পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২০৮ রামজীবন ও রামচন্দ্র নামে তিন পুত্র ছিলেন। কাচাদিয়া ইহাদের সময়ে গদাগৰ্ভস্থ হইয়া পড়িলে, ইহারা তথা হইতে শ্রীহট্টের বাণিয়াচঙ্গে আসিয়া বাস করেন। কিছুদিন বাণিয়াচঙ্গে বাস করার পর রামজীবন কৌড়িয়া পরগণায় গমন করেন; অপর ভ্রাতৃদ্বয়ের মধ্যে একজন বাণিয়াচঙ্গেই স্থায়ীরূপে থাকেন এবং অন্যতর তরফে চলিয়া যান। আমাদের বিবরণ প্রদাতা শুনিয়াছেন যে তরফে এখনও এই বংশীয় কেহ কেহ আছেন। বাণিয়াচঙ্গের জাতুকৰ্ণ গোত্রীয়গণ উত্তর কৌণ্ডিল্য গোত্রীয়গণ গুরু বংশীয় বটেন। বাণিয়াচঙ্গের ব্রাহ্মণগণের মধ্যে কৌণ্ডিল্য গোত্রীয়গণ বেশ সম্মানিত ছিলেন। দুঃখের বিষয় যে বাণিয়াচঙ্গের বংশশাখা প্রায় নিৰ্ম্মল, একটি ঘর মাত্র আছে। রামজীবনের পুত্রের নাম কামদেব; ইহার পুত্র জগন্নাথ তর্কবাচস্পতি। কৌড়িয়াতে রামজীবন ভদ্রাসন স্থাপন করিলেও, তাহার বংশ তথায় স্থায়ী হয় নাই। ইহারা শ্রীহট্ট পরিত্যাগ করিয়া কাছাড়বাসী হন। কিন্তু কাছাড়েও তখন তাহাদের আর্থিক অবস্থা উন্নত ছিল না; কাছাড়ে প্রথম জগন্নাথের পুত্র “সৰ্ব্বানন্দ শৰ্ম্মার দেড়হাল পরিমিত ভূমির শস্যমাত্র জীবিকা নিৰ্ব্বাহের সম্বল ছিল।” সৰ্ব্বানন্দের ছয়পুত্র, যথা—সম্পদরায়, রামশরণ, রামচরণ, কৃষ্ণচরণ, নীলমণি ও হরিচরণ। হরিচরণ শৰ্ম্মা রায়বাহাদুর ১৭৪৯ শকাব্দে হাইলাকান্দির গাঙ্গপার ধুমকের গ্রামে হরিচরণ জন্মগ্রহণ করেন। “১৬ বৎসর বয়সে তিনি পিতৃমহীন হন। অবস্থা শোচনীয় ছিল বলিয়া ২১ বৎসর বয়সে র্তাহাকে ৮ বেতনে খেদা মোহরের কার্য গ্রহণ করিতে হয়।” অল্পকাল মধ্যে কর্তৃপক্ষ তাহাকে ২০ টাকা মাসিক বেতনে উত্তর কাছাড়ের গঞ্জম ষ্টেশনে মোহরের কাৰ্য্যে প্রেরণ করেন। কিন্তু তথাকার জলবায়ু তাহার অসহ্য হওয়ায় তিনি সে কাৰ্য্য ত্যাগ করিতে বাধ্য হন। “১৮৫৫ খৃষ্টাব্দে ইংরেজ বণিকগণ কাছাড়ে চা বাগান স্থাপন করিতে আরম্ভ করেন। তিনি মুদুরপার বাগানে “বাবু মনোনীত হন” “গুটী সংগ্রহের জন্য বাগানের কর্তৃপক্ষ তাহাকে মণিপুরে প্রেরণ করেন। এই সুযোগে তিনি মণিপুরী ভাষা আয়ত্ত করেন এবং মহারাজ চন্দ্ৰকীৰ্ত্তি সিংহের সহায়তায় বিস্তর গুটী সংগ্ৰহ করিয়া প্রত্যাগমন করেন; ফলে তিনি ৫০ টাকা বেতনে উন্নীত হন।” “অবশেষে উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করিয়া তিনি ১৫০ বেতনে বেরিস্মিথ কোংর বাগিচাগুলির ইনস্পেক্টর নিযুক্ত হন।” “১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে প্রথম ভাগে লুসাই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। “গবর্ণমেন্ট লোসাইদিগকে দমন করিবার নিমিত্তে সৈন্য প্রেরণ করিলেন।” “এই অভিযানে এড়গার সাহেবের অধীনে কুলি ও রসদসংগ্রহের ভার প্রাপ্ত হইয়া হরিচরণ শৰ্ম্মা গবর্ণমেন্টের যথেষ্ট সহায়তা করিয়াছিলেন। ফলে তিনি ১০০ বেতনে তহশীলদারের কার্য ও বাঙ্গালা গভর্ণমেন্টের ধন্যবাদ লাভ করেন।” “এড়গার সাহেব দুইদল সৈন্য ও হরিচরণ শৰ্ম্ম সমভিব্যাহারে লুসাই যাত্রা করেন। লুসাই ভাষী ইতঃপূৰ্ব্বে আয়ত্ত থাকায় এই অভিযানে হরিচরণ শৰ্ম্মা গবর্ণমেন্টের বিশেষ সাহায্য করিতে সক্ষম হন।” “কাছাড়ে প্রত্যাগমন করিলে পর তিনি বাঙ্গালা গবর্ণমেন্টের ধন্যবাদ ও ৪৭০ একর পরিমিত নিষ্কর ভূমি এবং একটি হস্তী উপহার প্রাপ্ত হন।” ২. উদ্ধত অংশ সুবমা ১৩১৯ বাং ১০ই আষাঢ় হইতে গৃহীত।