পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২২০ এই গ্রন্থ প্রণেতা শ্রীযুক্ত অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি মহাশয় সাহিত্যিক সমাজে অপরিচিত নহেন। পণ্ডিত শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ মহাশয় অচ্যুতচরণ বাবুর বিশেষ সাহায্যকারী। ইহাদের উভয়ের যত্নে এই সৰ্ব্বাঙগ সুন্দর বইটি লোকলোচনের সম্মুখবর্তী হইয়াছে। ইহারা উভয়েই আমাদের ধন্যবাদের পাত্র । শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তকে আদর্শ বলিয়া বাঙ্গালার প্রত্যেক জেলার ইতিহাস রচনা করা এক্ষণ আমাদের কৰ্ত্তব্য হইয়াছে। ৩—সাপ্তাহিক সংবাদপত্র বসুমতী—৩বা কাৰ্ত্তিক, ১৩১৯ সাল। (লেখক শ্রীযুক্ত সুরেশচন্দ্র সমাজপতি।) শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত –পূৰ্ব্বাংশ ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক। শ্রীযুক্ত অচ্যুতচরণ চৌধুরী প্রণীত, মূল্য চারি টাকা । আজ কাল আমাদের দেশে ইতিহাসের যথেষ্ট অনুসন্ধান ও আলোচনা হইতেছে, ইহা যে অত্যন্ত সুখের বিষয়, তাহাতে আর সন্দেহ নাই, যাহারা মনে করেন, বাঙ্গালা দেশ অত্যন্ত আধুনিক,— বাঙ্গালার আলোচনাযোগ্য ইতিাস নাই, তাহারা যে নিতান্ত ভ্রম প্ৰবৰ্ত্ত, বৰ্ত্তমান যুগের অনুসন্ধান তাহা দিন দিন দৃঢ়তার সহিত সপ্রমাণ করিয়া দিতেছে। বাঙ্গালা দেশ যতই আধুনিক হউক না কেন,— আমরা এখন যে সকল দেশের ইতিহাস আলোচনা করিয়া থাকি, সেই সকল দেশ অপেক্ষা বঙ্গদেশ প্রাচীনতর। আর্যগণ বহু সহস্র বৎসর পূবেৰ্বই বঙ্গে আসিয়াছেন। বঙ্গের উত্তরপূবর্ব প্রান্তে শ্রীহট্ট অঞ্চল। শ্রীহট্ট বঙ্গেরই অঙ্গীভূত। বৃটিশ রাজ শাসন সৌকর্যার্থে শ্রীহট্টকে যে ভাগেই স্থাপিত করুন না কেন, আমরা চিরকালই শ্রীহট্টকে আপনার বলিয়া আসিতেছি, আপনার বলিয়াই মনে করিব। জ্ঞাতি স্থানান্তরিত হইলেই হিন্দুর কখনই তাহার সহিত জ্ঞাতিত্ব অস্বীকার করে না। দুরস্থ জ্ঞাতির অশৌচপালনে হিন্দু কখনও পরাজুখ নহে। সুতরাং শ্রীহট্ট আসামভুক্তই হউন, আব তিব্বতভুক্তই হউন—শ্রীহট্ট আমাদের, শ্রীহট্ট বাঙ্গালারই। এই শ্রীহট্টের অতীত ইতিহাস বাঙ্গালারই গৌরবের পরিচায়ক। যখন বাঙ্গালার অনেক আধুনিক সমৃদ্ধ অঞ্চল, বিস্তীর্ণ সলিল রাশিতে নিমনিজত ছিল,—তখনও শ্রীহট্ট বক্ষ বিস্তীর্ণ করিয়া আমাদেরই সে পূবর্বগত আৰ্য্যগণকে আশ্রয় দিয়াছে। আমাদেরই কত ধৰ্ম্ম প্রাণ পূবর্বপুরুষ তীর্থযাত্রা উপলক্ষে শ্রীহট্টে যাইয়া আপনাদিগকে কৃতাৰ্থ মনে করিয়াছেন। প্রায় চারি সহস্র বর্ষ ধরিয়া, এই অঞ্চলে আর্য্যকীৰ্ত্তির বিজয় বৈজয়ন্তী উড়িয়াছিল। সে কীৰ্ত্তিকথা অধ্যয়ন করিবার জন্য যাহার চিত্ত ব্যাকুল না হয়,—তিনি হিন্দু নাম গ্রহণের যোগ্য নহেন। এতদিন শ্রীহট্টের ইতিহাস সহজপ্রাপ্য ছিল না, এখন উহা সহজ প্রাপ্য হইয়াছে। আলোচ্য গ্রন্থাখানিতে এত বিস্ময়কর ব্যাপার এরূপ সুন্দর ভাবে নিপুণতা সহকারে প্রদত্ত হইয়াছে যে ইহা পাঠ করিলে বিস্মিত হইতে হয়। গ্রন্থকার মহাশয এই গ্রন্থে এত সুন্দর ও প্রাচীন তথ্য সংগ্ৰহ করিয়াছেন যে, ইহা পাঠ করিয়া তাহাকে ভূয়সী প্রশংসা না করিয়া থাকা যায় না। গ্রন্থকার মহাভারতের সময় হইতে বৰ্ত্তমান পৰ্য্যন্ত প্রায় পঞ্চসহস্ৰ বৎসরের ইতিহাস অতি সুন্দরভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। গ্রন্থের ভাষা এত সুললিত, যুক্তি এত সুবিন্যস্ত যে, উহা পাঠ করিতে আরম্ভ কবিলে শেষ না করিয়অ থাকা যায় না। প্রতি ছত্ৰে ছত্রে পত্রে পত্রে পাঠকের কৌতুহল বৃদ্ধি পায়। সংবাদ পত্রের সংক্ষিপ্ত স্থানে এইরূপ