পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
সংকলন

টিয়ের মার বিয়ে।
নাল গামছা দিয়ে।
অশথের পাতা ধনে।
গৌরী বেটি ক’নে।
নকা বেটা বর।
ঢ্যাম কুড়্‌কুড়্ বাদ্দি বাজে চড়কডাঙার ঘর।

 এই সকল ছড়ার মধ্যে হইতে সত্য অন্বেষণ করিতে গেলে বিষম বিভ্রাটে পড়িতে হইবে। প্রথম ছড়ায় দেখিয়াছি আলোচাল খাইয়া সীতারামনামক নৃত্যপ্রিয় লুব্ধ বালকটিকে ত্রিপূর্ণির ঘাটে জল খাইতে যাইতে হইয়াছিল; দ্বিতীয় ছড়ায় দেখিতে পাই সীতানাথ চালকলাই খাইয়া জলের অন্বেষণে চিৎপুরের মাঠে গিয়া উপস্থিত হইয়াছিল; কিন্তু তৃতীয় ছড়ায় দেখা যাইতেছে— সীতারামও নহে সীতানাথও নহে, পরন্তু কোনো এক হতভাগিনী ভ্রাতৃজায়ার বিদ্বেষপরায়ণা ননদিনী জন্তিফল ভক্ষণের পর তৃষাতুর হইয়া হরগৌরীর মাঠে পান খাইতে গিয়াছিল এবং পরে অসাবধানা ভ্রাতৃবধূর তুচ্ছ অপরাধটুকু দাদাকে বলিয়া দিবার জন্য পাড়া তোলপাড় করিয়া তুলিয়াছিল।

 এই তো তিন ছড়ার মধ্যে অসংগতি। তার পর প্রত্যেক ছড়ার নিজের মধ্যেও ঘটনার ধারাবাহিকতা দেখা যায় না। বেশ বুঝা যায় অধিকাংশ কথাই বানানো। কিন্তু ইহাও দেখিতে পাই, কথা বানাইতে গেলে লোকে প্রমাণের প্রাচুর্য দ্বারা সেটাকে সত্যের অপেক্ষা অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য করিয়া তোলে; অথচ এক্ষেত্রে সে-পক্ষে খেয়ালমাত্র নাই। ইহাদের কথা সত্যও নহে মিথ্যাও নহে; দুইয়ের বা’র। ঐ যে ছড়ার এক জায়গায় সুবলের বিবাহের উল্লেখ আছে, সেটা কিছু অসম্ভব ঘটনা নহে। কিন্তু সত্য বলিয়াও বোধ হয় না। ‘দাদা দাদা ডাক ছাড়ি দাদা নাইকো বাড়ি; সুবল সুবল ডাক ছাড়ি সুবল আছে বাড়ি।’