পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
সংকলন

এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা মধ্যিখানে চর।
তারি মধ্যে বসে আছে শিব সদাগর।
শিব গেল শ্বশুরবাড়ি বসতে দিল পিঁড়ে।
জলপান করিতে দিল শালিধানের চিঁড়ে।
শালিধানের চিঁড়ে নয় রে, বিন্নিধানের খই।
মোটা মোটা সবরি কলা, কাগমারে দই।

 ভাবে-গতিকে আমার সন্দেহ হইতেছে শিবুঠাকুর এবং শিবু সদাগর লোকটি একই হইবেন। দাম্পত্যসম্বন্ধে উভয়েরই একটু বিশেষ শখ আছে এবং বোধ করি আহারসম্বন্ধেও অবহেলা নাই। উপরন্তু গঙ্গার মাঝখানটিতে যে-স্থানটুকু নির্বাচন করিয়া লওয়া হইয়াছে, তাহাও নবপরিণীতের প্রথমপ্রণয়যাপনের পক্ষে অতি উপযুক্ত স্থান।

 এইস্থলে পাঠকগণ লক্ষ্য করিয়া দেখিবেন, প্রথমে অনবধানতাক্রমে শিবু সদাগরের জলপানের স্থলে শালিধানের চিঁড়ার উল্লেখ করা হইয়া ছিল, কিন্তু পরক্ষণেই সংশোধন করিয়া বলা হইয়াছে, ‘শালিধানের চিঁড়ে নয় রে, বিন্নিধানের খই’। যেন ঘটনার সত্যসম্বন্ধে তিলমাত্র স্খলন হইবার জো নাই। অথচ এই সংশোধনের দ্বারা বর্ণিত ফলাহারের খুব যে একটা ইতরবিশেষ হইয়াছে, জামাই-আদর সম্বন্ধে শ্বশুরবাড়ির গৌরব খুব উজ্জ্বলতররূপে পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে, তাহাও বলিতে পারি না। কিন্তু এক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ির মর্যাদা অপেক্ষা সত্যের মর্যাদা রক্ষার প্রতি কবির যে অধিক লক্ষ্য দেখা যাইতেছে, তাও ঠিক বলিতে পারি না। বোধ করি ইহাও স্বপ্নের মতো। বোধ করি শালিধানের চিঁড়া দেখিতে দেখিতে পরমুহূর্তে বিন্নিধানের খই হইয়া উঠিয়াছে। বোধ করি শিবুঠাকুরও কখন এমনি করিয়া শিবু সদাগরে পরিণত হইয়াছে, কেহ বলিতে পারে না।

 শুনা যায় মঙ্গল ও বৃহস্পতির কক্ষ মধ্যে কতকগুলি টুকরা গ্রহ আছে। কেহ কেহ বলেন একখানা আস্ত গ্রহ ভাঙিয়া খণ্ড খণ্ড হইয়া