দাদার বেতন অধিক নহে, কিন্তু বোনটির মতে তাহাই প্রচুর। এই তিন টাকা বেতনের স্বচ্ছলতার উদাহরণ দিয়াই ভগ্নাটি অনুনয় করিতেছেন—
হেই দাদা তোমার পায়ে পড়ি।
বউ এনে দাও খেলা করি।
চতুরা বালিকা নিজের এই স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দাদাকেও প্রলোভনের ছলে আভাস দিতে ছাড়ে নাই যে, ‘বউ বরনে চন্দ্রকলা’। যদিও ভগ্নীর খেলনাটি তিন টাকা বেতনের পক্ষে অনেক মহার্ঘ্য, তথাপি নিশ্চয় বলিতে পারি, তাহার কাতর অনুরোধ রক্ষা করিতে বিলম্ব হয় নাই, এবং সেটা কেবলমাত্র সৌভ্রাত্রবশত নহে।
উলু উলু মাদারের ফুল।
বর আসছে কত দূর।
বর আসছে বাগ্নাপাড়া।
বড়ো বউ গো রান্না চড়া।
ছোটো বউ লো জল্কে যা।
জলের মধ্যে ন্যাকাজোকা।
ফুল ফুটেছে চাকা চাকা।
ফুলের বরন কড়ি।
ন’টে শাকের বড়ি।
জামাতৃসমাগম-প্রত্যাশিনী পল্লীরমণীগণের ঔৎসুক্য এবং আনন্দউৎসবের ছবি আপনি ফুটিয়া উঠিয়াছে। এবং সেই উপলক্ষ্যে শেওড়াগাছের বেড়াদেওয়া পাড়াগাঁয়ের পথ ঘাট বন পুষ্করিণী ঘটকক্ষ বধূ এবং শিথিলগুণ্ঠন ব্যস্তসমস্ত গৃহিণীগণ ইন্দ্রজালের মতো জাগিয়া উঠিয়াছে।
এমন প্রায় প্রত্যেক ছড়ার প্রত্যেক তুচ্ছ কথায় বাংলা দেশের একটি মূর্তি, গ্রামের একটি সংগীত, গৃহের একটি আস্বাদ পাওয়া যায়।