পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫১ তৃতীয় অধ্যায় ; উপেন্দ্র বংশ বর্ণন 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত রতিকান্ত পরে হেড়ম্বেশ্বর কৃষ্ণচন্দ্রের সভাপণ্ডিত হইয়াছিলেন। এই সভায় ১৮ জন পণ্ডিত ছিলেন। রতিকান্ত তন্মধ্যে বয়কনিষ্ট বলিয়া মহারাজ অত্যন্ত স্নেহ করিতেন। মহারাজ একবার তীর্থযাত্রা করিয়াছিলেন, তখন বালক হইলেও, স্নেহপ্রযুক্ত ইহাকে সঙ্গে লইয়াছিলেন। কৃষ্ণচন্দ্র যখন কাশীধামে উপস্থিত হন, তখন পশ্চিম দেশীয় অপর এক নৃপতি সভাসদ ও পারিষদ্বর্গাদিসহ বিশেষ আড়ম্বরে কাশী বাস করিতে ছিলেন। তিনি পূৰ্ব্বাঞ্চলীয় হেড়ম্ব দেশাধিপতির আগমন শ্রবণে স্বগীয় বিশ্বেশ্বরের মন্দিরে তৎসহ সাক্ষাতের অভিপ্রায় করিয়া, সাড়ম্বরে তথায় গমন করেন । সেই নৃপতির রাজ্যৈশ্বৰ্য্যের তুলনায় কৃষ্ণচন্দ্রের কিছুমাত্র জাকজমক ছিল না বলিলেই হয়। তিনি তৎসহ সাক্ষাৎ না করিয়া সঙ্গীয় তরুণ পণ্ডিতকে তৎসন্নিবেশিত প্রেরণ করিলেন। রতিকান্ত সেই নৃপতিকে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া জানাইলেন যে, হেড়ম্বেশ্বর তীর্থ দর্শনে আসিয়াছেন, কুষ্ঠিত,—দীনবেশে সাক্ষাতেও গৌরব জানিয়া সম্ভাবনা, তাই তিনি সাক্ষাৎ করিতে অসমর্থ। পণ্ডিত মুখে কাছাড়পতির পরিচায়ক এই সদুত্তর শ্রবণে সেই নৃপতি লজ্জিত হইয়া পণ্ডিতকেই তদীয় আবাসে যাইতে নিমন্ত্রণ করিলেন। নিমন্ত্রণ রক্ষার্থ রতিকান্ত পরদিন গমন করিলে, তৎসহ সভাস্থ পণ্ডিতদের শাস্ত্রালাপ আরম্ভ হইল। পণ্ডিতগণ বেদের একটি কঠিন স্থলের প্রসঙ্গ উত্থাপন করিলেন। সৌভাগ্যবশতঃ রতিকান্ত মঙ্গলবাবার নিকট ঐ কঠিন স্থলের প্রসঙ্গ মীমাংসা শিক্ষা করিয়া ছিলেন, সুতরাং অনায়াসে সদুত্তর দিয়া হেড়ম্বেশ্বরের মান ও নাম রক্ষা করিয়া আসিলেন। কৃষ্ণচন্দ্র এতদ্বিববণ অবগত হইয়া অত্যন্ত আনন্দিত হইলেন এবং তাঁহাকে এক হাতী দান করিলেন। দেশে আসিলে রাজদত্ত ঐ হাতী যখন ঢাকাদক্ষিণে প্রেরিত হইল, তিনি নশ্বর জ্ঞানে উহা বিক্রয় করিয়া তল্লব্ধ অর্থে স্বগীয় বিশ্বেশ্বরের নামে এক শিব মন্দির নিন্মাণ কবিলেন, উক্ত মন্দির অদ্যাপি আছে। মহারাজ দত্ত কয়েকটি ধাতব উপহার তদগৃহে বৰ্ত্তমান আছে। তদ্ব্যতীত তিনি ইটার জমিদার হরগোবিন্দ প্রদত্ত একটি সমস্যা পূরণ পূৰ্ব্বক উক্ত পরগনাস্থ ফরিদপুরান্তর্গত কিং চামারিয়া হইতে কতক ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। বিদ্যালঙ্কার ও বিদ্যারত্ব বামগতি বিদ্যালঙ্কার ও কৃষ্ণগোবিন্দ বিদ্যারত্ব জ্ঞাতি সম্পর্কে পরস্পর ভ্রাতা ছিলেন। কৃষ্ণগোবিন্দ শ্ৰীমদ্ভাগবতের পণ্ডি৩ছিলেন,শ্ৰীমহাপ্রভুর বাড়ীতে তিনি সৰ্ব্বদা শ্ৰীমদ্ভাগবত পাঠ করিতেন ও তদুপলক্ষে শ্রোতৃবর্গকে বৈষ্ণব ধর্মের উপদেশ দিতেন। ইনি এক টোল স্থাপন করিয়াছিলেন, তাহাতে শতাধিক ছাত্র ছিল। এই বংশে তৎপূৰ্ব্বে কেহ চাকুরী করেন নাই। ইনি জ্ঞাতিবর্গের অমতে নবপ্রতিষ্ঠিত শিলচর গবর্ণমেণ্ট হাইস্কুলের প্রধান পণ্ডিতের পদ গ্রহণ করেন ও পরে শ্রীহট্ট গবর্ণমেণ্ট স্কুলে পরিবৰ্ত্তিত হইয়া যোগ্যতার সহিত কাজ করেন। মৈনা নিবাসী মহাফেজ প্রখ্যাতনামা কৃষ্ণপ্রসাদ চৌধুরী ও ঢাকাদক্ষিণের বিজ্ঞবর উকিল কৃষ্ণগোবিন্দ দেব সহ সৰ্ব্বদা তাহার আলাপ প্রসঙ্গ চলিত।” এই দুই মহাত্মার স্মরণীয় গুণ গ্রামে তৎকালে শহরের সকলই মোহিত ছিল। ৩৪ ইতিপূৰ্ব্বে উল্লেখিত হইযাছে যে “দাক্ষিণাতা" পাঠ যুক্ত একখানা শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী গ্রন্থ আমবা প্রাপ্ত হইয়া বিশ্বকোষ আফিসে পাঠাইযা দিয়াছিলাম এবং বঙ্গেব জ্ঞাত ইতিহাসে ইহা হইতে তর্কিত পাঠ উদ্ভূত হইযাছে।