পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪৪ “দৃষ্টা রূপদ্বয়ং সাপি বিস্মিতা ভক্তিসংযতা। নমস্তুভাং ভগবতে ইত্যাহ পুলকবিতা।”—শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী। আর শ্ৰীগৌরাঙ্গ তথায় অবস্থান করিলেন না, বিদায় লইয়া চলিলেন ও বৃদ্ধ গোপেশ্বর শিব এবং অমৃতকুণ্ড দর্শন পূৰ্ব্বক চলিয়া আসিলেন। বৃদ্ধ গোপেশ্বরের কথা, শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে ১ম ভাগ ৯ম অধ্যায়ে বর্ণিত হইয়াছে অমৃতকুণ্ডের চিহ্নমাত্রও এক্ষণে দৃষ্ট হয় না। ঢাকাদক্ষিণে শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্য বিগ্ৰহ মহাপ্রাণ মহাপুরুষ-সকাশে যাচঞা অমোঘ হয়। বৃদ্ধ স্বজনের জন্য ধন প্রার্থনা করিয়াছিলেন। শ্ৰীমহাপ্ৰভু তাহাকে দুটি রত্ন দিয়া ঢাকাদক্ষিণ হইতে প্রস্থান করিলেন। সে রত্ব আর কিছু নহে, যে রূপ বৃদ্ধার নয়নে নয়নে লাগিয়া রহিয়াছিল, হিয়ার মাঝারে পশিয়া গিয়াছিল, ইহা তাহাই শ্ৰীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্য বিগ্রহ। এই দুই রূপই বৃদ্ধার অন্তিম কালের সম্বল হইল;বৃদ্ধা সেই দুই বিগ্রহ প্রকাশ করিলেন। সেই দুই বিগ্রহ তদবধি ঢাকাদক্ষিণে পূজিত হইতেছেন। এই দুই বিগ্রহের প্রভাবে লোকমণ্ডলী আকৃষ্ট হইল, নানা জনে নানারূপ আশ্চয্য দর্শন করিল;" আর ঠাকুর দর্শনে আসিতে লাগিল; সেই হইতে মিশ্রবাড়া “ঠাকুরবাড়ী” নামে খ্যাত হইল।” শ্ৰীমহাপ্রভুর বিগ্রহ বহু স্থানে আছেন, কিন্তু কোন স্থানেই শ্ৰীকৃষ্ণ মূৰ্ত্তির পাশ্বে গৌরমূৰ্ত্তি স্থাপিত ও পূজিত হইতে দেখা যায় না। বৃদ্ধ যেরূপ দুইরূপ দর্শন করেন, এই বিগ্রহদ্বয় তাহারই স্মারক, ইহার অন্য কোন মীমাংসা নাই। মিশ্র-সন্তানগণ কালক্রমে দীনদশাগ্রস্ত হইয়াছিলেন বলা গিয়াছে, কিন্তু, অচিরাৎ তাহাদের দিনপাতের নূতন পন্থা শ্রীবিগ্ৰহ হইতে হইল। লোকের প্রদত্ত প্রণামী ইত্যাদিতে তাহাদের জীবনোপায়ের সংস্থান হইতে লাগিল। এই জন্য মিশ্রবংশীয়গণ র্তাহাদের জ্ঞাতি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শ্রীবিগ্রহকে “স্বগোত্ৰীয়ের বৃত্তিদাতা” বলিয়া বর্ণনা করেন। শ্ৰীমহাপ্রভুর কাছে শোভাদেবী কথাপ্রসঙ্গে পুত্রপৌত্রাদির দৈন্যদশার কথা বলিয়াছিলেন, বৃদ্ধার অভিপ্রায় এই উপায়ে তিনি পূর্ণ করিতেছেন, তাহারা সগৌরবে ইহা ব্যক্ত করিয়া থাকেন। উপেন্দ্র মিশ্রের বাড়ী ও দেওয়ানের মন্দিরাদি বৰ্ত্তমানে যে বাটিকা “ঠাকুরবাড়ী” নামে পরিচিত, ইহা আদি ঠাকুরবাড়ী অর্থাৎ উপেন্দ্র মিশ্রের ২৩. পূজক বংশের কথা। শোভাদেবী বিগ্রহ স্থাপনের পর যাহারা বিগ্রহ পূজায় নিয়োজিত হন, তাহারা আয়ে কোনরূপ অংশ পাইতেন না, পরে তাহারা ইহার দাবি করিয়া কৃতকাৰ্য হইতে না পারিয়া বিতাড়িত হন। শ্ৰীমহাপ্রভুর পূজারী কাশ্যপ গোত্রীয় উক্ত ব্রাহ্মণ বংশ ঠাকুববাড়ীব সংলগ্নে ও ৪ খানা বাড়ীতে ছিলেন। তন্মধ্যে পূৰ্ব্বের বাড়ীটি ঠাকুরবাড়ীর ভুক্ত হইয়া পডিয়াছে। বৰ্ত্তমান বংশীয়গণ ঠাকুরবাড়ী হইতে আরও পূৰ্ব্বে উঠিয়া গিয়া বাস * করিতেছেন। এই প্রাচীন পূজকংলশ এস্থলে লুপ্ত প্রায, এখন কেবল এক ঘর মাত্ৰ বৰ্ত্তমান আছেন। ইহারাই পূৰ্ব্বে দেবতাব ভোগ প্রস্তুতের পাবিশ্রমিক পাইতেন। পরে (স্বগীয় গৌরকিশোর ও বিষুণ ঠাকুরদের সময়ে) তাহারা মিশ্রবংশীয়গণ কত্ত্বক পুজা হইতে বঞ্চিত হন। (—১৮৭৪ ইং ১৫৮ নং মোকদ্দমার রায়ের মৰ্ম্ম)। ২৪, ঢাকাদক্ষিণের শ্রীবিগ্রহ সম্বন্ধে নানা আশ্চৰ্য ঘটনা শুনা যায়, এ সকল “বিগ্রহলীলা” ইতিবৃত্তে প্রকাশযোগ্য নহে। ২৫. ঠাকুরবাড়ী শ্রীহট্টের সৰ্ব্বপ্রধান বৈষ্ণব তীর্থ, ইহার কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ১ম ভাগ ৯ম অধ্যায়ে বর্ণিত হইয়াছে।