পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৬৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২২৪ পড়িয়া অনেক লিখিলাম। অবশিষ্ট তৃতীয় ও চতুর্থ ভাগ প্রকাশিত হইলে, বাঙ্গালীর মঙ্গল-বঙ্গ সাহিত্যের উন্নতি। আমাদের জাতীয় ইতিহাস নাই বলিয়া এতদিন যে একটা কলঙ্ক, এই শ্রেণীর গ্রন্থ যত অধিক প্রচার হইবে, ততই তাহার ক্ষালন হইবে। এই মূল্যবান গ্রন্থ সংস্কলন করিয়া তত্ত্বনিধি মহাশয় বঙ্গ সাহিত্যে বিজয়কীৰ্ত্তি রক্ষা করিয়াছেন। শ্রীভগবানের নিকট প্রার্থনা করি,—গ্রন্থকার তাহার ইতিবৃত্ত খানি সম্পূর্ণ করিয়া ধন্য হউক। পরিদর্শক—২৭শে আগষ্ট ১৯১১ ইং “শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত—পূৰ্ব্বাংশ” “যাহারা বৈষ্ণব সাহিত্যের সন্ধান রাখেন, যাহারা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হইতে প্রকাশিত গৌরপদ তরঙ্গিনী প্রভৃতি গ্রন্থ অধ্যয়ন করিয়াছেন, তাহারা জানেন যে বৰ্ত্তমান যুগে বৈষ্ণব সাহিত্য সম্বন্ধে বিশিষ্ট মত প্রকাশ করিতে যাহারা সক্ষম, শ্রীহট্টের পণ্ডিত অচ্যুতচরণ র্তাহাদের মধ্যে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে র্তাহার স্থান সৰ্ব্বপ্রথম। শ্রীহট্ট জানে না, যে এমন রত্ন তাহার গর্ভে আছে। কিন্তু বাংলাদেশ তাহা বিশে, ভাবেই অবগত আছে। শ্রীযুক্ত দীনেশচন্দ্র সেন প্রণীত “বাংলাভাষা ও সাহিত্য” গ্রন্থের সুদীর্ঘ ভূমিকায় কৃতি লেখক তত্ত্বনিধি মহাশয়ের কিরূপ গুণগান করিয়াছেন, তাহা কাহারো অবিদিত নাই। বৈষ্ণব পদকৰ্ত্তা ও বৈষ্ণবাচার্যগণের পদরজঃ শোভিত দেশে অচ্যুতচরণ জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন, দশবৎসরের অক্লান্ত পরিশ্রমে সেই দেশের ইতিবৃত্ত লিখিয়া বঙ্গীয় সাহিতে আজ তিনি স্বার্থকনামা হইয়াছেন। তারপর যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় আপনার নাম এক সময়ে উজ্জ্বল করিয়াছিলেন, যিনি সাহিত্য সাধনার ব্রত গ্রহণ করিয়া উত্তর বঙ্গের সাহিত্য সম্মিলনীতে কর্ণধারের কার্য্য করিয়াছিলেন, আজ যিনি বঙ্গীয় সাহিত্যসম্মিলনীর “পরিচালনা সমিতি’র সভ্য, সেই অধ্যাপক পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ মহাশয়ও ধন্য! তিনি দুই সহস্রাধিক মুদ্রা ব্যয় করিয়াছেন, দশবৎসর গ্রন্থকার যশোপ্রার্থী না হইয়া আপন জন্মভূমিখণ্ডের, শ্রীহট্ট প্রদেশের পুরাবৃত্ত সঙ্কলিত করিয়াছেন, ইহা তাহার পক্ষে কম গৌরবের বিষয় নহে। ব্যক্তি বিশেষের চেষ্টায় এইরূপ বিরাট সাহিত্যানুষ্ঠান বঙ্গদেশে বড়ই বিরল; বিশেষতঃ আমরা জানি বিদ্যাবিনোদ মহাশয় এই গুরুকার্য্য সম্পাদনের জন্য কাহারো দ্বারস্থ হন নাই, অথচ ভগবানও তাহাকে অজস্র ধনরত্বের অধিকারী করেন নাই। পুস্তকের সঙ্কলন প্রণালী অভিনব ও আধুনিক। বিজ্ঞাপন দিয়া দশ বৎসর ব্যাপিয়া সমস্ত জিলার সন্ত্রান্ত ও বিদ্যান ব্যক্তিদিগের আনুকূল্যে তথ্য সংগৃহীত হইয়াছে। স্তুপাকার তথ্য, সংবাদ, গুজব, কাহিনী, সত্য ও মিথ্যার পবর্বত প্রমাণ কাগজের রাশি আলোড়িত করিয়া আজ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত যুগন্তের তিমির দূর করিয়অ লোকলোচনের সমক্ষে বাহির হইয়াছে। বাংলাদেশে এই প্রমালীতে আজ পর্যন্ত এত বৃহৎ একখানি ইতিবৃত্তও বাহির হয় নাই। অন্যান্য ইতিবৃত্তের সহিত তুলনায় শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের কিছু বিশেষত্ব আছে; শ্রীহট্ট প্রাচীন কালে এক রাজ্যের রাজধানী ছিল না। বহুতর নৃপতিপুঞ্জে ও স্বাধীনরাজ্যে এইপ্রদেশে গঠিত ছিল। এক রাজ্যের কাহিনী, অন্যরাজ্যের উপকথার সহিত জড়িত হওয়ায় ঐতিহাসিক গবেষণার পথ কত যে কণ্টকাকীর্ণ, তাহা ঐতিহাসিক অনুসন্ধানলিঙ্গু, ব্যক্তিমাত্রের অবিদিত নহে। তারপর শ্রীহট্ট অতি প্রাচীন দেশ, বাংলাদেশ যখন অসভ্যসেবিত,