পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৮
সংকলন

অনেক জিনিস আছে, আরও অনেক জিনিস থাকাও তাহার পক্ষে কিছুই অসম্ভব নহে; এইজন্য ছড়ার দেশে সম্ভব-অসম্ভবের মধ্যে সীমানাঘটিত কোনো বিবাদ নাই।

আয় রে আয় টিয়ে।
নায়ে ভরা দিয়ে।
না’ নিয়ে গেল বোয়াল মাছে।
তা দেখে দেখে ভোঁদড় নাচে।
ওরে ভোঁদড় ফিরে চা।
খোকার নাচন দেখে যা।

 প্রথমত, টিয়ে পাখি নৌকা চড়িয়া আসিতেছে, এমন দৃশ্য কোনো বালক তাহার পিতার বয়সেও দেখে নাই; বালকের পিতার সম্বন্ধেও সে-কথা খাটে। কিন্তু সেই অপূর্বতাই তাহার প্রধান কৌতুক। বিশেষত, হঠাৎ যখন অগাধ জলেব মধ্য হইতে একটা স্ফীতকায় বোয়াল মাছ উঠিয়া, বলা নাই কহা নাই, খামকা তাহার নৌকাখানা লইয়া চলিল, এবং ক্রুদ্ধ ও ব্যতিব্যস্ত টিয়া মাথার রোঁয়া ফুলাইয়া পাখা ঝাপটাইয়া অত্যুচ্চ চীৎকারে আপত্তি প্রকাশ করিতে থাকিল, তখন কৌতুক আরও বাড়িয়া উঠে। টিয়ে বেচারার দুর্গতি এবং জলচর প্রাণীটার নিতান্ত অভদ্র ব্যবহার দেখিয়া অকস্মাৎ ভোঁদড়ের দুর্নিবার নৃত্যস্পৃহাও বড়ো চমৎকার। এবং সেই আনন্দনর্তনপর নিষ্ঠুর ভোঁদডটিকে নিজের নৃত্যবেগ সংবরণপূর্বক খোকার নৃত্য দেখিবার জন্য ফিরিয়া চাহিতে অনুরোধ করার মধ্যেও বিস্তর রস আছে। যেমন মিষ্ট ছন্দ শুনিলেই তাহাকে গান বাঁধিয়া গাহিতে ইচ্ছা করে, তেমনি এই সকল ভাষার চিত্র দেখিলেই ইহাদিগকে রেখার চিত্রে অনুবাদ করিয়া আঁকিয়া ফেলিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু হায়, এ-সকল চিত্রের রস নষ্ট না করিয়া— ইহাদের বাল্য সরলতা, উজ্জ্বল নবীনতা, অসংশয়তা, অসম্ভবের