ব্ৰতাদির অনুষ্ঠানপূৰ্ব্বক তিনি চিরকৌমাৰ্যব্রত অবলম্বন করেন। তাহরন্দ্ব আর একটি প্রিয়কাৰ্য ছিল গ্রস্থানুলিপি। তাহার দক্ষিণ হস্তের তিনটি অঙ্গুলী কাৰ্যক্ষম ছিল না। তথাপি তিনি বৃদ্ধা ও তজ্জনী মাত্র সাহায্যে ৩০ খানা গ্রন্থের অনুলিপি প্রস্তুত করেন। এতদারা তাহার বিদ্যানুরাগের প্রকৃষ্ট পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। এতদ্ব্যতীত তৎকত্ত্বক ৫৪ খানা গ্রন্থ সংগৃহীত হইয়াছিল। তিনি যে সকল গ্রন্থের প্রতিলিপি করেন, তাহার কোন কোনটির সমাপ্তিতে স্বরচিত এক একটি শ্লোক লিখিয়া সংস্কৃত জ্ঞানের সুন্দর পরিচয় দিয়াছেন। তাহার কৃত আত্মবারমাসী কবিতায় তিনি েিজর দুঃখের কথা যেরূপ ব্যক্ত করিয়াছেন, তাহাতে লেখকের প্রতি সমবেদনা না হইয়া পারে না। উহা ১২৬২ বাংলায় রচিত হয়। উহার প্রথমেই লিখিত হইয়াছে ৪— “বৈশাখ মাসের দুঃ শুনা দুর্গা মাই। এ ভাবে বাচিয়া মোর কিছু লভ্য নাই। হস্ত গেল পদ গেল বদন মলিন। সকল ছাড়িয়া গেলা “মোরে” জানি দীনহীন।” ধৰ্ম্মানুরাগী শম্ভুনাথ একাদশীতে নিরস্তু উপবাস করিতেন এবং বৎসরের প্রথমেই একাদশীর একটি তালিকা প্রস্তুত করিয়া রাখিতেন। তিনি গুরুর পাদোদক বোতল পূর্ণ করিয়া রাখিয়া দিতেন এবং বৎসর ভরা প্রত্যহ একটু একটু পান করিতেন। দুর্গোৎসবের সময় প্রতিবেশীদিগকে নব বস্ত্র দিতেন এবং আম কাঠালেন সময় ফলাহার করাইয়া আনন্দানুভব করিতেন। দুর্গোৎসব কালে দেবীর জন্য পুষ্পচয়ন করিতে অসমর্থ ছিলেন এবং দশমীর বিসৰ্জ্জনাদি দর্শনে যাইতে পারিতেন না বলিয়া তাহার বড়ই দুঃখ ছিল। তিনি লিখিয়াছেন ঃ— “পদ সুখে না করিলাম পুষ্প আয়োজন। হস্ত সুখে না করিলাম দেবা পূজন।। এই দুষ্ক প্রাণে মোর কত বা সহিমু। মাগো আমি যম ঘরে কত দিনে যাইমু।” পুনশ্চ– “দশরাতে আইলে দুর্গা না পারি প্রণতি। দেখিয়া দুর্গার উৎসব চক্ষের গোচরে।