পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
সংকলন

বিলীন হইয়াছে। এটা কেমন করিয়া দৈবক্রমে শ্লোকের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া গিয়াছে।

ওপারেতে কালো রঙ; বৃষ্টি পড়ে ঝমঝম।

 এমন দিনে এমন অবস্থায় মন-কেমন না করিয়া থাকিতে পারে না। চিরকালই এমনই হইয়া আসিতেছে। বহুপূর্বে উজ্জয়িণী-রাজসভার মহাকবিও বলিয়া গিয়াছেন,

মেঘালোকে ভবতি সুখিনোঽপান্যথাবৃত্তিচেতঃ
... ... ... কিং পুনর্দূরসংস্থে।

 কালিদাস যে-কথাটি ঈষৎ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিযা উল্লেখ করিয়াছেন মাত্র, এই ছডায় সেই কথাটা বুক ফাটিয়া কাঁদিয়া উঠিয়াছে,

“গুণবতী ভাই আমার মন কেমন করে।”
“হাড় হোলো ভাজা ভাজা, মাস হোলো দড়ি।
আয় রে আয় নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি।”—

 ইহার ভিতরকার সমস্ত মর্মান্তিক কাহিনী, সমস্ত দুর্বিষহ বেদনাপরম্পরা কে বলিয়া দিবে। দিনে-দিনে রাত্রে-রাত্রে মুহূর্তে-মুহূর্তে কত সহ্য করিতে হইয়াছিল— এমন সময়, সেই স্নেহস্মৃতিহীন সুখহীন পরের ঘরে হঠাৎ একদিন তাহার পিতৃগৃহের চিপরিচিত ব্যথার ব্যথী ভাই আপন ভগিনীটির তত্ত্ব লইতে আসিয়াছে,—হৃদয়ের স্তরে-স্তরে-সঞ্চিত নিগূঢ় অশ্রুরাশি সেদিন আর কি বাধা মানিতে পাবে। সেই ঘর, সেই খেলা, সেই বাপ-মা, সেই সুখশৈশব, সমস্ত মনে পড়িয়া আব কি একদণ্ড দুরন্ত উতলা হৃদয়কে বাঁধিয়া রাখা যায়। সেদিন কিছুতে আর একটি মাসের প্রতীক্ষাও প্রাণে সহিতেছিল না— বিশেষত, সেদিন নদীর ওপার নিবিড় মেঘে কালো হইয়া আসিয়াছিল, বৃষ্টি ঝমঝম কবিয়া পড়িতেছিল, ইচ্ছা হইতেছিল বর্ষার বৃষ্টিধারামুখরিত মেঘচ্ছায়াশ্যামল