পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত ৫৮ গৌতম গোত্ৰীয়ের কথা বেগমপুরে ঘৃতকৌশিক গোত্রীয় চৌধুরী বংশীয়গণ ব্যতীত গৌতম গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণ প্রায় ৯/১০ পুরুষ যাবৎ বাস করিতেছেন। এই বংশে উমাপতি বিদ্যানিবাস এবং বিনোদপণ্ডিত বিশেষ খ্যাতিমান পুরুষ ছিলেন। এই বংশীয় জয়গোপাল যোগানুষ্ঠান করিতেন, তাহার যোগশক্তির বিবিধ জনশ্রুতি এখনও শুনা গিয়া থাকে। ইহার নামেও তদ্বংশীয়গণ অমাবস্যায় চন্দ্রোদয়ের গল্প করিয়া থাকেন। এতদ্ব্যতীত পরাশর, রথীতর ও শাণ্ডিল্য প্রভৃতি আরও কতিপয় গোত্রীয় ব্রাহ্মণ তথায় আছেন। ব্রজসুন্দর ভট্টাচাৰ্য্য—বুরুঙ্গাবাসী ব্রজসুন্দর ভট্টাচাৰ্য্য কাশীধামে চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষিত হন ও জনৈক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ সম্মিলিত হইয়া আগরা শহরে এক ঔষধালয় স্থাপন করেন; পরে তিনি সম্পূর্ণরূপে উহার স্বত্বাধিকারী হইলেও ব্যানাজ্জি নামে স্বয়ং তিনি ও র্তাহার ঔষধালয়ের খ্যাতি হয়। ধৰ্ম্মে বিশ্বাস ও চরিত্রের নিৰ্ম্মলতা হেতু তিনি আগরাবাসীদের ভক্তিপাত্র হইয়া প্রভূত বিত্ত ও যশ উপাৰ্জ্জন করিয়া অকালে মৃত্যুমুখে পতিত হন; ইহার পুত্ৰগণ এখনও ঔষধালয়টি কথমপি রক্ষা করিতেছেন। “আশারাশি”—বেগমপুরকে কেহ কেহ “আশাবাশি” নামে অভিহিত করিতে শুনা গিয়া থাকে, ইহা নিত্যন্ত ভ্রান্ত কথা; বেগমপুর আশারাশি নহে। মোহাম্মদ ফরিদ নামে জনৈক ফকির বেগমপুরের এক প্রান্তে থাকিতেন; তাহাব একটা মুরগী একদা এক ব্রাহ্মণের বাড়ীতে প্রবেশ করিয়াছিল, তৎশ্রবণে ফকির অনুতপ্ত হইয়া, সে গ্রাম ত্যাগ করেন ও প্রায় অদ্ধ মাইল দূরে নদীর ধাবে বাড়ী করেন। সে এক রম্যস্থান; কথিত আছে যে, হজরত শাহজলাল শ্রীহট্টে যাইবার পথে এস্থানে একরাত্রি অবস্থান করেন। ফকির এই স্থানের কাছে বাড়ী প্রস্তুত করিলে, তাহা ফকিবপাড়া নামে খ্যাত হয়। এই ফকিরপাড়ার দক্ষিণে একখানা ক্ষুদ্র বাড়ী ও ত্রিহল পরিমিত জমি লইয়াই আশারাশি। এই জমি “আওয়াইর বন্ধ" নামে খ্যাত, আওরাই-ই-আশারাশি এই নামে কথিত হইয়া, কখন কখন পরিসর বৃদ্ধি কবিয়া থাকে। রেঙ্গার বিশারদ বংশ বুরুঙ্গার প্রসিদ্ধ পণ্ডিত রাঘব বিদ্যানিধির জ্যেষ্ঠপুত্র দুর্গাদাসের কথা ২য় অধ্যায়ে কথিত হইয়াছে, ইহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা মহেশ্বর বিশারদ বুরুঙ্গা পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক স্ত্রী পুত্রাদি সহ রেঙ্গা পরগণার কান্দিযারচর গ্রামে গমন করেন। তিনি তথায় সম্মান ও সম্মতি অৰ্জ্জন করিয়া সুখে অবস্থিতি করেন, ৫. উপাধি দানেব ক্ষমতা এই চৌধুরী বংশের বিবরণ উপলক্ষে এস্থলে একটা কথা আলোচ্য হইতেছে—চৌধুরী খেতাব নবাব সবকার হইতে প্রদত্ত হইত। চান্দ খাঁ কি প্রকৃতই নবাব ছিলেন ? চান্দ খা যে শ্রীহট্টের শাসনকৰ্ত্তক পদাভিষিক্ত ছিলেন না, তাহা তাহার বিববণ হইতেই জানা যায, তবে সাধারণতঃ তিনি নবাব বলিযা পবিকথিত হইতেন। নিকটবৰ্ত্তী মোক্তারপুর পরগণায় যে মোসলমান জমিদাব বংশীযগণ আছেন, চান্দ খাঁ তাহদেব পূৰ্ব্বপুরুষ হইলেও হইতে পারেন। চান্দ খাঁর একজন প্রতাপশালী ভূম্যধিকারী ছিলেন, উপাধিদান ক্ষমতা তাহার পরিচায়ক। রাজার নবা কল্প ভূম্যধিকবিগণও কখন কখন এ উপাধি দান কবিতেন ও পরে তাহ স্থানীয শাসনকৰ্ত্তার যোগে বা অনুমোদনে বহাল করাইযা দিতেন। এস্থলে বেঙ্গর মোসলমান জমিদাব কত্ত্বক ভরদ্বাজগোত্রীয় রামকৃষ্ণকে “রাজপণ্ডিতি’ বিষয় দানের কথা উল্লেখ করা যাইতে পারে। অতঃপর তাহা উল্লেখিত হইতেছে রাজদণ্ড চৌধুরী প্রভৃতি উপাধিব অর্থাদি বিচার পূৰ্ব্বাংশে “নবাবি আমলে দেশের অবস্থা” প্রকরণে বর্ণিত হইয়াছে। ব্রাহ্মণের জাতীয় উপাধির প্রসঙ্গ এ অংশের উপক্রমণিকায় কথিত হইয়াছে, তাহা দ্রষ্টব্য।