পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শকুন্তলা
১০৯

মধ্যে একটি গম্ভীর পরিণতির ভাব আছে; সে পরিণতি, ফুল হইতে ফলে পরিণতি, মর্ত্য হইতে স্বর্গে পরিণতি, স্বভাব হইতে ধর্মে পরিণতি। মেঘদূতে যেমন পূর্বমেঘ ও উত্তরমেঘ আছে— পূর্বমেঘে পৃথিবীর বিচিত্র সৌন্দর্যে পর্যটন করিয়া উত্তরমেঘে অলকাপুরীর নিত্য সৌন্দর্যে উত্তীর্ণ হইতে হয়, তেমনি শকুন্তলায় একটি পূর্বমিলন ও একটি উত্তরমিলন আছে। প্রথম-অঙ্কবর্তী সেই মর্ত্যের চঞ্চল-সৌন্দর্যময় বিচিত্র পূর্বমিলন হইতে স্বর্গতপোবনে শাশ্বত-আনন্দময় উত্তর মিলনে যাত্রাই অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটক।

 স্বর্গ ও মর্ত্যের এই যে মিলন, কালিদাস ইহা অত্যন্ত সহজেই করিয়াছেন। ফুলকে তিনি এমনি স্বভাবত ফলে ফলাইয়াছেন, মর্ত্যের সীমাকে তিনি এমন করিয়া স্বর্গের সহিত মিশাইয়া দিয়াছেন যে, মাঝে কোনো ব্যবধান কাহারও চোখে পড়ে না। প্রথম অঙ্কে শকুন্তলার পতনের মধ্যে কবি মর্ত্যের মাটি কিছুই গোপন রাখেন নাই; তাহার মধ্যে বাসনার প্রভাব যে কতদূর বিদ্যমান, তাহা দুষ্যন্ত শকুন্তলা উভয়ের ব্যবহারেই কবি সুস্পষ্ট দেখাইয়াছেন। যৌবনমত্ততার হাবভাবলীলাচাঞ্চল্য, পরম লজ্জার সহিত প্রবল আত্মপ্রকাশের সংগ্রাম, সমস্তই কবি ব্যক্ত করিয়াছেন। ইহা শকুন্তলার সরলতার নিদর্শন। অনুকূল অবসরে এই ভাবাবেশের আকস্মিক আবির্ভাবের জন্য সে পূর্ব হইতে প্রস্তুত ছিল না। সে আপনাকে দমন করিবার, গোপন করিবার উপায় করিয়া রাখে নই। যে-হরিণী ব্যাধকে চেনে না, তাহার কি বিদ্ধ হইতে বিলম্ব লাগে। শকুন্তলা পঞ্চশরকে ঠিকমতো চিনিত না, এইজন্যই তাহার মর্মস্থান অরক্ষিত ছিল। সে না কন্দর্পকে, না দুষ্যন্তকে, কাহাকেও অবিশ্বাস করে নাই।

 শকুন্তলার পরাভব যেমন অতি সহজে চিত্রিত হইয়াছে, তেমনি সেই পরাভবসত্ত্বেও তাহার চরিত্রের গভীরতর পবিত্রতা, তাহার